আজিজুল ইসলাম :: নিজোর বাড়িত থাকলে, মনোর মাঝে শান্তি থাকে। আর ইবার (এবছর) ঈদ কাটবো আশ্রয় কেন্দ্রে। যতো ভালা খানি (খাবার) হউক, তাতে তৃপ্তি পাইতাম না। ঈদর আনন্দ নায় বরং খারাপ লাগবো বেশি। জীবনে কোনদিন আশ্রয় কেন্দ্রে ঈদ করছি না। ইবার বন্যায় আশ্রয় কেন্দ্রে ঈদ করতে হবে। কথাগুলো বলছিলেন কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের ঘাটের বাজার বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রের ৬০ উর্ধ্বো হাওয়া বিবি।
কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৩৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলেন সাড়ে সাত হাজার মানুষ। অনেকে ইতোমধ্যে ছেড়েছেন আশ্রয় কেন্দ্র। বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার মানুষ এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন। বন্যার পানি না কমায় ঈদের আগে তাদের বাড়ি ফেরা অনেকটা অনিশ্চিত।
ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে বন্যার পানিবন্দি কুলাউড়ার লাখো মানুষের । এবারই প্রথম অনেকের ঈদ কাটবে কারো আশ্রয় কেন্দ্রে আবার কারো আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে। দীর্ঘ পানি বন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে মানবেতর দিন কাটছে উপজেলার বন্যাপীড়িত অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষের।
জানা যায়, গত ১৭ জুন থেকে হাকালুকি তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলার পৌর এলাকাসহ ভাটেরা, বরমচাল, ভূকশীমইল, কাদিপুর, ব্রাহ্মণবাজার ও জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৭০ টি গ্রাম। সীমান্তের ওপার থেকে আসা এবং পাহাড়ী ঢল ও অতিবৃষ্টির প্রভাবে বন্যায় প্লাবিত হয়ে যায়। স্মরণকালের ভয়াবহ এ বন্যায় অনেক মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেন।
প্রায় ২০ দিনে পানিবন্দি উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। পানি কমছে খুব ধীর গতিতে। এখনো ৫০ ভাগ বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষেরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। গত তিন দিনে পানি না কমায় দুর্ভোগ আরও দীর্ঘতর হচ্ছে। দুইদিন পরেই ঈদুল আযহা। বাড়িতে পানি থাকায় অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও কোরবানী দিতে পারছেন না।
প্রতিবছর ঈদকে ঘিরে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন। এবারই প্রথম পানিতে প্লাবিত এলাকার নিম্ন, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের ঈদের সেই আনন্দে ভাটা পড়েছে। ঈদের দিন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের বাড়ি ফেরার ব্যাকুলতা আর আর হতাশায় কাটবে।
কুলাউড়া পৌরসভার বিএইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা মনসুর গ্রামের হালিমা খাতুন বলেন, এই বার ঈদ কাটবে আশ্রয়কে›্দ্ের। ইতা কোন সময় কল্পানও করিনি। নিজেরা কোরবানী দিতে না পারলেও গ্রামে আমাদের স্বচ্ছ্বল প্রতিবেশীরা কোরাবানী দেন। পানি থাকায় এবার তারাও কোরবানী দিবে না। বাচ্চারা এইবার কোরবানীর মাংস খেতে পারবেনা। সারদিন কাটবে আশ্রয় কেন্দ্রের বদ্ধঘরে।
শ্রীপুর কামিল মাদরাসা বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আব্দুল কাইয়ুম, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি রোজিনা, সুলতানা জানান, আমরা বাড়িতে ফিরতে চাই। আমাদের ফেরার ব্যবস্থা করে দিন।
কুলাউড়ার বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, আশ্রয় কেন্দ্রে ঈদের দিন কোরবানীর গরুর গোশত ও রান্না করা খাবার বিতরণ করবে বিভিন্ন সংস্থা। সরকার থেকে যেসব বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে, তা ইতোমধ্যে বানভাসী মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তারপরও ঈদের দিনে এসব অসহায় মানুষকে কিছু দেয়ার চেষ্টা করবো।#
Leave a Reply