ঢালাইর নিম্নমানের সিমেন্ট আটকালেন ইউএনও
বড়লেখা প্রতিনিধি ::
বড়লেখায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাইট ইঞ্জিনিয়ার আফজল হোসেনের তদারকি অবহেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিপূর্বে ইউএনও মুদাচ্ছির বিন আলী প্রায় ২০ কোটি টাকার ১০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ পরিদর্শণ করে কয়েকটির নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার দেখতে পেয়ে গুণগত মান যাচাইয়ে প্লাস্টার ও পাথরের নমুনা সিলগালা করে পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছেন। এছাড়া তিনি গত ২ জানুয়ারী দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের চতুর্থ তলার ছাদ ঢালাইয়ে নিম্নমানের সিমেন্ট ব্যবহার বন্ধ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বড়লেখায় দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি দায়িত্বে চরম অবহেলা করেন। ভবনের বেইজ ঢালাই, ভিম ঢালাই, ছাদ ঢালাইসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজের সময় সার্বক্ষণিক তদরাকির নিয়ম থাকলেও তিনি সাইটে থাকেনই না। এতে ঠিকাদাররা নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ পায়। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভবনের ভিমে ফাটল, ছাদ চুঁয়ে পানি পড়া, ফিটিংন সঠিক না হওয়া, পলেস্তরা উঠে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যার অভিযোগ পেয়ে ইউএনও সরেজমিনে পরিদর্শণ করে অনিয়ম দেখতে পেয়ে ঠিকাদারকে চিঠি দিয়ে তা মেরামত করান।
গত ২ জানুয়ারী উপজেলার দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮১ লাখ টাকার প্রকল্পের স্কুল ভবনের ছাদ ঢালাইয়েও তদারকি ছিল না সাইট ইঞ্জিনিয়ার আফজাল হোসেনের। প্রধান শিক্ষক ও স্কুল কমিটির সদস্যরা নিম্নমানের সিমেন্ট ব্যবহারের অভিযোগ করলেও তিনি সাইটে আসেন কাজ শুরুর প্রায় ৪ ঘন্টা পর। কিন্ত নিম্নমানের সিমেন্ট অপসারণ না করেই তিনি কাজ চালিয়ে যান। পরে প্রধান শিক্ষক আসুক আহমদ ইউএনও’কে ঘটনা অবহিত করায় তার নির্দেশে ননব্র্যান্ড সিমেন্টগুলো সাইট থেকে সরানো হয়। প্রায় দুই ঘন্টা কাজ বন্ধ রেখে অনুমোদিত সিমেন্ট এনে অসমাপ্ত ঢালাই কাজ সমাপ্ত করা হয়।
গত ১৯ জুন ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী পরিদর্শন করে ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবনের কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও বেশকিছু ত্রুটি পান। একটি ভবনের তাৎক্ষণিক কাজ বন্ধ করে দেন। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে টি-টেস্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করে নিম্নমানের ইট পান। ইটসহ সকল নিম্নমানের সামগ্রী অপসারণ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বলেন। দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্লাস্টার ও পাথরের গুণগত মান যাচাই করতে নমুনা সংগ্রহের পর সিলগালা করে পরীক্ষাগারে পাঠান। দরপত্রের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী প্রত্যেক ভবনের যাবতীয় কাজ যথাযথ না হলে ঠিকাদারদের বিল না দিতে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেন।
এর আগে সাইট ইঞ্জিনিয়ারের তদারকির অবহেলায় বড়লেখা নারীশিক্ষা একাডেমী মাধ্যমিক স্কুলের ৪ তলা বিশিষ্ট ২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ছাদ ছুঁয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। কাজের অনিয়মে বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় ফাটল। ইউএনও’র পরিদর্শণে অনিয়ম ধরা পড়ায় তিনি ঠিকাদারকে নির্দেশ দিয়ে ভবনের ছাদ ঢালাই ও সিলিং টাইলস ফিটিংস, চতুর্থ তলার ছাদ চুঁয়ে বৃষ্টির পানি পড়া স্থান, ভিমের ফাটলসহ ভবনের নির্মাণ কাজের অনিয়মগুলো মেরামত করিয়েছেন।
ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, বড়লেখায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভবনের ঢালাইসহ গুরুত্পুর্ণ কাজের সময় সাইটে না থাকার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শণ করে তিনি নানা অনিয়ম পেয়েছেন। এব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছেন। দক্ষিণভাগ এনসিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের চতুর্থ তলার ছাদ ঢালাইয়ে নিম্মমানের সিমেন্ট ব্যবহারের অভিযোগ পেয়ে তাৎক্ষণিক তিনি তা অপসারণ করেছেন।
এব্যাপারে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তদারকি কর্মকর্তা উপ-সহকারি প্রকৌশলী আফজল হোসেন জানান, তিনি সকল কাজ সঠিকভাবে করছেন, তার কোন অনিয়ম নেই। সাংবাদিকের এতকিছু খোঁজাখুজির প্রয়োজন কি।#
Leave a Reply