আব্দুর রব, বড়লেখা, ০৫ জুন ::
বাপ-দাদাসহ বংশ পরম্পরায় মাটির ঘরেই বসবাস করে আসছি। ঝড়-তুপানের রাতে মেঘের ঘোড় ঘোড় শব্দ শুরু হলেই মাটির দেয়াল ও চালা ভেঙ্গে পড়ার আতংকে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘরের কোনে নির্ঘুম রাত কাটাতাম। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি পাকার ঘরে ঘুমাবো। সেই না দেখা স্বপ্ন পুরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে নির্মিত বারান্দাসহ ২ কক্ষ, বাথরুম আর রান্নাঘর সংযুক্ত টিনসেট পাকা ঘর পেয়ে খুশিতে আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বললেন বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণগুল (কেরামতনগর) চা বাগানের হতদরিদ্র চা শ্রমিক রমন চন্দ্র ঘোষ। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা ঘরে উঠেছে ৫ চা শ্রমিক পরিবার।
জানা গেছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে চা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে ‘মডেল আবাসন’ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বড়লেখায় মোট ৫ জন দরিদ্র চা শ্রমিকদের পাকা ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে উপজেলা সমাজ কল্যাণ পরিষদ। ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান ও সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের বিশেষ তত্তাবধানে গত ৩১ মে মডেল আবাসন প্রকল্পের ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে সরকারের ব্যয় হয়েছে ৪ লক্ষাধিক টাকা।
বুধবার ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান নবনির্মিত পাকা ঘরগুলো পরিদর্শন করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে দক্ষিণ শাহবাজুপর ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন, নিউ সমনবাগ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী খান, ছোটলেখা চা বাগানের ব্যবস্থাপক শাকিল আহমদ, দক্ষিণগুল (কেরামতনগর) চা বাগানের ব্যবস্থাপক মাসুম আহমদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সরকারী ঘরপ্রাপ্ত ছোটলেখা চা বাগানের মসজিদের মোয়াজ্জিম নানু মিয়া জানান, বাঁশবেতের বেড়া ও খড়ের চালার ঘরে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী, ৪ ছেলে ও ২ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করতাম। ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনার পরিবেশ ছিল না। সরকার শুধু পাকা ঘর নির্মাণ করেই দেইনি। বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রয়োজনীয় ভাল্ব ও ফ্যান লাগিয়ে দিয়ে আমাদেরকে উন্নত জীবন যাপনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সরকারী ঘরপ্রাপ্ত দরিদ্র চা শ্রমিক নানু মিয়া, রমন চন্দ্র ঘোষ, সমনবাগ বাগানের চা শ্রমিক নানকা রবি দাস, পাল্লাথল বাগানের চা শ্রমিক রিতা বক্তা ও বাহাদুরপুর বাগানের চা শ্রমিক শ্রীধরমনি শুভকাউ।
ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান জানান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে চা শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়নে ‘মডেল আবাসন’ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বড়লেখায় ৫ দরিদ্র চা শ্রমিক পরিবারের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিবশে, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন মহোদয়ের বিশেষ দিক নির্দেশনায় পাকাঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যে পরিবেশমন্ত্রী একটি ঘর পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ৪টি ঘরের নির্মাণ কাজ বিলম্বিত হয়। তবে ৩১ মে সেগুলোও সম্পন্ন হওয়ায় উপকারভোগীরা নতুন ঘরে উঠেছে। বুধবার সরেজমিনে তিনি তা পরিদর্শন করেন।
Leave a Reply