এইবেলা, কমলগঞ্জ ::
স্বাধীনতার ৪৯ বছরেও দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার দুই শহীদের পরিবার। এই দুইভাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হলেন-কমলগঞ্জ উপজেলার ৪নং শমশেরনগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র পাল ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পিযুষ কান্তি পাল। ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধে এ দেশের অগণিত ছাত্র, যুবকসহ স্বাধীনতাকামী সর্বস্তরের জনতা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তি সংগ্রামে। দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র লড়াই-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে এ দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু কমলগঞ্জ উপজেলার ওই দুই ভাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম আজো রাষ্ট্রীয় গেজেটভুক্ত হয়নি।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে শমশেরনগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের মৃত প্যায়ারী মোহন পালের দুই ছেলে প্রতাপ চন্দ্র পাল ও পিযুষ কান্তি পাল দেশকে হানাদারমুক্ত করতে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার দীপ্ত শপথ নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তারা ৪নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব:) সি, আর দত্তের নেতৃত্বে ভারতের কৈলাশহর সাবসেক্টর এর ভগবাননগর ইয়থ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতীয় ক্যাপ্টেন আব্দুল হামিদের অধীনে গাইডের দায়িত্ব নিয়ে শমশেরনগর পাক বাহিনীর আস্তানার খোঁজখবর নিতে দেশে আসার পর দেশীয় দোসরদের সহযোগিতায় পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পাক বাহিনীর সদস্যরা তাদের ক্যাম্পে নিয়ে প্রতাপ চন্দ্র পাল ও পিযুষ কান্তি পালকে অমানুষিক নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করে। তাদের নাম শমশেরনগর বিমান ঘাটিতে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভে লিপিবদ্ধ রয়েছে। প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় দিবসগুলোতে এই স্মৃতিস্তম্ভে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রদান করা হয়।
শমশেরনগর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র পাল ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পিযুষ কান্তি পাল এর নাম শহীদ মুক্তযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় তালিকাভুক্তির জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলসহ বিভিন্ন দপ্তরের গত কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি আবেদন করা হয়েছে। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাচাই কমিটিতেও তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত আছে। কিন্তু অদ্যাবধি পর্যন্ত তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি।
আলাপকালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র পালের বিধবা স্ত্রী কুমুদিনী পাল কান্না বিজড়িত কন্ঠে জানান, আমার স্বামী প্রতাপ চন্দ্র পাল ও ভাসুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পিযুষ কান্তি পালকে ১৯৭১ সালে পাক বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে ১৯৭১ সালের ১০ জুন তারিখে শমশেরনগর বিমান ঘাটি এলাতার ক্যাম্পে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে গুলি করে হত্যা করে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য বহু আবেদন নিবেদন করেও এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাইনি। শমশেরনগর বিমানবন্দর এলাকায় স্থাপিত মুক্তিযোদ্ধকালীন গণ হত্যার স্বীকার যারা তাদের নামের তালিকার প্রথমেই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা পিযুষ কান্তি পাল ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র পাল এর নাম লিপিবদ্ধ রয়েছে। তিনি আরো জানান, ২০১১ সালে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে আর কোন সুযোগ সুবিধা আমরা পাইনি। তিনি দু:খ প্রকাশ করে বলেন, আমার ২য় ছেলে সাংবাদিক প্রমথ পাল পিনাক কয়েক বছর পূর্বে দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। আর এক ছেলে শমশেরনগর বাজারে ব্যবসা করছে। আমার ছেলে পিনাক জীবদ্দশায় তার বাবার শহীদ মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেখে যেতে পারেনি। আমি যেন মৃত্যুর পূর্বে আমার স্বামী ও ভাসুরের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেখে যেতে পারি। এজন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃপাদৃষ্টি কামনা করছি। কুমুদিনী পালের একটাই কামনা, মরার আগে যেন শহীদ স্বামী ও ভাসুরের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলে।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র পালের বড় ছেলে ব্যবসায়ী প্রণয় পাল জানান, দেশ স্বাধীনের পর অনেক আবেদন নিবেদন করেও মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম অর্ন্তভূক্ত করাতে পারেননি। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও এখন পর্যন্ত আমার বাবা ও জেঠার নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় আজো গেজেটভুক্ত হয়নি। তিনি আরো বলেন, বাবার শহীদ হওয়ার স্বীকৃতি দেখে যেতে পারেননি আমার ছোট ভাই প্রমথ পাল পিনাক।
মৌলভীবাজার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার-২ যোদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মো: মাসুক মিয়া বলেন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শমশেরনগর বিমানবন্দর এলাকার ক্যাম্পে পাকসেনাদের হাতে নির্মম নির্যাতনের পর পাক সেনাদের গুলিতে শহীদ হন সোনাপুর গ্রামের প্রতাপ চন্দ্র পাল ও পিযুষ কান্তি পাল। তাদেরকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আজো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আমি তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশেকুল হক জানান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় চাহিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য শহীদ প্রতাপ চন্দ্র পাল ও পিযুষ কান্তি পাল এর বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই বাচাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।#
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply