এইবেলা, স্পোর্টস ::
এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকির তীরে কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নে জন্ম দৌঁড়বিদ আশরাফুল আলম কাসেমের। ২২ বছর বয়সে ২২টি ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। এখন স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের পতাকাকে বিশ্বে সমুন্নত করার। বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি হয়ে বিশ্বে নিজেকে প্রমাণ করার। শুধু স্পন্সরের অভাবে তাঁর স্বপ্ন কি অপূর্ণ থেকে যাবে?
জানা গেছে, বাংলাদেশের টপ পাঁচ জন ম্যারাথন রানারের একজন ভুকশিমইলের আশরাফুল আলম কাসেম। মাত্র ২২ বছরের এই অল্প বয়সেই নিজের বয়সের সমান ২২ টি ম্যারাথন দৌঁড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবগুলোতেই ছিলেন সেরা পাঁচের মধ্যে। তিনি এই ম্যারাথন শুরু করেছেন মাত্র দু’বছর হলো।
সাধারণত বাংলাদেশে আশরাফের বয়সী ছেলেরা সাকিব আল হাসান কিংবা বিরাট কোহলী হবার স্বপ্ন দেখে। অথবা ব্যতিক্রম হলে লিওনেল মেসি, নেইমার কিংবা জামাল ভুঁইয়া হতে চায়। কিন্তু আশরাফুল হতে চান একজন উসাইন বোল্ট।
ম্যারাথনকে বেছে নেয়া প্রসঙ্গে আশরাফুল জানান, বছর তিনেক আগে শারিরীক সমস্যার কারণে ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছিলেন সকালে দৌঁড়ানোর। সিলেটের বিভিন্ন রাস্তায় দৌড়াতেন। সেখান থেকেই কয়েকজন প্রফেশনাল রানারের সাথে পরিচয় এবং তাদের পরামর্শেই রানার আশরাফুলের নতুন জন্ম। করোনা আসার পূর্ব পর্যন্ত ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২১ সালের প্রথম দিকে আশরাফুল মোট ২২টি ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নিয়েছেন এবং বর্তমানে তিনি সিলেট বিভাগের মধ্যে সেরা রানার এবং বাংলাদেশের টপ পাঁচ জন রানারের মধ্যে তিনি একজন।
গত দু’বছরে দেখে নেয়া যাক আশরাফুলের সাফল্যের কিছু রেকর্ড ১. মৌলভীবাজারে হাফ ম্যরাথন ২১ কিলোমিটারে ৩য় স্থান ২. নরসিংদী মিনি ম্যরাথন ৭.১ কিলোমিটার ১ম স্থান ৩. ঢাকা হাফ ম্যরাথন ২১ কিলোমিটার ৪র্থ স্থান ৪. ঢাকা উত্তরা ১০ কিলোমিটার ২য় স্থান ৫. চট্টগ্রাম জাতীয় বঙ্গবন্ধু ম্যারাথন ৪২ কিলোমিটারে ৫ম স্থান ৬. সিলেট ১০ কিলোমিটারে ১ম স্থান ৭.শমশেনগর ট্রেইল ম্যারাথন ২১ কিলোমিটারে ১ম স্থান, ৮. ঢাকা সিসিসিএল রান বাংলা ১০ কিলোমিটারে ৪র্থ ৯. ছাতক মিনি ম্যরাথন ৭.৭ কিলোমিটার ১ম স্থান ১০. সিলেট ২৪ কিলোমিটার রীলে ২য় স্থান, ১১. ঢাকা আশুলিয়া মিনি ম্যারাথন ৭.৭ কিলোমিটারে ২য় স্থান, ১২. চট্টগ্রাম মিনি ম্যারাথন ৭.৫ কিলোমিটারে ১ম স্থান, ১৩. কুমিল্লা সেইলর হাফ ম্যারাথন ২১.১ কিলোমিটারে ৩য় স্থান, ১৪. চাঁদপুর হাফ ম্যারাথন ২১.৭ কিলোমিটারে ২য় স্থান, ১৫. সিরাজগঞ্জ ১০ কিলোমিটারে ৪র্থ স্থান, ১৬. আখাউড়া হাফ ম্যারাথন ২১.৭ কিলোমিটারে ১ম স্থান, ১৭. বঙ্গবন্ধু ম্যরাথন কুলাউড়া ৫ কিলোমিটারে ১ম স্থান ১৮. সিরাজগঞ্জ হাফ ম্যরাথন ২১.৭ কিলোমিটারে ১ম স্থান, ১৯. সিলেট ওসমানি নগর টায়াতলন সুইমিং ১.৫ কিলোমিটার সাইক্লিং ৪০ কিলোমি দৌড় ১০ কিলোমিটারে ১ম স্থান এবং ন্যাশনাল পর্যায়ে রৌপ্য পদক অর্জন।
এছাড়া মৌলভীবাজারের প্রথম এ্যাথলেট হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে মৌলভীবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষে কোন প্রতিযোগিতায় পদক পাওয়া একমাত্র এ্যাথলেট আশরাফুল।
আশরাফুল জানান, ভুকশিমইল ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামে আশরাফুলের বাড়ি। মা এবং ছোট বোনকে নিয়ে তাদের ছোট সংসার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আশরাফুল। এখন পর্যন্ত যত সাফল্য এসেছে সব নিজের ইচ্ছায়। ম্যারথন থেকে উপার্জিত অর্থ নিজের পরিবারের পেছনে ব্যয় করেন। পাশাপাশি নিজে ইলেকট্রিকের (কারেন্টের) কাজ করেন। আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকার কারণে করতে পারেন না নিয়মিত অনুশীলন।
সপ্তাহে দু’দিন অনুশীলন করেন। ফিটনেস ধরে রাখার জন্য নিজ উদ্যোগে সাদিপুর থেকে কুলাউড়া পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার দৌড়ান। ইচ্ছে করে ফিটনেস ক্যাম্পে অংশ নেয়ার। কিন্তু স্পন্সরশীপ না থাকার কারণে তা আর সম্ভব হয় না। স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের সেরা রানার হবার। কুলাউড়ার তথা জন্য সুনাম বয়ে আনার। আশরাফুল বিশ্বাস করেন একটা স্পন্সর পেলে তিনি শুধু বাংলাদেশ নয় দেশের বাইরে থেকেও সাফল্য বয়ে আনতে পারবেন।#
Leave a Reply