এবেলা ডেস্ক::
বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশেমনগর গ্রামের আমিন আলীর ছেলে সুলতান আহমদ হিরণ (৪০)। প্রায় ১৫ বছর ধরে দুবাইয়ে গাড়ি চালকের চাকরি করেন। অভিযোগ রয়েছে তিনি দুবাইয়ে ড্রাইভিং পেশার আড়ালে নানা কৌশলে বাংলাদেশে স্বর্ণ পাচার করেন। স্বর্ণ বহনকারীরা তার পাঠানো স্বর্ণ আত্মসাত (যথাস্থানে বুঝিয়ে না দিলে) করলে তা উদ্ধারে প্রশাসনের জোরালো সহযোগিতা পেতে তিনি ব্যবহার করেন ভিআইপিদের। গত বছরের আগষ্টে ঢাকার মানিকগঞ্জের সাঁটুরিয়ার দুবাই থেকে দেশে ফেরা নাজমুল ইসলাম নামের যুবক তার পাঠানো প্রায় ২৮ লাখ টাকার স্বর্ণ আত্মসাত করায় তা উদ্ধারে সহযোগিতা করতে সুলতান আহমদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপিকে দিয়ে সাঁটুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে ফোন করিয়েছিল। মন্ত্রীর ফোন পেয়ে সাঁটুরিয়া থানার ওসি গুরুত্ব সহকারে তার (মন্ত্রীর) এলাকার দুবাই প্রবাসীর খুঁয়া যাওয়া স্বর্ণ উদ্ধারের দায়িত্ব দেন থানার এক পুলিশ অফিসারকে। ওই অফিসার অভিযুক্ত নাজমুলকে ধরে নিয়ে আসেন তার কার্যালয়ে। সম্প্রতি পুলিশ অফিসারের কার্যালয়ে নাজমুলের নিকট থেকে স্বর্ণ উদ্ধারের জন্য তার স্বীকারোক্তি আদায়ের কৌশল সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হলে পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে তোলপাড় শুরু হয়।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, দুবাই প্রবাসী সুলতান আহমদ পুলিশ অফিসারের চেয়ারে বসে মানিকগঞ্জের যুবক নাজমুলকে স্বর্ণ ফেরত দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। দরজার পার্শে দাঁড়িয়ে পুলিশ অফিসার বলছেন, ‘তুই গোল্ড মেরে দিছস, কোথাও স্বর্ণ বিক্রি করে থাকলে টাকা দিয়ে ফেরৎ নিয়ে আয়’। অন্য কার কাছে দিয়ে দিছে বলতেই তার উপর শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। পুলিশ অফিসার চড়থাপ্পড় দিতে থাকে। এক পর্যায়ে সুলতান আহমদ চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে কিল ঘুষি মারতে মারতে মাটিতে ফেলে লাথি মারতে মারতে বলে তুই মাফিয়া ছিনস, আমি মাফিয়া, একঘন্টার মধ্যে আমার টাকা এনে দেয়।’
শনিবার বিকেলে সুলতান মিয়ার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার বড়ভাই ফারুক মিয়া জানান, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ছুটি কাটিয়ে দুবাই যাওয়ার প্রাক্কালে শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। স্বর্ণ চোরাচালানের মামলা দিয়ে পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করেছে। তিনি প্রশ্ন রাখেন কোন প্রবাসী কি প্রবাসে যাওয়ার সময় স্বর্ণ নিয়ে যায়। পুলিশ নাকি আমার ভাইয়ের কাছে আড়াই কোটি টাকার অবৈধ স্বর্ণ পেয়েছে। এই মামলায় সে জেলে রয়েছে। তিনিও দুই বছর আগে দুবাই যান। তার ছোটভাই প্রায় ১৫ বছর ধরে দুবাইয়ে একটি সরকারি অফিসে গাড়ি চালকের চাকরি করে। পাশাপাশি ফ্ল্যাট ব্যবসা করছে। গত আগষ্ট মাসে তার ভাই সুলতান নিজের বিয়ের কাবিনে ধরা স্ত্রীর ও ভাগ্নির বিয়ের জন্য প্রায় ২৮ লাখ টাকার জুয়েলারি সহ স্বর্ণ বৈধভাবে কাষ্টমস করে পাশের রুমের নাজমুলকে দিয়ে দেশে পাঠিয়েছিলেন। বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি (সুলতান) নাজমুলকে ওয়ানওয়ে বিমান টিকেটও দিয়েছিলেন। কিন্তু নাজমুল তা পৌছে না দিয়ে আত্মসাৎ করে। কোন উপায় না পেয়ে এলাকার সংসদ সদস্য হওয়ায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রীর শরনাপন্ন হয়ে ঘটনা জানাই, স্বর্ণের বৈধ কাগজপত্র দেখাই। তিনি আইনানুগ সহযোগিতার জন্য মানিকগঞ্জ জেলার সাঁটুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে ফোন করে সহযোগিতার জন্য বলে দেন। পুলিশ আমার ভাইয়ের স্বর্ণ উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়। নাজমুলকে ধরে আনার পর জানা যায়, সে সব স্বর্ণ বিক্রি করে দিয়েছে। পুলিশ তার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা উদ্ধার করে দিয়েছে। আমরা আর মামলা-মোকদ্দমায় যায়নি। দুবাইয়ে বসবাসকারী নেত্রকোনার এক ব্যক্তির সাথে আমার ভাইয়ের বিরোধ রয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র করে আমার ভাইকে বিমানবন্দরে গ্রেফতার করিয়েছে। স্বর্ণ চোরাকারবারি বানিয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি শনিবার রাতে জানান, সুলতান আহমদ ও ফারুক মিয়া তান নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা। মানিকগঞ্জের এক ব্যক্তি তাদের কিছু স্বর্ণালংকার মেরে দিয়েছে জানিয়ে তা উদ্ধারের জন্য সহযোগিতা নিতে আমার কাছে আসে। আমি স্বর্ণ আনার বৈধ কাগজপত্র দেখে সাঁটুরিয়া থানার ওসিকে বিধিমোতাবেক সহযোগিতা করতে বলেছি। সুলতান আহমদ স্বর্ণ চোরাচালানী কি না আমার জানা নেই। কারও মুখেও কোনদিন শুনিনি।
Leave a Reply