নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: তিনটি অক্ষরের সমন্বয়ে গঠিত ‘জীবন’। আর এই জীবদ্দশায় বিলাসিতায় যাচ্ছেন আবার কেউবা অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে অতিবাহিত করছেন এই ‘জীবন’। আর অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে ‘জীবন’ কাটাতেই অনেককে সংগ্রামী ‘জীবন’ অতিবাহিত করতে হয়।
এমনই একজন ‘জীবনযুদ্ধে’ জীবন অতিবাহিত করছেন আব্দুল হামিদ। জীবিকার তাগিদে রাস্তায় রাস্তায় নিজের তৈরি কাগজের ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। আব্দুল হামিদ নওগাঁর আত্রাই উপজেলার জামগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা। উত্তর জনপদের জেলা নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, নাটোর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় কাগজের ফুল বিক্রি করেন।
ফুলকে ভালবাসে না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। ফুল ভালবাসার প্রতীক। তাই প্রকৃতি ও ফুল প্রতিটা মানুষকে কাছে টানে। সে কারণে প্রতিটি মানুষ প্রকৃতি ও ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভালোবাসে।
‘কাগজের ফুল আমি, গন্ধ কোথায় বলো পাবো’ আজো মুখে মুখে শোনা যায় এই বিখ্যাত গানটি। ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। ফুলকে কেনা ভালোবাসে ? সৌন্দয্য পিপাসু মানুষ বাড়ির আঙিনায় ফুল চাষ করেন। কেউ বা আবার মৌসুমি ফুলের টব রাখেন বাড়ির ছাদ বা ঘরের বারান্দায়। আর শিশুদের খেলনা কিংবা ঘরের সৌন্দয্য বৃদ্ধিতে ঘরে রাখেন কৃত্রিম ফুল। তাছাড়া বিয়ে, জন্মদিন, শুভ হালখাতাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কাগজের ফুলের কদরতো রয়েছেই। তাই প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লার পথে পথে ঘুরে ঘুরে রঙ্গিন কাগজের ফুল ও পাস্টিকের ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন আত্রাই উপজেলার নিভৃতি পল্লী জামগ্রাম গ্রামের আব্দুল হামিদ।
সারাদিন কাঠফাটা রোদ কিংবা মুষলধারে বৃষ্টি যাই হোক না কেন ব্যবসা করতে যেতেই হবে তাকে। ফুল বিক্রি করতেই হবে। তানা হলে সংসার চলবে কি করে? নিজ হাতে তৈরী কাগজের ফুলই তো তার অন্ন জোগাতে সিংগভাগ ভ’মিকা রাখছে। ফুল নেবে…. ফুল….লাল-নীল রঙ্গিন কাগজের ফুল। এমন করে গ্রামের পথে ঘাটে কাগজের ফুল বিক্রেতার হাঁক শুনলেই গ্রামের ছোট বড় সকলেই ছুটে আসেন ফুল নিতে।
কাগজের ফুল শুধু সৌন্দয্যের প্রতীক নয়, আত্রাইয়ের অর্ধশত পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতে বিশেষ ভুমিকাও পালন করছে। আত্রাই উপজেলার জামগ্রাম গ্রাম ঘুরে দেখলে মনে হয় যেন ফুলের মেলা বসেছে। আর কাগজের ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে উপজেলার জামগ্রাম গ্রামের আব্দুল হামিদসহ অর্ধশত পরিবার।
নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর বাজার এলাকায় দেখা মেলে আব্দুল হামিদের সাথে, ফুল বিক্রির পাশাপাশি দীর্ঘ সময় আলাপচারিতায় তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি প্রায় ১৫-২০ বছর যাবৎ এই ব্যবসার সাথে জড়িত। জীবিকা অর্জন আর অল্প পুঁজিতে এ ব্যবসা করা যায় বলেই আজ আমি এ ব্যবসা শুরু করেছি। বিবি-বাচ্চা সঙ্গে নিয়েই অভাবের সংসারে এভাবেই জীবন যুদ্ধো চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিদিন সকাল হলেই ফুল বিক্রি করতে চলে যায় উপজেলার ভবানীপুর, কাশিয়াবাড়ি, নওদুলি, বান্ধাইখাড়া, সিংসাড়া, ধর্মপুর, লালপাড়া, বিষা ও হাটকালুপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা গুলোতে। প্রতিদিন আমি কম পক্ষে ২৫০ টাকা থেকে ৩ শত টাকা পর্যন্ত আয় করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। তিনি আরো বলেন, ব্যবসা যদিও লাভজনক তার পরও জীবনের যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে আমাদের এ ব্যবসায় করতে হয়। আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে কখনও বা ট্রাকে করে গন্তব্যে যাই। এভাবেই চলে আমার জীবন জীবিকা। #
Leave a Reply