বড়লেখা প্রতিনিধি ::
বড়লেখায় রাজমিস্ত্রী রিয়াজ উদ্দিনকে (৩০) নৃশংসভাবে খুনের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে (রিমান্ড) থাকা ৫ আসামির মধ্যে প্রধান আসামী সিরাজুল ইসলাম ওরফে ইমন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হকের আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ইমন।
এরপর আদালত ইমনসহ ৫ আসামীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরআগে সকালে ৩ দিনের রিমান্ড শেষ হওয়া চার আসামি ও ৪ দিনের রিমান্ডে থাকা সিরাজুল ইসলাম ওরফে ইমনকে বড়লেখা আদালতে হাজির করেন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বড়লেখা থানার এসআই মো. মাসুদ পারভেজ জমাদার। তখন ঘটনার সাথে নিজের সম্পৃক্ততাসহ জড়িতদের নাম উল্লেখ করে আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয় ইমন।
গ্রেফতার আসামীরা হলেন- আজমিরীগঞ্জের সিরাজুল ইসলাম ওরফে ইমন (৩০), মো. আলমগীর মিয়া (২৮), মো. শাহ আলী (৪০), মো. আসাবুল (২১) ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নাসিরনগরের মো. হুমায়ুন (৩১)। তারা সকলে বড়লেখায় ভাঙ্গারি ব্যবসার সাথে যুক্ত। বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়ারদৌস হাসান বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওসি বলেন, ‘হত্যার সাথে নিজের সম্পৃক্ততাসহ জড়িতদের নাম উল্লেখ করে আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে রিয়াজ উদ্দিন হত্যা মামলার প্রধান আসামী সিরাজুল ইসলাম ওরফে ইমন। ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জবানবন্দিতে বলেছে। জবানবন্দি শেষে ইমনসহ সকল আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ দোহালিয়া গ্রামের মৃত ফরিদ আলীর ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (৩০) রাজমিস্ত্রীরসহ দিনমজুরির কাজ করে স্ত্রী ও মাসহ জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভাঙ্গারির দোকানে বস্তা উঠানোর কাজ আছে বলে রতুলী বাজারের উদ্দেশ্যে নিজ বাড়ি থেকে বের হন। রাতে আর বাড়ি ফেরেননি। পরদিন বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুলাউড়া-চান্দগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের মাধবছড়া ব্রিজের প্রায় ১৫০ গজ পশ্চিম দিকে ছড়ার তীরের কৃষিজমিতে স্থানীয় কৃষকেরা বুধবার সকালে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়াদৌস হাসান, সেকেন্ড অফিসার এসআই হাবিবুর রহমান, স্থানীয় দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন, প্যানেল চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামসহ জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করেন। পরে খবর পেয়ে নিহতের মা খনাবি বেগম ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন। এই ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের মা খনাবি বেগম। ঘটনার পরই বড়লেখা থানা পুলিশ ক্লুলেস ওই হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জন্য তৎপরতা শুরু করে। হত্যাকান্ডের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে র্যাবের সহায়তায় ঢাকা থেকে প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ঘটনায় জড়িত আরও ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এরপর ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটনের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বড়লেখা থানার এসআই মো. মাসুদ পারভেজ আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। গত ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে শুনানি শেষে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হক মামলার প্রধান অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম ওরফে ইমনের ৪ দিনের রিমান্ড এবং মো. আলমঙ্গীর মিয়া, মো. শাহ আলী, মো. আসাবুল ও মো. হুমায়ুনের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
Leave a Reply