এইবেলা, কুলাউড়া :: কুলাউড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র তানভীর আহমদ শাওন (৫০) গত ৩দিন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাঁর স্ত্রী ইয়াছমিন সুলতানা চৌধুরী (৪৪) নারী নির্যাতন, যৌতুক দাবি, পরকিয়ার অভিযোগ এনে গত ১৭ আগস্ট কুলাউড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
থানায় দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়, কুলাউড়া পৌর এলাকার উত্তর মাগুরা এলাকার বাসিন্দা মৃত খলিল উদ্দিন আহমদের ছেলে প্যানেল মেয়র ও ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাওনের সঙ্গে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানার নরপতি গ্রামের মৃত আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরীর মেয়ে ইয়াছমিন সুলতানা চৌধুরীর বিয়ে হয় ২০০৫ সালের ২৬ আগস্ট। তাদের ২ মেয়ে ও ১ ছেলে সন্তান রয়েছে। বাসা নির্মাণের জন্য শাওন তার স্ত্রীর কাছ থেকে যৌতুক হিসেবে ৬০ লাখ টাকা নেন। এরপরও নির্বাচনসহ বিভিন্ন অজুহাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন শাওন।
এমনি পরিস্থিতিতে কয়েক বছর ধরে পার্শ্ববর্তী কমলগঞ্জ উপজেলায় শমশেরনগর বিএএফ শাহিন স্কুলে সন্তানদের পড়ালেখার জন্য ভাড়া বাসা নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করেন মাওনের স্ত্রী ইয়াছমিন সুলতানা চৌধুরী। শাওনের নিজস্ব বাসায় ক্যাবল নেটওর্য়াকে ব্যবসা রয়েছে। সেই ব্যবসা পরিচালনায় শাওন অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন ছায়েরা আক্তার নামক এক মহিলাকে। স্ত্রী ও সন্তানরা বাসায় না থাকার সুবাধে অফিস সহকারি ছায়েরার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন শাওন। পরে বিষয়টি শাওনের স্ত্রী জানতে পারলে উল্টো যৌতুক দাবি করেন এবং সেটা না দিলে ছায়েরাকে বিয়ে করে ইয়াছমিনকে তালাক দেয়ার হুমকি দেন।
গত ১৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় ইয়াছমিন সন্তানদের নিয়ে বাসায় প্রবেশ করতে চাইলে বাঁধা দেন শাওন। পরে তিনি পুলিশসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সন্তানদের নিয়ে বাসায় প্রবেশ করেন। এরপর শাওন ও তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী ছায়েরা মিলে ইয়াছমিনকে ঘরে আটকে নির্যাতন করেন। ১৭ আগস্ট ইয়াছমিনের মা এসে তাকে উদ্ধার করে কুলাউড়া হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান।
এ বিষয়ে ইয়াছমিন সুলতানা চৌধুরী জানান, আমি সন্তানদের পড়াশোনার জন্য শমসেরনগরে থাকতাম। সেই সুযোগে ছায়েরার সঙ্গে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন শাওন। আমার অনুমতি ছাড়া শাওন দ্বিতীয় বিয়ে করেন। পরকিয়া আসক্ত হওয়ার পর থেকে কারণে অকারণে নির্যাতন চালান শাওন।
ইয়াছমিন সুলতানা চৌধুরীর দায়ের করা মামলায় প্যানেল মেয়র তানভীর আহমদ শাওন ছাড়াও আসামি করা হয়েছে সিলেটের বিয়ানীবাজারের চক্রবানী গ্রামের বাসিন্দা মৃত ময়ুর আলীর মেয়ে ও কাতার প্রবাসী আবু শাহজানের স্ত্রী ছায়েরা আক্তারকে (৩৮)। সায়রা বর্তমানে শাওনের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কুলাউড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলার তানভীর আহমদ শাওন জানান, ইয়াছমিন সুলতানা চৌধুরী আমার বউ নয়। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী। আমি তাকে আইনী প্রক্রিয়ায় ছেড়ে দিয়েছি। ভরণপোষনসহ সন্তানরা তার কাছে থাকবে। এখন তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বাসায় জোর করে উঠতে চায়।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুছ ছালেক জানান, যৌতুক ও নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে মামলা হয়েছে শাওনের বিরুদ্ধে। শাওন ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।#
Leave a Reply