এইবেলা, বড়লেখা :
বড়লেখার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আল্লাদাদ চা বাগান কর্তৃক বেরেঙ্গা খাসিয়াপুঞ্জির চারটি পানজুমের ৩ হাজার পান গাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলার প্রতিবাদে এবং এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে খাসিয়ারা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। বড়লেখা ইন্ডিজিনাস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরামের ব্যানারে রোববার (১৪ মে) বেলা আড়াইটায় উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর বাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা চত্বর এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বেরেঙ্গা খাসিয়াপুঞ্জির বাসিন্দাসহ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের দুই শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে স্থানীয় উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ, বড়লেখা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা সংহতি জানান। তারা এই ঘটনায় উদ্বেগ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
মানববন্ধন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ক্ষতিগ্রস্ত পানজুমের মালিক আদিবাসী অলমি খাসিয়া। বড়লেখা ইন্ডিজেনিয়াস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ শর্মার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ, বড়লেখা প্রেসক্লাবের সভাপতি অসিত রঞ্জন দাস, ইউপি সদস্য ইসলাম উদ্দিন মন্টু, মাসুক উদ্দিন, আখলিম উদ্দিন, যুবলীগ নেতা এনামুল হক, নান্টু মারা, রাজেশ প¯œা, ইন্ডিজেনিয়াস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরামের প্রচার সম্পাদক পাইলট মারলিয়া, শিক্ষার্থী স্টেফানিয়া চেল্লা, সন্তোষ পতাম, ওলমি খাসিয়া, মেলেট খাসিয়া, সুজাতা খাসিয়া প্রমুখ।
মানববন্ধন সমাবেশে ক্ষতিগ্রস্ত খাসিয়ারা বলেন, পান ও সুপারি গাছ কাটার ঘটনার অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. রবিউল হক আমাদের অসহযোগিতা করছেন। তিনি চা বাগানের লোকজনকে বাঁচানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত।
বড়লেখা ইন্ডিজেনিয়াস পিপলস ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রসেনজিৎ শর্মা বলেন, ‘বিনা অনুমতিতে জুমে ঢুকে পান ও সুপারি গাছ কাটার পর আমরা থানায় অভিযোগ দেই। এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পান শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ। কিন্তু তিনি আমাদের অসহযোগিতা করছেন। দায়সারা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। পান ও সুপারী গাছ কেটে ফেলে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি।’
ক্ষতিগ্রস্ত পানজুমের মালিক অলমি খাসিয়া বলেন, ‘আমরা অসহায় হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছি। বাগান আমাদের পান ও সুপারি গাছ কেটে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে। লোন নিয়ে আমরা জুম করেছিলাম। আমাদের হুমকিও দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা দাবি জানাই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তা যেন পাই।’
উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘খাসিয়ারা শান্তিপ্রিয়। তাদের জুমের পান ও সুপারি গাছ কাটা চরম অন্যায় হয়েছে। এরকম ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হলে একের পর এক ঘটনা বাড়বে। আমরা সকলেই এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বড়লেখা প্রেসক্লাবের সভাপতি অসিত রঞ্জন দাস বলেন, ‘পান ও সুপারি গাছ কাটায় খাসিয়ারা জীবিকা হারানোর আশঙ্কা করছেন। এ ঘটনায় দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই।’
এ ব্যাপারে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ও শাহবাজপুর তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. রবিউল হক বলেন, ‘এখানে অধর্তব্য অপরাধ হয়েছে। তাই দÐবিধির ৪২৭ ও ৫০৬ ধারায় নন এফআইআর প্রসিকিউসন দাখিলের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়েছি।’
তবে মৌলভীবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট সুবিমল লিন্দকিরি বলেন, ‘বেরেঙ্গা খাসিয়াপুঞ্জির চারটি পানজুমে অনধিকার প্রবেশ করে গাছ কাটার ঘটনায় এফআইআর (মামলা রেকর্ডের) নেওয়ার মতো যথেষ্ট উপদান রয়েছে। কিন্তু মামলা না নিয়ে নন এফআইআর প্রসিকিউসন দাখিলের অনুমতি চাওয়াটা রহস্যজনক।’
উল্লেখ্য, গত সোমবার (০৮ মে) আল্লাদাদ চা বাগান ব্যবস্থাপক কর্তৃক বেরেঙ্গা খাসিয়াপুঞ্জির চারটি পানজুমের ৩ হাজার পান গাছ ও ৬০টি সুপারি গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় চা বাগানের ম্যানেজার সিরাজ উদ্দিন, পাহারাদার নূর উদ্দিন ও আব্দুস সামাদের নামোল্লেখ ও আরো ১০-১২ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে বড়লেখা থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত খাসিয়াদের পক্ষে অলমি খাসিয়া এই অভিযোগ দেন।
Leave a Reply