স্মরণ : রিয়াদুল জান্নাতে বাবাহারা এক এতিমের কান্না স্মরণ : রিয়াদুল জান্নাতে বাবাহারা এক এতিমের কান্না – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
নিটার মিনিবার নাইট ফুটবল টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন এফসি ডার্ক নাইট একজন মেহেদী হাসান রিফাতের গল্প : স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে আত্রাইয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত কুলাউড়ায় অবৈধভাবে মাটি কাটার দায়ে ১ লাখ টাকা জরিমানা : ১৪ টি যানবাহন জব্দ কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবার খাসিয়াদের বর্ষবিদায় উৎসব “সেং কুটস্নেম” কুলাউড়া উপজেলা যুবলীগের সহ সভাপতি আটক কুলাউড়ার হাজিপুর ইউনিয়নে জিপিএ-৫ ও এ গ্রেড পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা রাজারহাটে ওয়ার্ল্ড ভিশনের আয়োজনে বাল্যবিবাহ বন্ধে সংলাপ কুড়িগ্রামে ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র মতবিনিময় কুলাউড়া জয়চন্ডীতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন মিলন বৈদ্য

স্মরণ : রিয়াদুল জান্নাতে বাবাহারা এক এতিমের কান্না

  • শনিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২১

আজিজুল ইসলাম ::

ঠিক এই দিনে বাবা অসুস্থ খবর পেয়ে আমি ছুটে যাই পবিত্র মদিনা শরীফের রিয়াদুল জান্নাতে। দুই রাকাত নামায আদায় করে প্রিয় নবীর রওজা পাককে সামনে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ ছিলো- আল্লাহ তুমি আমার বাবাকে আর কষ্ট দিও না। তোমার দরবারে, তোমার হাবিবের উছিলায় গুনাহগার এই বান্দার ফরিয়াদ তুমি কবুল করো। মনকে শক্ত করে বাবার উপর সকল দাবি দাওয়া ছেড়ে বেরিয়ে আসি।

এখানে বলে রাখা ভালো যারা মদিনা মনোয়ারায় গেছেন রিয়াদুল জান্নাতে যেতে হলে কয়েকটি ধাপে আটকে আটকে যেতে হয়। সবার সুযোগ করে দিতে এই নিয়ম। কিন্তু অবাক হলাম দেশ থেকে খবর পাওয়ার পর যোহরের নামাযান্তে যখন রিয়াদুল জান্নাতে প্রবেশ করতে চাইলাম, সেদিন কোন ব্যারিকেড ছিলো না। নামায শেষে ইচ্ছেমত দোয়া করে বেরিয়ে এলাম।

২২ জানুয়ারি ২০২০। মসজিদুল হারামে ফযরের নামায শেষে হোটেলে ফেরার পর মোবাইল ফোন অন করতেই ভাগনা সুমন ইন্টারনেটে ফোন দিয়ে বললো- মামা নানার শরীর খুব খারাপ। তুমি দেখো। সে ভিডিও কলে যখন দেখালো তখন মনে হলো বাবা যেন ফ্যাল ফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। কিছু যেন বলতে চাইছেন। এটাই ছিলো বাবাকে শেষ দেখা।

অথচ বাবার অসুস্থতা থেকে শুরু করে প্রায় আড়াই বছরই কাছে ছিলাম। অসুস্থ অবস্থায় মনে হতো, বাবা মরা গেলে আমি কি করে এমন কঠিন মুহুর্ত সইবো? আমার বুক যেন ফেটে যেতো এসব কল্পনা করে। যে কারণেই হয়তো এই কঠিন সময়ে আল্লাহর হাবিবের বাড়ির মেহমান হিসেবে কবুল করেন। কেন না আল্লাহর রাসুল (স.) এতিমদের সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন বলেই।
২০১৫ সালে পবিত্র উমরাহ পালন করবো বলে পাসপোর্ট জমা দেই। কিন্তু সেবার বয়স কম। অন্য মহিলার সাথে যেতে হয় বলে আমি রাজি হইনি। এরপর ৫ বছর আল্লাহর দরবারে নামাযান্তে প্রার্থণা ছিলো, আল্লাহ তোমার ঘরের মেহমান করো। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করলেন, সেই সাথে বাবাকে ডেকে নিলেন চিরতরে।

যেদিন বাড়ি থেকে পবিত্র মক্কা আর মদিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম, সেদিন আমার মনে একটা সংশয় ছিলো। ঠিক এক বছর আগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৩ দিন থেকে ফিরে আসলাম। কিন্তু এবার রওয়ানা হওয়ার আগে বলেছিলাম, যদি আমার ফিরে আসার আগে বাবাকে হারাই তবে যেনো সবাই যা ভালো মনে করেন তাই করেন।

২৩ জানুয়ারি সৌদি আরব সময় শেষ রাত সাড়ে ৩টায় উঠে বাথরুম সেরে অযু করে রেডি হলাম। কেননা তাহায্যুদের নামাযে যেতে হলে ৪টায় বের হতে হয়। মক্কা ও মদিনায় ৫ ওয়াক্ত ছাড়াও তাহায্যুদের নামাযেরও আযান হয়। রাত তখন ৪টা অযু করে কাপড় পরে ভাবলাম দেশে এখন ৭টা। রুমের বাকিরা এখনও জাগেনি। সেদিন আমি আগেই জেগেছিলাম। ভাবলাম বাবার অবস্থার খবরটা নেই। দেশে আমার স্ত্রীর কাছেই ফোন দিলাম।

