এইবেলা, কুলাউড়া ::
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ বলেছেন, ‘ ৫১ বছর আগে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল ২৫ মার্চের একটি গণযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ অংশ নিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ও তালিকা কোনদিনই চূড়ান্ত হবেনা। সক্রিয়ভাবে ট্রেনিং নিয়ে যারা যুদ্ধ করেছিল সেখানে মুজিববাহিনী, গ্রামের কৃষক, ছাত্রসহ অনেকেই ছিল। ৭১ সালের ২৫ মার্চ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। কিন্তু বাঙালির মুক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি শেখ মুজিবের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল।’
২৬ শে মার্চ (শনিবার ) সকাল ১১টায় স্থানীয় বঙ্গবন্ধু উদ্যানে কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা ও মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এই কথাগুলো বলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্ণেল আতাউল গণি ওসমানীসহ কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, সি আর দত্ত, জেনারেল রবের নাম সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্মরণ না করায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুলতান মনসুর আরো বলেন, ‘কর্ণেল আতাউল গণি ওসমানীসহ কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, সি আর দত্ত, জেনারেল রব মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। সাদাকে সাদা বলতে হবে, কালোকে কালো বলতে হবে। এর মধ্যে দিয়ে মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখতে হবে। মুক্তির স্বপ্নে আমরা একজন রাজনৈতিক কর্মী।
সুলতান মনসুর বলেন, ৯৬ সালের সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানিয়েছে, কোন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তাদের গ্র্যান্ড স্যালুট দেয়ার নিয়ম আওয়ামীলীগ সরকার চালু করেছিলো। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা এই সরকার বৃদ্ধি করেছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মাকে শান্তি দিতে হলে দুর্নীতিমুক্ত, মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত সমাজের কল্যাণমুখী রাষ্ট্র যদি করতে পারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাহলে বঙ্গবন্ধুসহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা শান্তি পাবে। আর এটা করতে যদি আমরা ব্যর্থ হই হয়তো আমরা ২৬ মার্চ পালন করবো কিন্তু আস্তে আস্তে আমরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। আমি শপথ নেয়ার পর জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বক্তব্যে বলেছিলাম, জাতির পিতাকে জাতীয় ভাবে যারা মানবে না, তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করার পথ নির্ণয় করতে হবে। আমি বলেছিলাম, জয় বাংলা শ্লোগান পাকিস্তানির বিরুদ্ধে, আমরাই মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের নারায়ে তাকবীর, আল্লাহ আকবরের বিরুদ্ধে জয়বাংলা শ্লোগানই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের রণধ্বনি। এই জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগানে রুপান্তরিত করতে হবে। আমি সংসদে সেটি উথাপন করেছিলাম আজ এটার গেজেট হয়েছে।
তিনি মেজর জিয়াউর রহমানকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, কোন একজন মেজরের কথায় দেশ স্বাধীন হয় নাই। এটা ঠিক, চট্টগ্রামে সেদিন মেজর জিয়া ছিলেন। তখনতো আজকের মতো ইলেকট্রনিক মিডিয়া, টেলিভিশন কেন্দ্র ছিলনা। লাকিলি যদি জিয়ার এই কথাটি আমি এ কারণে বলছি, যারা বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব নিয়ে, নেতৃত্ব নিয়ে, কর্তৃত্ব নিয়ে সমালোচনা করে এবং তার বিকল্প অথবা তাকে ম্লান করায় প্রতিষ্ঠিত করতে চ্য়া, তাদের শুভবুদ্ধির উদয়ের জন্য বলবো। সেদিন যদি সেই জিয়ার পোস্টিং চট্টগ্রাম না হয়ে সিলেট হতো, তাহলে কি জিয়ার নাম চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র বা টেলিভিশন থেকে আসতো। ওই দিন অন্য কেউ সেখানে থাকলে সেটি ঘোষনা করতো, ওই সময় প্রফেসর আওয়ামীলীগের হান্নান ভাই লিখিয়ে দিয়েছিলেন সেটি তাকে দিয়ে পাঠ করিয়েছিলেন। কারণ জিয়া ওইসময় চট্টগ্রামে ছিলেন। কাজেই জিয়া আবশ্যক ছিল না, আবশ্যক ছিলেন বঙ্গবন্ধু।
এসময় গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে সুলতান মনসুর বলেন, রাজনৈতিকভাবে আমি বলতে চাই সাংবাদিকরা আপনারা লিখতে পারেন ‘যারা বাংলাদেশ, জাতির জনক শেখ মুজিব, জয় বাংলা, স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে সমালোচনা করবে তারা হচ্ছে এ জাতির জারজ সন্তান। কাজেই এই পথে যারা আসবে এরা কিন্তু কোনদিন ক্ষমতার স্বাদ দেখবেনা। পরিস্থিতি যাই আসুক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্ববাসী আতংকিত, আমরা আতংকিত। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি হচ্ছে, সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। কাজেই সবাইকে বলবো বাংলাদেশের অস্থিত্ব যতদিন থাকবে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সরকার কোনদিনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এই পথটি বন্ধ হয়ে গেছে। রাজনীতিতে শতমত শতপথ থাকবে কিন্তু ইতিহাস তার আপন গতিতে যাবে। দিনকে দিন রাতকে রাত বলতে হবে। ইতিহাস মেনে নিয়ে যে যার রাজনীতি করবেন। আমি শুধু এটুকু বলবো জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে দেশ অনেক উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই তাদের গায়ের মধ্যে চুলকাচ্ছে, অনেকেই সহ্য করতে পারছেনা, অনেকেই অনেক ভাবে কথা বলছেন, আবার অনেকেই দলের মধ্যে বা বঙ্গবন্ধু কথা বলে এখন সব আওয়ামীলীগ হয়ে গেছে এমন একটা সমস্যা। যাই হোক তবুও দল বাড়ুক, বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন আছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের ঐক্যের প্রয়োজন আছে। যারাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী রাজনীতিতে এগিয়ে যাবেন বা যাচ্ছেন। কনসাসলি তাদেরকে আমি আমার বন্ধু, ভাই, রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমার জীবনের এই লগ্নে এসে তাদেরকে শুধু এটুকুই বলবো সেই পাকিস্তানি সুর কিন্তু এখান থেকে আর বাজবেনা। সেই ইসলামাবাদ বা সালিমাবাদের অট্টালিকা কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে আর কিন্তু দেখা যাবে না। এটা ইতি হয়ে গেছে ১৬ ডিসেম্বর । মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের সাকসেস হলো এখানেই। সেই সালিমাবাদ দেখার স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দেয়া হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্যে দিয়ে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আনোয়ারের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সফি আহমদ সলমান, পৌরসভার মেয়র সিপার উদ্দিন আহমদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাওসার দস্তগীর, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেণু, ইউপি চেয়ারম্যান মোসাদ্দিক আহমদ নোমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুশীল চন্দ্র দে, মোঃ মাসুক মিয়া প্রমুখ।#
Leave a Reply