চা শ্রমিক- খাসিয়াদের মধ্যে উত্তেজনা
এইবেলা, কুলাউড়া :: কুলাউড়া উপজেলার রেহানা চা বাগানের সেকশনের মধ্য দিয়ে চা গাছ বিনষ্ট করে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ করেছে বাগান কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে গত ৬দিন থেকে বাগানের চা শ্রমিক ও খাসিয়াদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের চেষ্টাকালে সহস্রাধিক চা গাছ উপড়ে ফেলায় বাগানের ২ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বাগান কর্তৃপক্ষ দাবি করে।
রাস্তা নির্মাণ নিয়ে ইতিপূর্বে দু’পক্ষে উত্তেজনা দেখা দিলে প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে যেকোন এনিয়ে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। ইস্টার সানডের অযুহাত দিয়ে খাসিয়ারা বিরোধকুৃত রাস্তা দিয়ে জোরপূর্বক চলাচল করতে চায়।
সরেজমিন রেহানা চা বাগানে গেলে স্থানীয় লোকজন ও বাগান কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেন, গত ২২ মার্চ কাকড়াছড়া পুঞ্জির খাসিয়ারা ভাড়াটে লোকজন নিয়ে রেহানা চা বাগানের ১৪ নং সেকশনের ভেতর দিয়ে সহ¯্রাধিক চা গাছ বিনষ্ট করে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ শুরু করে। বিষয়টি জানতে পেওে চা শ্রমিকরা বাঁধা দেয়। এসয় উভয়পক্ষে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরদিন ২৩ মার্চ ফের খাসিয়ারা বিভিন্ন পুঞ্জি থেকে আরও লোকজন জড়ো করে রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু করে। এসময় শ্রমিকরা বাঁধা দেয়। এতে খাসিয়ারা বাগান শ্রমিকের উপর হামলা চালায়। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা এসময় বাগানে পাগলা ঘন্টি বাজিয়ে খাসিয়াদের ধাওয়া করে। এতে উভয়পক্ষে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে কুলাউড়ার সহকারি কমিশনার (ভুমি) মেহেদি হাসান ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
রেহানা চা বাগান ম্যানেজার একে আজাদ জানান, সরকারের কাছ থেকে ৫শ একর জায়গা লীজ নিয়ে চা চাষ করে আসছে রেহানা চা বাগান কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে কাকড়াছড়া মৌজায় বাগান কর্তৃপক্ষ পল খাসিয়াসহ ৩-৪ টি পরিবারকে পাহারাদার হিসেবে নিয়োগ দেয়। তারা বাগানের অভ্যন্তরে এবং বাগানের লীজকৃত জায়গায় বসবাস করছে। প্রথমে ৩-৪ টি পরিবার থাকলেও বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এনে বর্তমানে তারা কাকড়াছড়া পুঞ্জি নাম দিয়ে ২১ পরিবার বসবাস করছে বলে দাবি করে। পার্শ্ববর্তী গাজীপুর থেকে সাতির ও সিদ্দিক নামক দু’ব্যক্তিকে দিয়ে বাগানের জায়গা দখল করে পানের জুম গড়ে তুলেছে। তাদের ছত্রছায়ায় খাসিয়ারা বর্তমানে এই জমির মালিকানা দাবি করছে। এতদিন কোম্পানী বাংলোর পেছনের রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে বিনা বাধায়। কিন্তু হঠাৎ করে গত ২২ মার্চ ১৪ নং সেকশনের সরু রাস্তা (পাতি ওয়ালা যাওয়া আসা ও কর্তৃপক্ষের তদারকির রাস্তা) হঠাৎ করে পল খাসিয়া জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চালায়। রাস্তা নির্মাণের নামে বাগানের সহ¯্রাধিক চা গাছ উপড়ে ফেলে। এতে বাগানের ২ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।আমরা কোনভাবে খাসিয়াদের সেই রাস্তা ব্যবহারের অনুমতি দেবো না। অনুমতি দিলে বাগানের নিরাপত্তা বিঘিœত হবে। সেখানে ইতোমধ্যে চা গাছের চারা রোপন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এব্যাপারে কাকড়াছড়া পুঞ্জির হেডম্যান জন পল খাসিয়া জানান, যে রাস্তা দিয়ে বর্তমানে চলাচল করে থাকি সেই রাস্তা দিয়ে বৃদ্ধ ও অসুস্থ লোকজন চলাচলে কষ্ট হয়। তাই বাগানের সেকশনের মধ্য দিয়ে নতুন রাস্তা নির্মাণ করতে গেলে উত্তেজনা দেখা দেয়। বাগান কর্তৃপক্ষ রাস্তাটি বন্ধ করে চা রোপন করে।
এব্যাপারে কুলাউড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান জানান, বাগানের অনুমতি না নিয়ে রাস্তা নির্মাণের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমরা দু’পক্ষকে নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠক করে আসছি। খাসিয়াদের পুরাতন রাস্তা ব্যবহারের জন্য বলেছি। পরিস্থিতি শান্ত রাখার স্বার্থে উভয় পক্ষকে বলেছি। খাসিয়ারা যাতে ইস্টার সানডে উদযাপন করতে পাওে সেজন্য বাগান কর্তৃপক্ষকে বলেছি।
এব্যাপারে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহমুদুর রহমান খোন্দকার জানান, উভয় পক্ষে উত্তেজনা দিলে এসি ল্যান্ড ঘটনাস্থলে যান। রমযান পরে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।##
Leave a Reply