টেলিফোন স্ত্রীকে কেমন আছো জিজ্ঞেস না করেই জানতে চাইলাম- আব্বা কি করছেন? ওপাশ থেকে কোন উত্তর না দিয়ে আমার স্ত্রী যখন হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো তখন আর বুঝতে বাকি নেই। আমি ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়ে খাঁটে বসে পড়লাম। কান্নার মাঝে শুধু এটুকুই বুঝলাম কিছুক্ষণ আগেই বাবা রাব্বে করিমের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আমার ইন্নালিল্লাহ পড়া শুনে রুমেই সবাই জেগে উঠলো। সবাই আমাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করার ফাঁকে সবাই রেডি হলো। রুমের সবাইসহ তাহায্যুদের নামায ও ফযরের নামায পড়তে মসজিদুল হারামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। নামায শেষে প্রিয় নবীজিকে সালাম দিতে গিয়ে বললাম, ওগো আল্লাহর রাসুল আপনি নাকি এতিমকে খুব আদর করতেন? দেখুন কিছুক্ষণ আগে আমি এতিম হয়েছি। এই এতিমের সালাম গ্রহণ করুন। এই সালাম জানানোর পর কুদরতি এক প্রশান্তি আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেলো।

হোটেলে ফিরে আমি ফোনে বাড়ির সবার সাথে কথা বললাম। জানাযা থেকে সব বিষয়ে। আমরা এক কাফেলায় যাওয়া বাকিরা বাবা হারানোর খবর শুনে সমবেদনা জানলো। আমি সৌদি আরবে থাকা দুই ভাগনাকে শেষ রাতে ম্যাসেজ দিয়েছিলাম। ওরাও ফোনে আমাকে বেশ শান্তনা দিলো।

দেশে বাদ আছর বাবার জানাযা হলো। তখন মদিনায় যোহর। ওখানে নামাযান্তে জানাযা হয় প্রতি ওয়াক্তেই। সেদিন জানাযাটা আমি বাবার গায়েবানা মনে করেই আদায় করি। যোহর থেকে আছর। আছরের পর মনটা খুব ব্যাকুল হলো। আমি মসজিদুল হারামের ভেতরে হাটতে থাকি, আর শান্তনা খোঁজে ফিরি। হঠাৎ শুনতে পেলাম এক জায়গায় বাংলায় ওয়াজ হচ্ছে। আমি আস্তে আস্তে সেখানে গেলাম। ওয়াজ শুনলাম। ওয়াজের বিষয়বস্তু ছিলো, কারো উছিলা নিয়ে দোয়া করলে আল্লাহ তা পছন্দ করেন।

ওয়াজ শেষ হলো। যিনি ওয়াজ করলেন তার পানে চেয়ে আছি। তিনি ইশারায় আমাকে ডেকে বললেন- কিছু বলতে চাই কিনা? তিনি মদিনা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। আমি আমার দু:খের কথা বলার পর বললেন- আপনি দুনিয়ার সবচেয়ে উত্তম জায়গায় আছেন। আওলাদ হিসেবে দোয়া করুন। আল্লাহ নিশ্চয়ই আপনার দোয়া কবুল করবেন। আমিও আপনার জন্য দোয়া করবো। এই বলেই বিদায় নিতেই মাগরিবের আযান।

এর দু’দিন পরে শুক্রবার মদিনা পর্ব শেষ করে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। একটি মসজিদে আমাদের গাড়ী থামলো। এখানে আমাদের মিকাত। এহরাম করতে হবে। এই মসজিদেই রাসুল (স:) এহরাম করে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন। আমরাও দু’রাকাত নামায পড়ে সাদা কাপড় পরে পবিত্র কাবা’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। সাদা কাপড় দু’টুকরো পরার পর বাবার কথা বড় বেশি মনে পড়লো। বাবা সাদা কাপড় পরে শেষ বিদায় নিয়েছেন। আমি সাদা কাপড় পরলাম রাব্বে কারিমের সান্নিধ্য লাভের জন্য। এভাবেই একদিন সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে আমাকেও দেয়া হবে শেষ বিদায়।

বাবাকে শেষ বিদায় জানাতে পারিনি। শেষ স্পর্শ হয়তো আমার ভাগ্যে জুটেনি। কিন্তু যেখান থেকে দোয়া কবুল হয় সেখান থেকে টানা ১০দিন রাব্বে করিমের কাছে কায়মনে বলেছি- আল্লাহ আমার বাবাকে তুমি মাফ করে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করো।

২৩ জানুয়ারি বাবার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী। জানিনা, বাবা আজ ছোট্র মাটির ঘরে কেমন আছেন? দাদাকে দেখিনি, তিনি গেছেন, বাবাও গেলেন। আমিও আসবো বাবা- সেদিন হয়তো খুব বেশি দুরে নয়…##

লেখক : সাংবাদিক, সভাপতি প্রেসক্লাব কুলাউড়া।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews