কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মণিপুরি ভাষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে মণিপুরী ভাষা দিবস-২০২২ উদযাপিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মণিপুরি ভাষার মতো সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের একটি উন্নত ভাষাকে দ্রুত সাংবিধানিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিজস্ব লিপিতে লেখা মণিপুরি ভাষায় প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের শিক্ষাদানের কার্যক্রম শুরু করার আহবান জানানো হয়।
তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অনেক ক্ষেত্রে মণিপুরি ভাষা ভিন্ন নাম-পরিচয়ে উপস্থাপিত হচ্ছে উল্লেখ করে বক্তারা সরকারি-বেসরকারি সকল পর্যায়েই মণিপুরি ভাষাকে তার প্রকৃত পরিচয়ে উপস্থাপনের আহ্বান জানান।
বিগত কয়েক বৎসরের ধারাবাহিকতায় এবারও শনিবার (২০ আগস্ট) সকাল ১১টায় উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের নয়াপত্তন গ্রামে মণিপুরি কংশং মিলনায়তনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে মণিপুরি ভাষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কবি এ, কে, শেরামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি ড. অমর য়ুম, মণিপুর রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাক্তন অতিরিক্ত পরিচালক সোরাম মণিকান্ত সিংহ, ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ট্রাইবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ড. হোমেন থাংজম, জিনাইন লাইশ্রমচা, আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: আবদাল হোসেন, মণিপুরি কালচারেল কমপ্লেক্সের আহ্বায়ক এল জয়ন্ত কুমার সিংহ।
নামব্রম শংকরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা পর্বের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন মণিপুরি ভাষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কবি এ, কে, শেরাম।
পরে মণিপুরি ভাষা ও লিপি শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিসরুপ শিক্ষিকা বৃন্দা রানী সিনহা ও শিক্ষিকা কনথৌজম শিল্পীকে ফুল, ক্রেস্ট ও উত্তরীয় দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মণিপুরি ভাষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এল, ইবুংহাল শ্যামল, লেখক হাজী মো: আব্দুস সামাদ, কবি ও গবেষক হামোম তনুবাবু, সাংবাদিক প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ, অহৈবম রনজিত প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন রওশন আরা বাঁশিখুৎচৈবম, অওয়াংতাবম সমরেন্দ্র।
উল্লেখ্য, মণিপুরি জাতির মাতৃভাষার নাম ‘মণিপুরি ভাষা’। এই ভাষা সেই প্রাচীনকাল থেকেই মণিপুরি জাতির মূলভূমি ভারতের অন্যতম রাজ্য মণিপুরের সরকারি ভাষা এবং এই ভাষায় সেখানে শিক্ষামাধ্যমের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। মণিপুরি ভাষা ও সাহিত্যের রয়েছে কয়েকহাজার বৎসরের সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
ভারতে মণিপুরি ভাষাভাষীদের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে ১৯৯২ সালের ২০ আগস্ট ভারত সরকার সংবিধানের অষ্টম তপশীলে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মণিপুরি ভাষাকে ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। তাই সারা বিশ্বের মণিপুরি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী এই দিনটিকে ‘ মণিপুরি ভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকেন।
আলোচনা সভা শেষে বিকাল ৩টায় একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালা পরিচালনা করেন কবি এ কে শেরাম।
পরে প্রকাশনা অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
Leave a Reply