এইবেলা ডেস্ক ::
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্প একনেকে উত্থাপন হলে সেটি দ্রুত অনুমোদনের বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা বিষয়ে রাজধানীতে জাতীয় পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর মতো ভয়াবহ সমস্যা স্থায়িত্বশীল সমাধানের লক্ষ্যে গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংগঠনসহ সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করতে সরকার আন্তরিক।
গণমাধ্যম উন্নয়ন সংগঠন সমষ্টি গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) এর সহযোগিতায় এ আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন আজকের পত্রিকার সম্পাদক ও সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ এমপি, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী এবং জিএইচএআই-এর বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস। জিএইচএআই আঞ্চলিক পরিচালক বন্দনা সাহা এতে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন। সভায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গসহ সাংবাদিকরা আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু বিষয়ক সাংবাদিকতার ফেলোশিপ অর্জনকারী প্রথম আলোর পার্থ শংকর সাহা, সমকালের জাহিদুর রহমান ও ডেইলি স্টারের নীলিমা জাহানকে সম্মামনা স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।
সভায় স্বাগত বক্তৃতা করেন সমষ্টির পরিচালক মীর মাসরুর জামান। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু বিষয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেন জিএইচআই-এর কমিউনিকেশন ম্যানেজার সরওয়ার-ই-আলম এবং এ বিষয়ে গণমাধ্যমের তৎপরতা নিয়ে আলোচনা করেন সমষ্টির গবেষণা পরিচাল রেজাউল হক । আলোচনা করেন, প্রভাস আমিন, শাহনাজ মুন্নি, বায়েজিদ মিলকি, নাদিরা কিরণ, রুহুল আমীন রুশদ, গোলাম সাহনীসহ সিনিয়র সাংবাদিকরা। সমষ্টি’র কর্মসূচি পরিচালক মীর সাহিদুল আলম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে মেহের আফরোজ চুমকি এমপি বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়টি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে আছে এবং শিশু একাডেমীর সহযোগিতায় আমরা একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেছি। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠন ও কর্মীর মাধ্যমে এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভবিষ্যতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমকে তৎপর হওয়ার আহ্বান জানান।
রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য। এ নিয়ে বাংলাদেশ বৈশ্বিকভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। পানিতে ডোবা প্রতিরোধ অনেক চ্যালেঞ্জিং। সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমসহ অন্যান্য পক্ষ সমন্বিভাবে কাজ করলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে সংবাদপত্র ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে ২০২০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এ সময়ে প্রকাশিত ১ হাজার ৪২৬টি ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসব ঘটনায় ৬৪ জেলায় ২ হাজার ১৫৫ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যায়। মৃতদের ৮৩ শতাংশ শিশু। সমষ্টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনা থেকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সাধারণত পানিতে ডুবে মৃত্যুর বেশির ভাগ ঘটনা গণমাধ্যমে উঠে আসে না। গণমাধ্যমের রিপোর্টের সঙ্গে পাঁচটি উপজেলা থেকে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ-এর ২০২১ সালের ১ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে সরাসরি সংগৃহীত তথ্য তুলনা করে দেখা গেছে, মোট মৃত্যুর শতকরা ৪৭ ভাগ পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এ সময়ে চাঁদপুর জেলার সদর, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি ও পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় পানিতে ডুবে ৫১ জন মারা যায়। এর মধ্যে মাত্র ২৪টি মৃত্যু নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৯৭ জন, ঢাকা বিভাগে ৪৩৮ জন, রাজশাহীতে ২৭০, রংপুরে ২৫২, ময়মনসিংহে ২৩০, বরিশালে ১৮৬, খুলনায় ১৫৮ জন ও সিলেট বিভাগে ১২৪ জন মারা যায়। গত দুই বছরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায় নেত্রকোনায় ৯১ জন। পরবর্তী স্থানগুলোতে রয়েছে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও কুড়িগ্রাম জেলা। এসব জেলায় যথাক্রমে ৮১,৭৩ ও ৬৯ জন মারা যায়।
গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণে দেখা যায়, পানিতে ডুবে মৃতদের মধ্যে চার বছর বা কম বয়সী ৮৫৭ জন, ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী ৬৫৫ জন, ১০-১৪ বছরের ২১২ জন এবং ১৫-১৮ বছরের ৭৩ জন। ৩৫৮ জনের বয়স ছিল ১৮ বছরের বেশি। এ সময়ে ১৭১টি পরিবার একাধিক স্বজন হারায়। এসব পরিবারের ৩৪৩ জন সদস্য পানিতে ডুবে মারা যায়।
পানিতে ডুবে নিহতদের মধ্যে ৮০১ জন নারী। এদের মধ্যে কন্যা শিশু ৭১৭ জন। পুরুষ মারা যায় ১ হাজার ৩১১ জন, যাদের মধ্যে ১ হাজার ৫৭ জন শিশু। প্রকাশিত সংবাদ থেকে ৪৩ জনের লৈঙ্গিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দিনের প্রথম ভাগে অর্থাৎ সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ৮৮২ জন এবং দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগে ৮১০ জন মারা যায়। এছাড়া সন্ধ্যায় ৩৯৫ জন মারা যায়। ৫৬ জন রাতের বেলায় পানিতে ডোবে। ১২ জনের মৃত্যুর সময় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত ২৪ মাসের হিসাবে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আগস্ট মাসে। দু বছরে এ মাসে যথাক্রমে ১৭১ ও ২১২ জন পানিতে ডুবে মারা যায়। এছাড়া জুলাই মাসে যথাক্রমে ১৬৩ ও ১৫৭ জন এবং জুন মাসে যথাক্রমে ৯১ ও ১৪২ জনের মৃত্যুর খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে গত ২৪ মাসে ১ হাজার ৮৯৪ জন কোনো না কোনো ভাবে পানির সংস্পর্শে এসে ডুবে যায়। ২০৬ জন মারা যায় নৌযান দুর্ঘটনায়। পানিতে ডুবে মৃতদের মধ্যে ৫৫ জন বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়।
পরিবারের সদস্যদের যথাযথ নজরাদারি না থাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পানিতে ডোবার ঘটনা ঘটে (৮৯%)। অধিকাংশ শিশু বড়দের অগোচরে বাড়ি সংলগ্ন পুকুর বা অন্য জলাশয়ে চলে যায় এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে প্রকাশিত প্রিভেন্টিং ড্রাওনিং: অ্যান ইমপ্লিমেন্টেশন গাইডে স্থানীয় পর্যায়ের মানুষজনকে সম্পৃক্ত করে দিবাযতœ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। এছাড়া পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি ও জাতীয়ভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করার উপরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সুপারিশ করেছে।#
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085
Leave a Reply