কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি :: চা বাগান শ্রমিকরা দীর্ঘ ১৯ দিন ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনায় ১৭০ টাকা মজুরিতেই রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার অনেক চা বাগানে কাজে ফিরছেন চা শ্রমিকরা। গত শনিবার (২৭ আগষ্ট) প্রধানমন্ত্রীর সাথে চা বাগান মালিক পক্ষের বৈঠক শেষে ১২০ টাকার মজুরির পরিবর্তে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারন করা হয়।
রোববার ২৮ আগষ্ট দুপুরে সরেজমিন কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর, ফুলবাড়ি, পাত্রখোলা, শ্রীগোবিন্দপুর, মদনমোহনপুর চা বাগান ঘুরে দেখা যায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রোববার কাজে ফিরছেন চা শ্রমিকরা। তবে পদ্মছড়া, আলীনগর, শমশেরনগর চা বাগানসহ বেশ কয়েকটি চা বাগানের শ্রমিকরা এখনো কাজে ফিরেনি।
ফুলবাড়ি চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি মনোরঞ্জন পাল বলেন, ‘আজকে রোববার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন হওয়ায় আমরা চা শ্রমিকরা কাজে যাইনি, সোমবার সবাই কাজে ফিরবে বলে জানান তিনি।’
শ্রীগোবিন্দপুর চা বাগানের শ্রমিক জমিলা খাতুন, জুলেখা খাতুন ও হেমন্তী দেববংশী জানান, ‘দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ করে মজুরি বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করছি, হাতে টাকা পয়সা নেই, খুব কষ্টে দিন যাপন করছি, আজকে (রোববার) কাজে এসেছি সাপ্তাহিক কাজের মজুরি বুধবারে পাবো। এখন কিভাবে ভাত খাবো সেই চিন্তায় আছি। তবে ৫০ টাকা মজুরি বৃদ্ধি করায় চা শ্রমিকরা খুশি হয়েছেন।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি ও ইউপি সদস্য বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সাধারণ চা শ্রমিকেরা আজ রোববার থেকে কাজে যোগ দিয়েছে। দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নিয়েছে। আমাদের ভ্যালির অন্তর্গত ২৩টি চা বাগানের পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দকেও শ্রমিকদের কাজে যোগদানের বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
উল্লেখ্য, দেশের ১৬৭টি চা-বাগানে শ্রমিকের সংখ্যা দেড় লাখেরও বেশি। বর্তমানে দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন শ্রমিকরা। গত ৯ আগস্ট এ আন্দোলন শুরু হয়। শুরুতে প্রথম কয়েকদিন কেবল ৪ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হয়। সে সময় মজুরি বৃদ্ধি ও মজুরি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর পক্ষ থেকে বাগান মালিকদের সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু মালিক পক্ষ এ সময়ের মধ্যে বৈঠক বা সমঝোতায় না আসায় ১৩ আগস্ট থেকে লাগাতার পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সমাধান হচ্ছিল না। সর্বশেষ ২৭ আগস্ট রাতে প্রধানমন্ত্রী বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নতুন মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেন। এরপরে কাজে ফেরার আশ্বাস দেন চা-শ্রমিকরা।#
Leave a Reply