ইবে ডেস্ক, কুলাউড়া :: মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নে বনপ্রহরি শাহীন আহমদ (৩০) মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। নিহতের পরিবার ও বনবিভাগ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি করছে। ঘটনার ৭দিন পর বনবিভাগের পক্ষ থেকে কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়েরের ১২ দিন অতিবাহিত হলেও মামলার একমাত্র আসামী রয়েছে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়, বরমচাল ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের সালাউদ্দিনের ছেলে মো: এমাদ উদ্দিন পরিকল্পিতভাবে রাস্তার বিপরীত পাশে (রংসাইডে) গিয়ে মোটরসাইকেল দিয়ে সজোরে ধাক্কা মারে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো বনপ্রহরি শাহীন আহমদকে। এতে শাহীন আহমদ প্রায় ১০ ফুট দুরে গিয়ে ছিটকে পড়েন। তিনি কপালে ও নাকে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ব্রাহ্মণবাজার মুসলিম এইড হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রæত সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। এঘটনায় ফরেষ্টার মো: আব্দুল ওয়াদুদও গুরুতর আহত হন। তিনিও সিলেটে ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করে ফিরে এসে থানায় মামলা (নং- ১৪ তারিখ ১৪/০৭/২৪ সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯৮/৯৯/১০৫ ধারা) দায়ের করেন। বনপ্রহরি শাহীন আহমদের মৃত্যুর পর থেকে ঘটনাটি দূর্ঘটনা না পরিকল্পিত হত্যাকান্ড তা নিয়ে জনমনে শুরু হয় নানা জল্পনা কল্পনা।
স্থানীয় একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র ও বনবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বরমচাল ইউনিয়নের সালাউদ্দিন একজন কাঠ ব্যবসায়ী। তার একটি ফার্নিচারের দোকানও রয়েছে। সম্প্রতি ভাটেরা রাবার বাগানের পরিপক্ক রাবার গাছ বৈধ কেনাবেচার পাশাপশি অবৈধ কাঠপাচারের সাথে জড়িত। এসব বিষয় নিয়ে ঘটনার ৩-৪ দিন আগে সালাউদ্দিনের সাথে বনপ্রহরি শাহীন আহমদের বাকবিতন্ডা হয়। এরই জের ধরে সালাউদ্দিনের ছেলে এমাদ উদ্দিন দূর্ঘটনার নামে পরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেল দিয়ে ধাক্কা মেরে বনপ্রহরি শাহীন আহমদকে হত্যা করে। ঘটনার পর থেকে এলাকার মানুষের মুখে মুখে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে।
শাহীন আহমদ বাকবিতন্ডার বিষয়টি তাৎক্ষনিকভাবে কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিনকে অবহিত করেন। বনবিভাগ ও নিহত শাহীন আহমদের পরিবারের দাবি, এটা কোন দূর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। তারা ঘটনার সাথে জড়িত মো: এমাদ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।
কুলাউড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন আহমদ জানান, রাতের আধারে ভাটেরা রাবার বাগান থেকে গাছ কেটে নেয়ার ঘটনা নিয়ে বনপ্রহরি শাহীন আহমদের সাথে কাঠব্যবসায়ী সালাউদ্দিনের বাকবিতন্ডার বিষয়টি অবগত হই। ভাটেরা রাবার বাগান থেকে পরিপক্ক রাবার গাছ দিনের আলোয় স্থানান্তর করার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু তারা রাতে আধারে কাঠ জোরপূর্বক নিতে চাইলে মুলত এই বিরোধটা সৃষ্টি হয়। ঘটনাটি বনপ্রহরী শাহীন আহমদের জন্য কাল হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা একাধিকবার ঘটনাস্থলে তদন্ত করেছেন। স্থানীয় লোকজনও এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এখন আসামী গ্রেপ্তার হলেই মুল বিষয়টি উন্মোচিত হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কুলাউড়া থানার এসআই হাবিব জানান, বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। মামলার আসামী কোন জায়গায় পলাতক অবস্থায় চিকিৎসাধী আছে। তাকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত ৯ জুলাই বিকেলে উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের খাদিমপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো অবস্থায় বিপরীত দিক থেকে এসে বনপ্রহরী শাহীন আহমদকে সজোরে ধাক্কা দিলে তিনি ছিটকে পড়ে আহত হন। তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। নিহত শাহীন উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের তুকলি গ্রামের মরহুম আব্দুল জব্বাবের ছেলে। তিনি বনবিভাগের কুলাউড়া রেঞ্জের আওতাধীনভাটেরা বিটের বনপ্রহরী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।#
Leave a Reply