আব্দুর রব, বড়লেখা ::
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৯ বছর পর বড়লেখার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রব রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেলেন। ৩ ফেব্রুয়ারী জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৭০তম সভায় মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম এ সংগঠককে সরকারের শহীদ বেসামরিক গেজেটভুক্ত করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎস্বর্গকারী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রবকে যথাযত মূল্যায়ন করায় তার পরিবার ও বড়লেখা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রব বড়লেখা উপজেলার সফরপুর গ্রামের মৃত ইদ্রিছ আলীর ছেলে।
জানা গেছে, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রব। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যুবকদের সংগঠিত করে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়াসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। শেরপুরের প্রতিরোধ যুদ্ধে আনসার মুজাহিদদের সক্রিয়ভাবে সংগঠিত করেন। ১৮ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা রফিক উদ্দিন পাখিসহ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেনিংয়ের জন্য প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সংসদ সদস্য তৈমুছ আলীর জীপ গাড়িতে করে ভারতে নিয়ে যান। ৫ মে বিভিন্ন স্থানে মাইন পেতে নিজ বাড়িতে স্থানীয় যুবকদের একত্রিত হওয়ার নির্দেশ দেন। ভোরে তাদেরকে নিয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য বাড়ির দিকে রওয়ানা দেন। পথিমধ্যে রাজাকাররা তাকে ধরে জুড়ী ইউনিয়নের পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে ২২ দিন অমানবিক নির্যাতনের পর ২৬ মে ক্যাপ্টেন দাউদ তাকে গুলি করে হত্যা করে। এর অনেক দিন পর তার স্বজনরা লাশের বিভৎস কিছু অংশ এনে দক্ষিণভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পার্শে সমাহিত করেন।
বড়লেখা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন জানান, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রব ১৯৬৯ এর গণ আন্দোলন, ১৯৭০ এর সাধারণ নির্বাচন ও সর্বশেষ মহান মুক্তিযোদ্ধে গৌরবোজ্জল ভুমিকা পালন করেন। দেশের জন্য তিনি আত্মাহুতি দেন। তিনি অবিবাহিত হওয়ায় তাকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে সক্রিয়ভাবে কেউ উদ্যোগ নেননি। গত বছর তার ভাতিজা তোফায়েল আহমদ শাকিল মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে দরখাস্ত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ ফেব্রুয়ারী তাকে গেজেটভুক্ত করা হয়েছে। এতে তার স্বজনরা খুবই আনন্দিত। একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে যথাযত মূল্যায়ন করায় তিনি সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, জামুকার মহা-পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রবের ভাতিজা তোফায়েল আহমদ শাকিল জানান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় তার চাচাকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় তারা সবাই খুবই আনন্দিত।#
Leave a Reply