সরকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মামলার আসামী ৮টি গ্রামের অর্ধশত উপকারভোগী
সাই্দুল হাসান সিপন ::
মৌলভীবাজার কুলাউড়ায় বন বিভাগের উদ্যোগে সরকারের সামাজিক বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে উল্টো হামলা মামলার শিকার হতে হয় উপকারভোগী (বনভিলেজারদের)। বনায়ন রক্ষায় উপকারভোগী ও বনবিভাগ সর্বশক্তি নিয়োগ করলেও খাসিয়াদের একের পর এক হামলা মামলার ঘটনায় মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে দু’পক্ষ। বর্তমানে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কুলাউড়া ইউএনও ও থানা পুলিশ ২৮ আগস্ট শনিবার দুপুরে সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন।
এদিকে ২৮ আগস্ট শনিবার সকালে খাসিয়া কর্তৃক সামাজিক বনায়ন ধ্বংস, সামাজিক বনায়নে বাঁধা ও উপকারভোগীদের উপর একের পর এক হামলা মামলার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ ও ক্ষতিগ্রস্থ উপকারভোগীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীর সভাপতি হারিছ আলী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এসময় ইছরাইল আলী, হারুনুর রশীদ ও হাজী মাকসুদ আলীসহ উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপকারভোগীরা জানান, কুলাউড়া উপজেলার সাড়ে ৮ হাজার একর পাহাড় জবরদখল করে নিয়েছে পাহাড়ে বসবাসরত খাসিয়াসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠি। ৫টি বাঁশমহাল ও ৫টি সেগুন কূপ নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে। খাসিয়ারা এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, বনবিভাগ ও উপকারভোগীদের লোকজনকে এখন পাহাড়ে যেতে দিচ্ছে না। ফলে পাহাড়ে বনবিভাগের আর কোন অধিকারই থাকছে না। উপকারভোগীরা যাতে বনবিভাগের সাথে পাহাড়ে না যায়, সেজন্য খাসিয়ারা নিজেদের পান গাছ কেটে মামলা দেয় উপকারভোগীদের উপর। ফলে উপকারভোগীরা পাহাড়ে যেতে পারে না তাদের সৃজিত সামাজিক বনায়ন রক্ষণাবেক্ষণে। ৮টি গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষ বাড়িতে থাকতে পারে না গ্রেফতার আতঙ্কে।
সর্বশেষ ২৭ আগস্ট শুক্রবার বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে ছোট কালাইগিরি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সৃজিত সামাজিক বনায়নের ২ শতাধিক গাছ কাটে খাসিয়ারা। এসময় আছকির আলী ও ফারুক মিয়া নামক ২ পাহারাদারকে পিটিয়ে বন থেকে বিতাড়িত করেছে। সেখানে সরকারি একটি ক্যাম্প ছিলো, সেটিও ভাঙচুর করেছে। এব্যাপারে বনবিভাগের পক্ষ থেকে কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা জানান, ১০ আগস্ট মঙ্গলবার ভোর আনুমানিক ৬টার দিকে ডলুছড়া পানপুঞ্জির হেডম্যান লবিং সুমেরের নেতৃত্বে প্রায় শ খানেক খাসিয়ার সশস্ত্র অবস্থায় মুরইছড়া বিটের হোসনাবাদ মৌজায় সামাজিক বনায়নে তান্ডবলীলা চালায়। সামাজিক বনায়নের নৈশপ্রহরী এসময় বাঁধা প্রদান উপেক্ষা করে খাসিয়ারা ১০ হেক্টর বনভূমিতে সৃজিত বাগানের ২৫ হাজার চারা উপড়ে ফেলে দেয়। এতে বনায়নের ৭ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়। গাছ উপড়ে ফেলার পর খাসিয়া সামাজিক বনায়নের ভূমিতে তাবু টানিয়ে তাতে তাদের দখল ঘোষণা করে।
তিনি আরও জানান, এর আগে গত ২৩ জুন দুপুরে একই কায়দায় ৩ হেক্টর জায়গার সামাজিক বনায়নের সাত হাজার সৃজিত বাগানের গাছ উপড়ে ফেলে। এতে বনায়নের আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়।
অভিযুক্ত খাসিয়া হেনরি তালাং টু জানান, পুঞ্জি থেকে আমরা পান বিক্রি করতে পারছি না। বস্তির লোকজন আমাদের পুঞ্জি থেকে নামতে পারছি না। অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি।
এ ব্যাপারে বনবিভাগের সহকারি বনসংরক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিকী জানান, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সামাজিক বনায়নের জবরদখলকৃত জমি পুনরুদ্ধারের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী ২৮ আগস্ট শনিবার বেলা ৩টায় জানান, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে পুলিশ প্রশাসনসহ মাঠ পরিদর্শণ রয়েছেন। পরবর্তিতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাবো।#
Leave a Reply