কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ::
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে অকেজো হয়ে পড়ে আছে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্প। এ প্রকল্প থেকে কোন প্রকার সুবিধা পাননি সুবিধাভোগি পরিবার। উপরন্ত তালিকাভূক্ত পরিবারদের প্রকল্পটির সুবিধা নিতে আর্থিক জামানত দিতে হয়েছে নির্মাণকালে।
জানা যায়, গ্রামীন জনপদের বাড়িতে বাড়িতে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে ”খাবার পানি সরবরাহ স্থাপনা নির্মাণ প্রকল্প” শির্শক একটি প্রকল্প হাতে নেয় বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এই প্রকল্পের আওতায় বরেন্দ্র বহুমূখী কর্তৃপক্ষ নাগেশ্বরী জোন ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এক কোটি টাকা ব্যায়ে চারটি পানি সরবরাহ স্থাপনা নিমার্ণ করে।
এসব স্থাপনাগুলোর হলো নাগেশ্বরী পৌরসভার পশ্চিম নাগেশ্বরী গ্রামে একটি, নেওয়াশী ইউনিয়নের পান্তাবাড়ি গ্রামে একটি, বেরুবাড়ি ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামে একটি ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ফুলকুমার গ্রামে একটি। প্রতিটি স্থাপনা নির্মাণে ব্যায় হয় ২৫ লাখ টাকা।
স্থাপনায় রয়েছে ২৫ হাজার ধারণ সম্পন্ন একটি পানির ট্যাংক, পানি তোলার জন্য একটি সাবমার্সিবল একটি পাম্প এবং গ্রামের অন্তত ১শত বাড়িতে পানি সরবরাহের জন্য মাটির নিচ দিয়ে পাইপ স্থাপন ও পানি সরবরাহ।
এই প্রকল্পের আওতায় ১টি মৌজার কমপক্ষে ২শ পরিবার বিশুদ্ধ খাবার পানির সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও নির্মাণের পর হতে কোন কাজে আসছে না প্রকল্পটি। সুবিধাভোগি পরিবারগুলোর অভিযোগ নিমার্ণের পর ১০ থেকে ১৫ দিন পানি সরবরাহ করলেও সেই পানি খাবারের উপযোগি ছিলো না।
পরে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পটি। এর পর থেকে দীর্ঘদিন বন্ধ পড়ে আছে। পানি সরবরাহের সকল উপকরণ নষ্ট হয়ে গেছে। কেউ এর তদারকি করেনা এখন। নেওয়াশী ইউনিয়নের পান্তাবাড়ি খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্পের গ্রাহক শেখ ফরিদ বলেন, নির্মাণের পর ২০১০ সালের জানুয়ারীতে ১০-১২দিন পানি সরবরাহ করে।
তবে সে পানিতে আয়রণের পরিমান বেশী থাকায় ব্যবহার এবং খাওয়ার উপযোগি ছিলো না। পুনরায় ডিপ করে ভালো পানি সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। পরে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পটি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এটি।
তিনি আরো বলেন, গ্রামের প্রায় শতাধিক বাড়িতে পানির লাইন দেয়া ছিলো। মাসিক কিছু টাকা নিয়ে পানি সরবরাহের কথা থাকলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা কোন প্রকার সুবিধা পাইনি এখান থেকে।
একই গ্রামের শোভেয়া বেগম বলেন, এটা বানাতে সরকারের যে টাকা খরচ হয়েছে, সেই টাকায় দুই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে টিউবয়েল দেয়া যেত। এটা আমাদের গ্রাবাসীর কোন কাজে লাগেনি। নাজমুল হোসেন বলেন, পানির লাইন নিতে আমরা পরিবার অনুযায়ী ৪শ থেকে ৬শ টাকা জামানত দিয়েছিলাম। সে টাকার কোন হদিস নাই। ওই খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্পের তদারকির দ্বায়িত্বে থাকা সেফালী বেগম জানান, স্থাপনাটি নির্মাণ করতে দুই শতক জমি ও ২০হাজার টাকা জামানত দেন তিনি।
বিনিময়ে প্রকল্পটি পরিচালনার দ্বায়িত্ব পান তিনি। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে তার। একই অবস্থা বাকি তিনটি প্রকল্পের চালুর পরপরই বন্ধ হয়ে পড়ে আছে সেগুলো। বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নাগেশ্বরী জোনের সহকারী প্রকৌসুলী খাইরুল বাশার জানান, খাবার পানি সরবরাহ প্রকল্পটি যান্ত্রীক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।
এটি একটি পাইলট প্রকল্প ছিলো। দেশের কয়েকটি জেলায় এই প্রকল্পের সুফল পাওয়া গেলেও এখানে পাওয়া যায় নাই। তাই আর নুতুন করে স্থাপনা নির্মাণ করা হয় নাই।#
Leave a Reply