বাবা আমার
তৌহিদুর রহমান
বাবা ছিলেন ভীষণ রাগী,
কিছু হলেই দিতেন জারি;
বলতেন দুনিয়াতে কে এসেছে আগে,
আমি নাকি তুই।
এরপর কি আর কথা থাকে
বিশেষ এক দুই।
আমার যখন জন্ম হলো
সেই মেলা আগে;
বাবা নাকি হলেন খুশি
যেন তিনি শিশু কালে।
ডেকে ডেকে সবাইকে
আমার কথা বলে।
যদিও আমি ছিলাম কালো,
দেখতে নই মোটেও ভালো;
তবুও কি বাবার মন মানে,
তাঁর সবটুকু ভালোবাসা
ছিল আমার পানে।
যখনই কোন অসুখ হতো,
কষ্ট গুলো আমি নই
বাবাই যেন পেতো।
খাল, টিলা আর জঙ্গল পেরিয়ে,
ছুটতেন তিনি ডাক্তারখানায়;
ঔষধ নিয়ে আসতেন যখন,
পা দুখানা থাকতো ভরা কাদায়।
আমার নাকি অসুখ হলে,
থাকতো না তাঁর সেন্স;
তাইতো তাঁর ঘাড়
হয়ে যেত আমার অ্যাম্বুলেন্স।
জিয়া বলে ডাকতেন আমায়,
বড় মধুর সে ডাক;
যদিও আরেকটি নাম আছে আমার,
থাক এখন সে কথা থাক।
আমার ছিল টিভির নেশা,
আমরা ছিলাম গরীব চাষা;
টিভি পাবো কই?
তাইতো অন্যের বাড়ি
টিভি দেখতে বই।
টারজান হতো টিভিতে,
থাকতো রেসলিং;
দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে
যেত কোনদিন।
খুঁজে বাবা বের করে
আনতো বাড়িতে;
উত্তম মধ্যম কম হতো না
রেসলিং এর চেয়ে।
আমাদের অঞ্চল তখন
পাটকলে ভরা;
একটু বড় হলেই
সবার চাকুরী ধরা।
বাবা আমার চাননি তা,
চেয়েছিলেন পড়ালেখায় থাকুক তারা;
যদিও তাঁর খরচ বেশি,
এখানে আমরা আর বাড়িতে দাদারা।
একে একে মেট্রিক, আইএ,
বিএ, এমএ দিলাম পাস;
কি খুশি তাঁর,
গর্বে ফুলে উঠলো বুকের পাশ।
গ্ৰামে হলো তিন এমএ,
তাতে আছে ছেলের নাম;
সাইন্স থেকে সে’ই একা,
বলে চলে অবিরাম।
লেখাপড়া শেষ করে
চাকুরী একটা যোগালাম;
কাছে নয় সে বহু দূরে,
শ্রীমঙ্গল তারই নাম।
কিন্তু বাবা বলে উঠলেন
এতো দূরে না গেলাম;
বহু কষ্টে রাজি করে
ঘরের বাইরে পা দিলাম।
(অসমাপ্ত)
Leave a Reply