এইবেলা, কুলাউড়া :: কুলাউড়া উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড পাঁচপীর জ্বালাই (১০ নম্বর) এলাকায় খাস টিলা কেটে দেদারসে মাটি বিক্রি করছে একটি সংঘবদ্ধচক্র। প্রায় ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু টিলা কেটে একেবারে সমতলে পরিণত করা হচ্ছে। এতে ভূমি শ্রেণি পরিবর্তণের পাশাপাশি বিরূপ প্রভাব পড়বে পরিবেশের উপর। যেকোন সময় ভয়াবহ টিলা ধ্বসেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের পাঁচপীর জ্বালাই। এলাকায় সম্প্রতি স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধচক্র ওই এলাকার ১০নম্বর নামক স্থানে রাস্তার পাশের সরকারি খাস টিলা কেটে দেদারসে মাটি বিক্রি করছে। ১৫-২০ ফুট উঁচু টিলা কেটে একেবারে রাস্তার সমান সমতলে পরিণত করছে। এসব মাটি কাটা স্থান থেকে যে পাথর বের হয়, সেগুলো আলাদা করে বিক্রি করছে আরেকটি চক্র। পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করেই এখানে চলছে টিলা কাটার মহোৎসব। যেন দেখার কেউ নেই।
পাঁচপীর জ্বালাই এলাকার বাসিন্দা দুলাল আহমদ, গনি মিয়া, পারভেজ মিয়া, কনর মিয়াসহ অনেকেই জানান, প্রতিদিন মধ্যরাতের পরেই স্থানীয়দের সহযোগিতায় পার্শ্ববর্তী এলাকার ২-৩ জন ট্রাক চালক ওই ১০ নম্বর টিলা থেকে মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করছেন। প্রতিবাদ করলেই সাধারণ লোকজনকে হুমকি-ধমকি দেয় মাটি খেকো চক্র। যার ভয়ে অনেকেই কথা বলতে সাহস করেন না। মাটি বহনকারী ট্রাকের কারণে রাস্তাটি অল্প দিনেই ভেঙেচুরে যাচ্ছে। যেভাবে টিলা ধ্বসে পড়া শুরু হয়েছে, তাতে যে কোন সময় এই রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর এই রাস্তাাটি বন্ধ হয়ে গেলে অত্রাঞ্চলের লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়বেন। তাছাড়া টিলার ঠিক পাশেই রয়েছে একটি মসজিদ। টিলা ধ্বসে মসজিদেরও ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন লোক জানান, ১০ নম্বর এলাকার বাসিন্দা চাঁন মিয়ার নেতৃত্বে এই টিলা কেটে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। মাটি বিক্রির টাকা থেকে কুলাউড়া থানার দু’জন পুলিশ কর্মকর্তাও ভাগ পেয়ে থাকেন। গত দু’মাস আগে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে দু’জন পুলিশ সদস্য সিভিল ড্রেসে এসে টিলার মাটিসহ একটি গাড়ি বিজয়া বাজারের পাশে আটক করেন। পরে ৩০ হাজার টাকায় দফারফা হওয়ায় গাড়িটি ছাড়া হয়। এরপর থেকে সকলের সমন্বিত বন্টনের মাধ্যমে টিলা কেটে দেদারসে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।
বিজয়া চা বাগানের কয়েকজন শ্রমিক জানান, পাঁচপীর জ্বালাইর রাস্তাটি তাদের বাগানের মধ্যখান দিয়েই গেছে। প্রায়ই রাত ১ থেকে ৩ টা পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের মুহুর্মুহু শব্দ শোনা যায়। মাটিও, বালু এবং গাছও বহন করা হয় এসব গাড়িতে করে। যারা বাগান এলাকায় রাতের পাহারায় থাকেন, তারা সবই দেখেন এবং সবাইকে চেনেন। কিন্তু বাগানের সাধারণ শ্রমিক হওয়ায় কারো নাম মুখে প্রকাশ করেন না। সবার মনে যেন এক চাপা ভয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য মো: মনু মিয়া জানান, কিছু ড্রাইভার এখান থেকে গাড়ী দিয়ে মাটি বিক্রি করে। এদেরকে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জয়চন্ডী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রব মাহাবুব জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরা জরুরি বৈঠক করেছি। রাস্তার একটি গেইট নির্মাণ করে ট্রাক চলাচল বন্ধ করে দিতে বলেছি। তারপরও যদি বন্ধ না হয়, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান জানান, বিষয়টি আার জানা নাই। খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।#
Leave a Reply