এইবেলা, কুলাউড়া :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ঋণ দেওয়ার নামে অভিনব “নোভা ফাউন্ডেশন” নামে একটি ভূয়া এনজিও প্রতারণা করে সাধারণ মানুষের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঋণ না দিয়ে ওই এনজিওর কর্মকর্তারা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। খবর পেয়ে শত শত ভুক্তভোগীরা ঋণ না পেয়ে এনজিও অফিসে জড়ো হন। এসময় ভুক্তভোগীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিশৃংখল আচরণ শুরু করলে স্থানীয় কাউন্সিলর আতাউর রহমান চৌধুরী সোহেল ও কুলাউড়া থানার এএসআই আবু তাহের ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি (নোভা ফাউন্ডেশন) সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দেখানো হলেও তারা প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন প্রচার ও কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। কুলাউড়া পৌর শহরের বাদে মনসুর এলাকায় ইছহাক মিয়ার মালিকানাধীন বাসা থেকে কয়েকদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলছিলো। প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় দেখানো হয়েছে ঢাকা উত্তরার রানাভোলায়। নোভা ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে মাঠ পর্যায়ের কর্মী সজিব আহমদ সহ তাদের লোকদের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দোকানদার, যুবক, চা শ্রমিক, গৃহকর্মী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের কাপড়ের ব্যবসা, মনোহারী, হার্ডওয়্যার, মৎস্য খামার, গরুর খামার, প্রবাসী ঋণ, এবং যে কোন বৈধ ব্যবসায় ঋণের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা ঋণ গ্রহিতাকে প্রথমে সদস্য ভর্তি ফরম বাবদ ৬২০ টাকা, এরপর ঋণ প্রস্তাব হওয়ার পর প্রতি লাখে ১০ হাজার টাকা করে অগ্রিম নিচ্ছেন। তাদের খপ্পরে পড়ে এলাকার সাধারণ মানুষ কেউ ৫ হাজার, কেউ ১০ হাজার কেউ ২০ টাকা অগ্রিম দিয়েছে। সংঘবদ্ধ এই চক্র নিত্য নতুন কৌশলে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন মানুষ।
ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের হিংগাজিয়া চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি মোঃ জামাল মিয়া বলেন, আমাদের বাগানে ২৬ জনকে ঋণ দেয়ার জন্য নোভা ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার খলিলুর রহমান সদস্য ভর্তি বাবদ প্রথমে ৬২০ টাকা করে নেন। এরমধ্যে যাদের ঋণের প্রস্তাব পাশ হয়েছে তাদের কারো কাছ থেকে প্রতি লাখে ১০ হাজার টাকা, দুই লাখে ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজারে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ঋণ নেয়ার জন্য অফিসে এসে দেখি কর্মকর্তারা অফিস তালাবদ্ধ রেখে পালিয়ে গেছে। আমরা এখন আমাদের টাকাগুলো কিভাবে পাবো।
পৌরসভার বিহালা গ্রামের বাসিন্দা আতিকুল ইসলাম বলেন, আমার পরিবারে সাবিনা আক্তার ও ফারজানা আক্তারকে আগামী বৃহস্পতিবার ঋণ নেয়ার কথা বলে দু’জনের কাছ থেকে ২১ হাজার ২৪০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু আজ অফিসে এসে দেখি তারা কেউই অফিসে নেই। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, যাতে ওই প্রতারক চক্রকে ধরে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং আমাদের প্রাপ্ত টাকাগুলো যেন ফিরে পাই।
কাদিপুর ইউনিয়নের ছকাপন গ্রামের বাসিন্দা রুমানা বেগম বলেন, নোভা ফাউন্ডেশনের লোকজন আমাদের গ্রামে গিয়ে মানুষের সাথে বৈঠক করে প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে অগ্রিম টাকা জমা দেয়ার জন্য বলেন। এত দ্রুত আপনারা কিভাবে আমাদের টাকা দিবেন আপনাদের উদ্দেশ্য কি বললে তারা বলে, আপনারা গরিব মানুষ, আমরা সরকার থেকে একটা বড় বরাদ্দ এনেছি। এই টাকা দিয়ে আপনারা উন্নয়ন করবেন। প্রতিমাসে আমাদের কিস্তি বাবদ ১০ হাজার করে দিবেন। তাদের কথায় দরিদ্র ১২ জন মহিলা ১০ হাজার টাকা করে দিয়ে এখন বিপদে পড়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানের অফিস তালাবদ্ধ। অফিসের সামনে শত শত লোক তাদের ঋণ নেয়ার জন্য ভিড় করেছিলেন। কিন্তু অফিসে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন উধাও। অফিসের জানালা দিয়ে দেখা যায় অফিসের টেবিলে ঋণ দেয়ার পাশ বই, রেজিস্টার খাতাসহ চেয়ার রয়েছে। এসময় অফিসের সামনে থাকা প্রায় শতাধিক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সঞ্চয় ও ঋণের পাশ বই পাওয়া গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রায় ৫ শতাধিক সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১৫-২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
বাসার মালিক ইছহাক মিয়া বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি ওই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার খলিলুর রহমান আমার বাসার একটি ইউনিট ৫ হাজার টাকা মাসিক হিসেবে ভাড়া নেন। ১০ ফেব্রুয়ারি তারা ভোরে বাসায় উঠেন। পরদিন আমার সাথে বাসা ভাড়ার চুড়ান্ত চুক্তি করার কথা ছিল। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তারা বাসা তালাবদ্ধ করে পালিয়ে গেছে। তিনি জানান, ওই প্রতিষ্ঠান তাঁর বাসা ভাড়া নেয়ার আগে কুলাউড়ায় ৫ মাসে ধরে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে নোভা ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার খলিলুর রহমান ও মাঠকর্মী সজিব আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতাউর রহমান চৌধুরী সোহেল বলেন, আমার এলাকায় প্রতিষ্ঠান হলো আমি সেটা জানতাম না। এটি একটি ভূয়া প্রতিষ্ঠান। কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকার শত শত সাধারণ মানুষকে ঋণ না দিয়ে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আজ কুলাউড়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভুক্তভোগীরা ওই প্রতিষ্ঠানের অফিসের সামনে এসে জড়ো হলে আইনশৃংখলার অবনতি না হওয়ার জন্য আমি বিষয়টি পুলিশকে জানাই। তাছাড়া বাসার মালিককে ভাড়া দিতে ওই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কাগজাদি যাচাই করা উচিত ছিল।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুছ ছালেক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখা হয়। এখনোও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তবে ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজনদের ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।#
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply