এইবেলা, জুড়ী :::
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার ফুলতলা চা বাগান ও এলবিনটিলা ফাঁড়ি বাগানের চা শ্রমিকরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাসুক আহমদের হুমকিতে আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন। যে কোনো সময় বাগান এলাকায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির আশংকা করা হচ্ছে। ইউপি চেয়ারম্যানের মামলা হামলা ও নানা হুমকির ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে বাগানবাসী।
শনিবার ১২ জুন বিকেলে ফুলতলা চা বাগানের ক্লাব ঘরে চা শ্রমিক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব অভিযোগ করেন। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামারু বোনার্জী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাগানের সেকশনের ভেতর দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুক আহমদ জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করতে চান। যেখানে রাস্তার কোন প্রয়োজন নেই বা এ রাস্তা ব্যবহার করার মত কোনো বাড়িঘর বা লোকজন নেই। সেকশনের ভিতরে মা-বোনেরা চা পাতা তুলতে অনেক সময় স্বল্প পোশাকে থাকে। এখানে রাস্তা করলে জনসমাগম বাড়বে। এতে আমাদের মা-বোনেরা হুমকির মুখে পড়বে। অথচ ফুলতলা চা বাগান এবং এলবিনটিলা ফাঁড়ি বাগানে কলোনী ও শ্রমিক চলাচলের জন্য জনগুরুত্বপূর্ন ১০/১৫টি রাস্তা রয়েছে। সে রাস্তায় চেয়ারম্যান কোনো কাজ করান না। চেয়ারম্যান বাগানের ছায়া বৃক্ষ ও বন বিভাগের গাছ পাচারের সুবিধার্থে অপ্রয়োজনে সেকশনের ভিতরে রাস্তা করতে চাচ্ছেন। শ্রমিক মা-বোনেরা রাস্তার কাজ করতে না দেয়ায় মাসুক চেয়ারম্যান ফুলতলা বাজারে জনসভা করে তিনি ও তার লোকজন চা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে হুমকি মূলক বক্তব্য রাখেন। রাস্তা ঘাট বন্ধ করে দেয়া, মামলা-হামলার ভয় দেখানো হয়। এ ধরনের বক্তব্যে দুই বাগানের হাজারো শ্রমিক আতংকে দিনযাপন করছেন।
এলবিনটিলা পঞ্চায়েত সেক্রেটারী সজল বোনার্জী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতার হাতে ফুলতলা, রাজকীর চা শ্রমিকরা নির্যাতিত, জিম্মি হয়ে আছে। ফুলতলা পঞ্চায়েত সভাপতি রবি বোনার্জী বলেন, শ্রমিকরা জীবন দেবে, তবুও অবৈধ রাস্তা করতে দেবে না। ফুলতলা চা বাগান ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের ইন্ধনে জুড়ী এলজিইডির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা বাগানের লিজ-দখলকৃত জায়গায় বাগানের অনুমতি ছাড়া সংরক্ষিত এলাকাকে প্রকল্পভুক্ত করে কিভাবে? যেখানে কোন মানুষের বসতি নেই এবং জনচলাচল হলে বাগান ও বাগানবাসীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, এমন জায়গায় অতিগোপনে সাড়ে ৫ কিলোমিটার জায়গা প্রকল্পভুক্ত করা হয়। অথচ বাগান কর্তৃপক্ষ জানেই না। বাগানের ম্যাপে কোন রাস্তা নেই। পাতি নিয়ে যাতায়াতের দুই ফুট জায়গাকে ৮ ফুট রাস্তা দেখানো হয়। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দফতর থেকে বার বার এখানে বরাদ্ধ আনেন। ইতিপূর্বে একবার এ রাস্তায় ইট সোলিং করা নিয়ে বাগানের সাথে চেয়ারম্যানের দ্বন্ধ হয়। গত ৮জুন চেয়ারম্যান পরিকল্পনা করে উনার অবৈধ লেবু বাগানে আগে থেকে স্বস্ত্রীক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অবস্থান নেন। এদিন কিছু শ্রমিক উল্লেখিত রাস্তায় কাজ করার জন্য ইট বালু নিয়ে গেলে বাগানের মহিলা শ্রমিকরা বাধা দিয়ে কাজ করতে দেয়নি। তখন ইউএনও স্যার লেবু বাগান থেকে বেরিয়ে আসলে শ্রমিকরা এখানে কাজ না করার কথা বলে। উনার সাথে কেহ খারাপ আচরণ করেনি। তাছাড়া উনি আমাকে না জানিয়েই বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থান করছিলেন। তিনি সরকারি কাজে বাধার কথা বলেছেন। চেয়ারম্যান প্রয়োজনীয় রাস্তা না করে অপ্রয়োজনে রাস্তা করবেন কার স্বার্থে? অপ্রয়োজনে বাগান অভ্যন্তরে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে বড় বড় কালভার্ট করে রেখেছেন কার স্বার্থে? উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হলে সব রহস্য বেরিয়ে আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাগানের সকল স্টাফ, পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, ইউপি সদস্য ও শ্রমিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল মতিন বলেন, সাগরনালের মানুষের রাজকীর সাথে যোগাযোগের সুবিধার্থে ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে রাস্তাটি এলজিইডির তালিকাভুক্ত হয়। তবে এ রাস্তায় এলজিইডির কোন প্রকল্প নেই। জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের প্রকল্প রয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষ না চাইলে এলজিইডি সেখানে কোনো প্রকল্প করবে না।
ফুলতলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুক আহমদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের বক্তব্য শতভাগ মিথ্যা। রাস্তাটি ২০১৭ সালের রেকর্ডভুক্ত। জেলা পরিষদ ও এলজিএসপি থেকে ইতিপূর্বে রাস্তায় কাজ হয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষ রাস্তা নষ্ট করে সরকারের কোটি টাকা ক্ষতি করেছে।#
Leave a Reply