প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলা বসন্তের রুপকন্যা শিমুল বিলুপ্তির পথে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলা বসন্তের রুপকন্যা শিমুল বিলুপ্তির পথে – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
আমার বিদ্যালয়, আমার স্বপ্ন আমার অহংকার কুলাউড়ায় সরকারি জলমহাল জবরদখল করে মাছ লুটের অভিযোগ বড়লেখায় নিসচা’র উপদেষ্ঠা ও দায়িত্বশীলদের সংবর্ধনা ওসমানীনগরে ঈদে মীলাদুন্নবী (সা:)’র মোবারক র‍্যালী উৎসবমূখর পরিবেশে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে.. কমলগঞ্জে জেলা প্রশাসক কুলাউড়ায় শতবর্ষী মসজিদ সম্প্রসারণে বাঁধা জমি দখল ও টাকা আত্মসাতের প্রতিবাদে মানববন্ধন কুলাউড়ার ভাটেরা স্টেশন এলাকায় রেললাইন থেকে ছিন্নভিন্ন লাশ উদ্ধার কুলাউড়ার আমতৈলে প্রবাসীদের সংবর্ধনা আত্রাইয়ে ব্রিজের নির্মাণ কাজে ধীরগতি : দুর্ভোগে এলাকাবাসী শ্রীমঙ্গলে এসএমই ফাউন্ডেশনের ঋণ ম্যাচমেকিং কর্মসূচি ও ব্যাংকার-উদ্যোক্তা মত বিনিময় সভা

প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলা বসন্তের রুপকন্যা শিমুল বিলুপ্তির পথে

  • শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: উত্তর জনপদের জেলা নওগাঁর আত্রাইয়ে কালের বিবর্তনে প্রকৃতিকে রাঙিয়ে তোলা আগুন ঝরা ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত বসন্তের রুপকন্যা শিমুল বিলুপ্তপ্রায়। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে অনেক ফুল ফোটলেও এখন আর তেমন চোখে পড়েনা রক্তলাল নয়নাভিরাম শিমুল ফুল। বিগত এক-দেড় যুগ আগেও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে কানাচে বা রেললাইনের পাশে অনেক শিমুল গাছ দেখা গেলেও এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না। এক সময় প্রতিটি গাছে গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিতো বসন্তের আগমন।

শীতের পরেই ঋতুরাজ বসন্ত আগমনের সাথে সাথে প্রকৃতিতে লেগেছে তার ছোঁয়া। প্রতিটি গাছেই আসতে শুরু করেছে নতুন পাতা। প্রকৃতিতে দক্ষিণা বাতাসে আ¤্রমুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ চারিদিক। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতালে ফাগুনের উত্তাল বাসন্তী হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন।

শিমুল গাছের শাখাগুলো বসন্তের আগমনে লাল শাড়ির ঘোমটা পরা গ্রাম্য নববধূর সাজে সজ্জিত হতে দেখা যায়, যা দর্শনে হতাশ প্রেমিকের মনেও জাগিয়ে তোলে আশা। অন্যান্য গাছের তুলনায় শিমুল গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় বহু দূর থেকে এ মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। জোয়ার এনে দেয় কবির কল্পনার জগতে। কেবল সৌন্দর্যই বিলায় না শিমুল গাছের রয়েছে নানা উপকারিতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব।

প্রাকৃতিক ভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন শিমুল গাছ। এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজগুণ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এখনো নানা রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম “বোমবাক্স সাইবা লিন”। এটি বোমবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। ৯০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। সেই তুলনায় বেশ মোটাও হয় । নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে শিমুল গাছ দেড়শ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে।

বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সাথে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়। অন্যান্য গাছের মত এ গাছ কেউ শখ করে লাগায় না। নেওয়া হয়না কোন যতœ। অযতœ আর অনাদরে প্রাকৃতিকভাবেই গাছ বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই।

অথচ বর্তমানে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে কারণে অকারণে কেটে ফেলছে। অতীতে ব্যাপকহারে নির্মাণ কাজ, টুথপিকসহ নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। ফলে আজ বিলুপ্তির পথে। শিমুল গাছ উজাড় হওয়ার ফলে পরিবেশের উপরে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

এ গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় কাক, কোকিল, চিল, বকসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি বাসা বেঁধে বসবাস করত। এ গাছ উজাড় হওয়ার ফলে এসব পাখিরা আবাসস্থল হারিয়ে পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। গাছ না থাকায় আবাসস্থলের অভাবে ধীরে ধীরে এসব পাখিরাও হারিয়ে যাচ্ছে।

উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আবুবক্কর সিদ্দিক বলেন, গ্রামে প্রচুর শিমুল গাছ ছিল। এই শিমুল ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এ গাছের মূল ব্যবহার করত। একই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি বড় ধরনের গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আগের তুলনায় এখন শিমুলের তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। এর পরও এই গাছ নিধন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।’

এ বিষয়ে শিরোনাম সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক এমরান মাহমুদ প্রত্যয় বলেন, শিমুল গাছ রক্ষায় এখনই ব্যবস্থা না নিলে এক সময় উপকারী গাছের তালিকা থেকে এ গাছটি হারিয়ে যাবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো জানতেও পারবে না বাংলার মাটিতে শিমুল নামের কোন গাছ ছিল। #

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews