বিশেষ প্রতিনিধি::
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ১ম ধাপে জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলায় ৮ মে বুধবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় প্রতীক ছাড়া এ নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের পাশাপাশি নেতাদের ঘুম হারাম ছিল।বিএনপির প্রার্থী বিহীন এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয়ভাবে কাউকে সমর্থন না দেওয়ার নির্দেশ থাকলে ও নিজেদের অনুসারীদের নিজ বলয়ের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ ছিলো নেতৃবৃন্দের। এ নির্দেশ উপেক্ষা করে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নিয়েছে। জুড়ীতে স্থানীয় সংসদ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন মনোনীত প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এতে সংসদ সদস্য বিরোধী বলয়ের নেতাকর্মীরা উচ্ছসিত।
মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী-বড়লেখা) আসনের ৫ বারের সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন আহমদের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন বড়লেখায় আপন ভাগ্না সোয়েব আহমদ ও জুড়ীতে রিংকু রঞ্জন দাস।অপর দিকে বিগত সংসদ নির্বাচনে এ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের মনোনীত প্রার্থীও ছিলেন দুই উপজেলায় দুইজন। ভোটের ফলাফল বিশ্লেষনে দেখা যায়, বড়লেখা উপজেলায় সংসদ সদস্য শাহাব উদ্দিনের প্রার্থী, উনার ভাগনা, বর্তমান চেয়ারম্যান শোয়েব আহমদ হেরেছেন জাকির হোসাইন সমর্থিত প্রার্থী সদ্য পদত্যাগকারী দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আজির উদ্দিনের কাছে। শোয়েব আহমদের প্রাপ্ত ভোট ২৮৩৬৯, অপর দিকে আজির উদ্দিনের প্রাপ্ত ভোট ৩২৯১৬। অপর প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রফিকুল ইসলাম সুন্দর পেয়েছেন ১৯৬৩৫ ভোট। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তাজ উদ্দিনকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন নতুনমুখ প্রার্থী মাওলানা আবিদুর রহমান। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাহেনা বেগম হাসনার প্রতিদ্বন্দি না থাকায় আগেই তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
অপর দিকে জুড়ী উপজেলায় সংসদ সদস্য মনোনীত প্রার্থী,উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রন্জন দাসের মনোনয়ন বাজেয়াপ্ত হয়েছে।এ উপজেলায় ছয় জন প্রার্থীর মধ্যে সংসদ সদস্য মনোনীত প্রার্থী রিংকু রন্জন দাস হয়েছেন চর্তুথ। তার প্রাপ্ত ভোট ৪৯৪০। জাকির হোসাইন সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি রিংকু রন্জন দাসের চেয়ে ১৪৯৭৮ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন।বিজয়ী প্রার্থী কিশোর রায় চৌধুরী মনির সাথে প্রতিদ্বন্দিতায় ছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মোঈদ ফারুক। রিংকু রন্জন দাস সহ তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা প্রতিন্দন্ধী প্রার্থীর চেয়ে প্রায় ৮ হাজার ভোট বেশী পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।তার প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী ছিলেন অনিবন্ধিত ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠন আন্জুমানে আল ইসলাহর উপজেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুস শহীদ। তিনি পেয়েছেন ১৩২৭৯ ভোট।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রনজিতা শর্মাকে প্রায় দশ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন শিল্পী বেগম।
জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জুড়ীর মানুষ টিআর, কাবিখার টাকা লুটকারী, সরকারি ডিপ টিউবওয়েল বিক্রিকারীদের ব্যালটের মাধ্যমে প্রতিহত করেছে। উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল জুড়ী-বড়লেখার আওয়ামী রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের জন্য এক অসনি সংকেত।
বড়লেখার বর্ণি ইউনিয়নের হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা হেরে ও জিতে গেছি।কারন আমাদের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম সুন্দর হারলেও বড়লেখার মানুষ স্বচ্ছ ভোটের মাধ্যমে মামা-ভাগনার রাজত্বকে এক ধাপ পেছনে ফেলে দিয়েছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে পরিকল্পিতভাবে শাহাব উদ্দিন নৌকার বিপক্ষে আপন ভাগ্নাকে বিদ্রোহী প্রার্থী করে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে দলীয় কোন্দল সৃষ্টি করেছেন। যার প্রভাব পড়েছে এই নির্বাচনে। ব্যালটের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন।
মৌলভীবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো শাহীন আকন্দ জানান, মোট সংগৃহীত ভোটের শতকরা ৮ পাসেন্টের কম ভোট যেসব প্রার্থী পেয়েছেন তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
Leave a Reply