এইবেলা ডেস্ক :: শিশুর সার্বিক বিকাশের জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা বিশেষত স্বাস্থ্য-পুষ্টি, সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও শিক্ষা শিশুদের বেঁচে থাকা ও পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপর্যাপ্ত শিশু-যত্ন, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশের অনেক শিশু তাদের পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সফল হয়েছে, ঠিক সেভাবেই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ ও সুরক্ষায় বিশ্বে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কাজ করে চলেছে।
১২ জুন ঢাকার স্থানীয় এক হোটেলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু-যত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মহিলা ও শিশুদের উন্নয়ন শেখ হাসিনা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। শিশু সুরক্ষায় এই প্রকল্পটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। আমরা আশা করি প্রকল্পটির সাফল্য নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোকে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে পথ দেখাবে।”
তিনি আরো বলেন, “শুধুমাত্র সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এককভাবে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারবে না। পকল্পের সাফল্যের জন্য এই মন্ত্রণালয় ছাড়াও সরকারের স্বাস্থ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার ও সমাজকল্যাণসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।”
সমাজভিত্তিক সমন্বিত প্রাক-শৈশব বিকাশ (ইসিসিডি) সেবা প্রদানসহ শিশু সুরক্ষায় এ প্রকল্পটি ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ একনেকে অনুমোদিত হয়। জানুয়ারি ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭১.৮২ কোটি টাকা যার ৮০% বহন করবে বাংলাদেশ সরকার এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বহন করবে ২০%। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সার্বিক দিক-নির্দেশনায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমির কেন্দ্রীয় ও জেলা শাখার তত্ত্বাবধানে দেশের ১৬টি জেলায় শিশুয্ত্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ স্থানীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ের এনজিওদের মাধ্যমে প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্টভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিজ এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, “প্রকল্পটি সামগ্রিকভাবে শিশু বিকাশের ধারণায় আমূল পরিবর্তন বয়ে আনবে। প্রকল্পটি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য একটি বিনিয়োগ, যা শিশুদের জীবনের শক্ত ভিত রচনায় অবদান রাখার পাশাপাশি তাদের পরিবারকে শিশুর যথাযথ লালন-পালনে অভ্যস্ত করে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।”
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট নাট্যজন লাকী ইনাম বলেন, “বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ প্রদানসহ শিশুর বিকাশ এবং সুরক্ষায় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্পটির মাধ্যমে শিশু সুরক্ষা এবং বিকাশে গ্রামীণ পর্যায়ে কাজ করার শুভ সূচনা হলো।”
ব্লুমবার্র্গ ফিলানথ্রোপিজের পরিচালক কেলী লারসন বলেন, “ব্লুমবার্র্গ ফিলানথ্রোপিজ ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে শিশুদের সুরক্ষায়, বিশেষতঃ অনাকাংখিত আঘাতজনিত মৃত্যু প্রতিরোধে একটি কার্যকর মডেল উদ্ভাবনে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশ সরকার সমাজভিত্তিক শিশু-যত্ন কেন্দ্র মডেলকে গ্রহণ করায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। শিশু-যত্ন কেন্দ্রগুলোর সমন্বিত কার্যক্রমে শিশুর সামগ্রিক বিকাশ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য ২০৩০ অর্জনে অবদান রাখবে। বাংলাদেশ সরকারের এ কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পেরে আমরা গর্বিত”।
যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশনের হেড অব ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামস্ স্টিভ উইলস অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে বলেন, “শুধুমাত্র দেশেই নয় বরং বৈশ্বিক নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই”।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনারগোসের প্রোগ্রাম পরিচালক চং-লিম লি, বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি মাহমুদা আকতার এবং সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ এর উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. আমিনুর রহমান। বক্তারা বাংলাদেশে অল্প বয়সী শিশুদের যতœ, বিকাশ এবং সুরক্ষায় সরকারের উদ্যোগের সাধুবাদ জানান এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারকে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশু-মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৫ জনে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারিত থাকায় এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জনে পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ জরুরি। এই প্রকল্পের সাফল্য এসডিজি’র কয়েকটি সূচকে এগিয়ে যাওয়াকে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, যেমন-পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশু মৃত্যু ও অপুষ্টি হ্রাস, গুনগতমানের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ নিশ্চিতকরণ এবং মহিলাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়ন।#
Leave a Reply