কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ::
কালের বিবর্তনে প্রাচীন নগরীর স্নৃতিচিহৃ মুছে গেলেও বুরুজ পাহাড়ের সামান্য অংশ এবং দুটি পুকুর কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদর হতে মাত্র ২ কিলোমিটার পৃর্ব দক্ষিণে চন্দ্রখানা গ্রামে প্রাচীন বুরুজ নগরীর ধ্বংসাবশেষ এর স্নৃতিচিহৃের কিছু অস্থিত্ব এখনো দৃশ্যমান।
প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা এখানে আসেন মুছে যাওয়া বুরুজ পাহাড় আর পুকুরের স্নৃতিচিহৃ দেখেন। দীর্ঘকাল অরক্ষিত থাকায় পুকুর খনন, রাস্তা নির্মাণ, বসতবাড়ি তৈরি কিংবা চাষাবাদের সময় মাটি খননের ফলে প্রাচীন যে সব ইট পাথর, গৃহকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন হাতিয়ার পুরাকীর্তি পাওয়া গেছে সে সব থেকে এ অঞ্চলের ইতিহাস সর্ম্পকে কিছুটা ধারনা পাওয়া যায়।
গুজব রয়েছে, যে এখানে বিভিন্ন সময় মূল্যবান গুপ্তধন ও পাথরের মূর্তি পেয়ে অনেকে গোপনে বিত্রুি করে দিয়েছেন। এ নিয়ে এক সময় থানা-পুলিশ পর্যন্ত হয়েছে তবে গুপ্তধনের হদিছ মেলেনি। ফলে এখানকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝার মত প্রমানিক কোন কিছুরই স্নৃতিচিহৃ আজ নেই। তবে জনশ্রুতি অনুযায়ী প্রাচীনকালে এখানে একটি নগর গড়ে ওঠেছিল।
নগরীর পানির কষ্ট দুর করার জন্য প্রজাগন রাজার কাছে আবেদন করেন। রাজা ধর্মপ্রাণ ও প্রজাবৎসল ছিলেন। তিনি পানির কষ্ট দুর করার জন্য বিশ্বকর্মার কাছে প্রার্থনা করেন।
তার প্রার্থনায় তুষ্ট হয়ে বিশ্বকর্মা এক রাতেই নগরীর বিভিন্ন স্হানে ৭টি পুকুর খনন করেন।
ঘুম থেকে উঠে প্রজাগন দেখেন নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ৭টি পুকুর খনন করে তার মাটি এক জায়গায় জড়ো করে বিশাল পাহাড় সৃষ্টি করা হয়েছে। কালত্রুমে তা বুরুজ নগর(পর্বত) বা বর্তমানে বুরুজের পাড় নামে পরিচিত। এর
পর র্দীঘ সময় অতিবাহিত হয়। রাজা, রাজ্য প্রজাসাধারণ সকলেই কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। কোলাহল পূর্ণ নগরী সব হারিয়ে জঙ্গলে ঢেকে যায়। নির্জন পাহারটিতে বাঘ, সাপ, জীন- পরি- ভুত -পেতে ভরে ওঠে। কয়েকশত বৎসর এভাবেই পড়ে থাকে।
৭০-৮০ বৎসর আগেও পাহাড়ে একা উঠতে কেউ সাহস পেত না। ৮-১০ জন লোক দল বেধে পাহাড়ে উঠতে হত। পাহাড় চুড়ায় উঠে রংপুর, লালমনিরহাট শহরও দেখা যেত। দল বেধে পাহাড়ে উঠে বিভিন্ন প্রকারের ফল ও শাকসবজি নিয়ে নিচে নামতেন। লোক সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে পাহাড়ের জঙ্গল ও মাটি উজার হয়ে ছোট হতে থাকে। ২০০৪ সালে জৈনিক আলতাফ পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করা শুরু করেন। এর দেখাদেখি অনেকে মাটি কেটে বিক্রি করেন।
ফলে বিশাল পাহাড়ের অস্তিত্ব দিনে দিনে বিলিন হয়ে যায়। অনেকে বলেন আলতাপ পিতলের বড় দুটি কলসি ভর্তি গুপ্তধন পেয়ে ঢাকায় গার্মেন্ট ব্যবসা দিয়েছেন। কেউ বলে আলতাপ পাহাড় কাটার অভিশাপে ভিটে মাটি সব হারিয়ে ঢাকায় গার্মেন্টে চাকুরী করে অতি কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন।
বর্তমানে পাহাড়ের অতি সামান্য অংশই স্নৃতি হয়ে আছে। ৭টি পুকুরের মধ্যে ৫টি বিলিন হয়ে হারিয়ে গেছে। ২টি পুকুর (শুকান দিঘী ও চৈধুরীটারি দিঘী) দুইটির অস্তিত্ব হজামজা হয়ে এখনো টিকে আছে। টিকে থাকা পুকুর দুইটির আকার, আকৃতি একই রকম। অনেকে অনুমান করেন পাল যুগে বা তারও আগে এখানে সভ্যতা গড়ে উঠে ছিল।
অন্য সূত্রমতে, উক্ত টিলাটি একই রাত্রিতে সম্রাট শেরশাহের আমলে জমি জরিপের জন্য তৈরি করা হয়। টিলার কাছাকাছি একটি অতি প্রাচীন মসজিদ আছে। অনেকে বলে থাকেন, সম্রাট শেরশাহের ভূমি সংস্কারের নিদর্শন বহন করে বুরুজটি।
বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করলে প্রাচীন এই নগরীর অনেক কিছুই উদ্ধার করা যেত। প্রত্নতত্ব বিভাগও এলাকাটি পরিদর্শন করতে পারেন।
বর্তমানে ইতিহাস ঐতিহ্যের তথ্য অনুসন্ধানে গবেষকদের জন্য এলাকাটি উপাদান হতে পারে। ইহা ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করেছে বলে ধারনা করেন স্থানীয় অধিবাসীরা। তবে নগরীর বিলুপ্তি প্রায় দুটি পুকুর ও পাহাড় এর শেষ স্নৃতিটুকু রক্ষার দাবি এলাকাবাসীর।
ফুলবাড়ী সদরের বাসিন্দা সেকেন্দার আলী বলেন,পাহাড়ের মাটি কেটে অনেক প্রাচীন মাটির তৈরি নিদর্শনের ভাঙ্গা অংশ পাওয়া গেছে।
এই বুরুজ পাহাড়টি ফুলবাড়ী উপজেলার প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে আসছে এবং তিনি বুরুজের শেষ স্মৃতিটুকু রক্ষার দাবি জানান ।
এ ব্যাপারে ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, বুরুজ পাহাড়টি অতিপ্রাচীন কালের স্নৃতি বহন করে । বর্তমানে বুরুজ পাহাড়ের সব অংশ ব্যক্তি মালিকানায় চলে গেছে।#
Leave a Reply