মোঃ বুলবুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :: কুড়িগ্রামে মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজে পরীক্ষার্থীদের কাছে সেশন ফি, বেতন ও পরীক্ষার ফি অতিরিক্ত নিচ্ছেন কলেজ প্রশাসন। এমন দাবি তুলে পরীক্ষা বর্জন ও জেলা প্রশাসক কুড়িগ্রামকে অভিযোগ করেছেন কলেজ শিক্ষার্থীরা।
তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসব করাচ্ছেন।
কলেজ শিক্ষার্থীদের দেয়া তথ্য মতে, ২৭ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবা মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজে কারিগরি ও জেনারেল শাখার একাদশ শ্রেণির ১ ম বর্ষ ও দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালিন সময়ে কলেজ শিক্ষক পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সেসন ফি,বেতন না দিলে তাদেরকে পরীক্ষা থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।এসময় ছাত্রছাত্রীরা সবাই পরীক্ষার কেন্দ্র ত্যাগ করে এবং জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ জানাতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যায়।
কলেজ অধ্যক্ষের ভাষ্যমতে, ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান লায়ন ও সাধারণ সম্পাদক কাওসার মূলত এই কাজ গুলি করাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা কারিগরি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীর নিকট ৬ মাসের পরীক্ষার ফি বাবদ ১২ শত টাকা ও পরীক্ষার ফি ৫ শত টাকা নিচ্ছি। কারিগরি ২য় বর্ষের ছাত্রদের কাছে সেসন ফি ২ হাজার টাকা, ও একই হাড়ে বেতন ১২ শত টাকা ও পরীক্ষার ফি ৫ শত টাকা নিচ্ছি। জেনারেল শাখার ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিকট শুধুমাত্র পরীক্ষার ফি ৫ শত টাকা ও ২য় বর্ষের পরীক্ষার্থীদের নিকট সেসন ফি ২ হাজার টাকা ও পরীক্ষার ফি ৫ শত টাকা নিচ্ছি। গত রবিবার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলবলে কমপক্ষে ২০ জনের নাম দিয়ে বলেছিলো, এদের সেসন ফি আপাতত নেয়া যাবে না।তারা বিভিন্ন সময়ে কলেজের বিভিন্ন বিষয়ে নাক গলায়। তারা আজ আমাদের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকের সাথে তুই তুকারি করে কথা বলেছে।
কলেজের কারিগরি শাখার ২য় বর্ষের ছাত্র জাহিদ হাসান বলেন, আমাদের পরীক্ষার ফি,বেতন ও সেসন ফি বাবদ মোট ৩৭০০ ধরা হয়েছে। আমি জানি সরকারিভাবে সেসন ফি ১৯৬ টকা।আমরা অতিরিক্ত টাকা কোথা থেকে পাব?।আমরা বলেছি শুধু পরীক্ষা ফি দিয়ে আপাতত পরীক্ষা দিতে, ওরা সব টাকা চায়।
একই শাখার ১ ম বর্ষের ছাত্র সীমান্ত বলে,আমার কাছে পরীক্ষা ফি ও বেতন সহ ১৭০০ টাকা চেয়েছে। আমি পরীক্ষার ফি দিয়ে পরীক্ষা দিতে চেয়েছি।তারা আমাকে পরীক্ষা হল থেকে বের হওয়ার নির্দেশ দেয়।
জাহিদ হাসান ২য় বর্ষের ছাত্র। সে জানায়, আমাদের কাছে মোট ৩৭০০ ধরা হয়েছে। আমি জানি সরকারি ভাবে সেসন ফি ১৯৬ টাকা।
২য় বর্ষের ছাত্র মাইদুল ইসলাম বলেন, আমার মা অসুস্থ। আমরা কিছুদিন আগেই পরীক্ষার ফি, সেশন ফি এসব দিয়েছি। আমাদের কাছে আবারো সেশন ফি চাচ্ছে। পরীক্ষার হলে এসে তারা আমাদের দাঁড় করাচ্ছে।, বিভিন্ন প্রশ্ন করছে।আমরা তো টাকা দিতে পারছি না। এজন্য তারা আমাদের পরীক্ষার রুম থেকে বের করে দিচ্ছেন।
জেনারেল শাখার শিক্ষার্থী নিশি বলেন, আমাদের কাছে অতিরিক্ত সেশন কি নিচ্ছে এবং বেতন নিচ্ছে। আমরা তো মেয়ে মানুষ, আমাদের তো বেতন নেয়ার কোনো কথা না।
কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কাওসার তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার সেসন ফি নেওয়ার প্রতিবাদে সাধারণ পরীক্ষার্থিরা পরীক্ষা বর্জন ও জেলা প্রশাসককে মৌখিক অভিযোগ করেছেন। আমাদের কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের টাকা না দেওয়ায় গলা ধাক্কাদিয়ে কলেজ থেকে বের করে দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক ১ সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চেয়েছেন।
কুড়িগ্রাম জেলার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন নয়ন বলেন, অতিরিক্ত ফি আদায়ের জন্য আজ মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জন করেছেন। কলেজ প্রশাসন ১ সপ্তাহ আগে তাদের কাছ থেকে টেষ্টের কথা বলে টাকা নিয়েছে । এখন আবারও টাকা চাচ্ছে।কুড়িগ্রাম তো গরীব এলাকা, ছাত্রছাত্রীরা এত কম সময়ে এত টকা কিভাবে জোগাড় করবে? তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে আমাদের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। আমরা যদি আমাদের নেতাকর্মীদের কোন অপরাধ পাই অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবেদ আলী বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসক জরুরি মিটিং আহবান করেছেন, সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।
কোন শিক্ষার্থীকে সেসন ফি না দেওয়ায় পরীক্ষার রুম থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছিলো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরকম কোন ঘটনা ঘটেনি।আপনারা সিসি টিভির ফুটেজ চেক করতে পারন।
কুড়িগ্রাম জেলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন,ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করেছে। আমরা ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডেকে ব্যবস্থা নেবো।#
Leave a Reply