আব্দুর রব, বড়লেখা :
বড়লেখা উপজেলার বর্নি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এইচ. কনষ্ট্রাকশন সিডিউল বহির্ভুত নন-গ্রেড রড ব্যবহার করছে। রোববার সকালে স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সাইট ইঞ্জিনিয়ারের উপস্থিতিতে অনুমোদনহীন ও টেষ্ট রিপোর্ট ছাড়াই রড ও নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের প্রস্তুতিকালে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান। এসময় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান, বর্নি ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সাহাব উদ্দিন, ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিন, সহকারী স্বাস্থ্য প্রকৌশলী মনিরুল হক, ঠিকাদারের প্রতিনিধি ইকবাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, উপজেলার বর্নি ইউনিয়নে একটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এতে ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পায় ‘এইচ. কনষ্ট্রাকশন’ নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ৬ নভেম্বর প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন এমপি। এরপর স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্ট সাইট ইঞ্জিনিয়ারের যোগসাজসে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিভাগের ছাড়পত্রহীন ও সিডিউল বহির্ভুত রড ও নিম্নমানের ইট-বালু ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠে।
রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির দ্বিতীয় তলার ছাদে তিনটি ব্র্যান্ডের রড ব্যবহার করা হয়েছে। যার সবগুলোই নন- গ্রেড ও টেষ্ট রিপোর্টহীন। গ্রেড ভীমের উপরে ১০ ইঞ্চি গাথুনীতে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কলামের বেজ থেকে উপর পর্যন্ত ১৬ এমএম লোকাল নন-গ্রেড রড, সেফটিং ট্যাংকে তিন নম্বর ইট, সিলেকশন বালুর পরিবর্তে চিকন লোকাল বালু ব্যবহার করা হয়েছে। যার ফলে অল্প দিনেই ভবনটির ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।
সাইটে থাকা সহকারী স্বাস্থ্য প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ছাদে বিএসআই রড ব্যবহারের দাবী করলেও এ ব্যান্ডের একটি রডও তিনি দেখাতে পারেননি। রডের টেষ্ট রিপোর্ট দেখতে চাইলে এখনও পাননি জানিয়ে বলেন, সবকিছুতো রিপোর্টে হয়না। অভিজ্ঞতার আলোকেই করতে হয়। তিনি নির্মাণ কাজের গুনগত মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ের চেয়ে ঠিকাদারের সাফাই গাইতেই ব্যস্ত থাকেন।
ঠিকাদার ইকবাল হোসেন জানান, সাইট ইঞ্জিনিয়ার দেখেশুনেই মালামাল লাগাচ্ছেন। ইউএনও সাহেব রডের টেষ্ট রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত ঢালাই বন্ধ রাখতে বলায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শামীম আল ইমরান জানান, বর্নি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নির্মাণ কাজের অনিয়মের অভিযোগ পান। সরেজমিনে গিয়ে সত্যত্য পাওয়ায় তিনি দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (মৌলভীবাজার) সফিকুল ইসলাম পাঠান জানান, রোবাবার এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির দ্বিতীয় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কথা ছিল। বড়লেখার ইউএনও ছাদ ঢালাই কাজ পরিদর্শনে গিয়ে নিন্মমানের রড ব্যবহারের সত্যতা পেয়ে ঢালাই কাজ বন্ধ করে দেন। তিনিও ঠিকাদার ও সাইট ইঞ্জিনিয়ারকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। সিডিউল বহির্ভুত নিম্নমানের কোন মেটেরিয়েল লাগিয়ে থাকলে ঠিকাদারকে অবশ্যই তা অপসারণ করতে হবে। তিনি নিজে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।#
Leave a Reply