কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:: স’মিল শিল্প সেক্টরের জন্য সরকার গঠিত নিম্নতম মজুরি বোর্ড ঘোষিত মজুরি এবং নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র প্রদান ও ৮ ঘন্টা কর্মদিবস নির্ধারণসহ অবিলম্বে শ্রমআইন বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে স’মিল শ্রমিক সংঘ। শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘ (রেজিঃ নং মৌলঃ-৩২) এর উদ্যোগে ভানুগাছ চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে অনুষ্টিত সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা স’মিল শ্রমিক সংঘের সভাপতি মোস্তাক মিয়ার সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রমজান আলীর পরিচালনায় অনুষ্টিত সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক এবং বাংলাদেশ স’মিল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস। সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কমলগঞ্জ স’মিল শ্রমিক সংঘের সহ-সভাপতি মোঃ ছালামত মিয়া, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, সদস্য মোঃ নওশাদ আহমদ, এরশাদ মিয়া প্রমূখ।
সভায় বক্তারা বলেন, গত বছরের ৬ জুন সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ড স’মিল শিল্প সেক্টরেরর শ্রমিকদের জন্য নিম্নতম মজুরি হার গেজেট (এস, আর, ও নম্বর-১১২-আইন/২০২২) আকারে প্রকাশ করেন। সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি অনুযায়ী পৌর এলাকার স’মিল মিস্ত্রির মাসিক মোট মজুরি ২৭,০০৫ টাকা (দৈনিক ১০৪০ টাকা), সহকারি মিস্ত্রির মাসিক মোট মজুরি ২১,৩৫০ টাকা (দৈনিক ৮২৫ টাকা), টানোয়ার মাসিক মোট মজুরি ১৯,৬১০ টাকা (দৈনিক ৭৬০ টাকা), হেলপার ও অন্যান শ্রমিকদের মাসিক মোট মজুরি ১৮,৪৫০ টাকা (দৈনিক ৭১০ টাকা) এবং শিক্ষানবিস শ্রমিকদের মাসিক মোট মজুরি ১১,০০০ টাকা (দৈনিক ৪৫০ টাকা) নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও গেজেটে শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরির সাথে বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে মজুরি বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) কথা বলা হয়েছে।
সভায় বক্তারা বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির বাজারে স’মিল শ্রমিকরা দিশেহারা। চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, পিয়াজ, শাক-সবজি, মাছ-মাংস, দুধ-ডিম, ঔষুধপত্রসহ নিত্যপণ্যে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি দফায় দফায় জ্বালানি তেল, গ্যাস, বাড়িভাড়া-গাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকদের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আবারও গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। শ্রমিকদের এই দূর্দশার সময়ে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ড ঘোষিত মজুরির চেয়ে কম মজুরির শ্রমিকদের কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তদোপরি প্রতিনিয়ত স’মিল শ্রমিকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কর্মক্ষেত্রে ন্যূনতম নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় স’মিলে কর্মরত শ্রমিকদের শতকরা ৬০ ভাগ দূর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন। এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অঙ্গহানি হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। কাজ করতে যেয়ে এ সমস্ত দূর্ঘটনার শিকার শ্রমিকের উপযুক্ত চিকিৎসা যেমন মালিক করে না, তেমননি অঙ্গহানি ও মৃত্যুর জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপুরণও মূলত দেওয়া হয় না। স’মিলের মালিকরা শ্রমআইন, রাষ্ট্রীয় আইনের তোয়াক্কা করেন না। শ্রমআইন অনুযায়ী নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক প্রদান, দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের দ্বিগুণ মজুরি, মজুরিসহ সাপ্তাহিক ছুটি, নৈমিত্তিক ছুটি (বছরে ১০ দিন), চিকিৎসা ছুটি (বছরে ১৪ দিন), উৎসব ছুটি (বছরে ১১ দিন) অর্জিত ছুটি (বছরে ২০ দিন) ইত্যাদির প্রদানের বিধান থাকলেও তা প্রদান করা হয় না। সভা থেকে স’মিল শিল্প সেক্টরে শ্রমআইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বাস্তবায়ন করার জন্য স’মিল মালিকদের প্রতি আহাবান জানান এবং একই সাথে এ বিষয়ে তদারকি করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হিসেবে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের স্বীয় দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হওয়ার দাবি জানান।
সভা থেকে আগামী ১০ মার্চ জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা শাখার ৩য় সম্মেলন সফল করার লক্ষ্যে করার আহবান জানানো হয়।#
Leave a Reply