এইবেলা, বড়লেখা::
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের কুমারশাইল ও বড়াইল সীমান্ত (১৩৬৭ নং মেইন পিলার ও এর আশপাশের এলাকা) দিয়ে প্রায় প্রতি রাতে রোহিঙ্গা নাগরিকরা দলবেধে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গভীর রাত ও ভোরবেলা সন্দেহজনক ঘুরাফেরায় স্থানীয় লোকজন মাঝেমধ্যে তাদের আটক করে বিজিবি ও পুলিশে সোপর্দ করেন। এরপরও এই সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশ যেন ঠেকানো যাচ্ছে না। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-আতংক বিরাজ করছে।
উপজেলার কুমারশাইল ও বড়াইল সীমান্ত এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই সীমান্তটি ভারত হয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ৩ থেকে ২০-৩০ জনের রোহিঙ্গা নাগরিকের দল বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাকে। এদের বেশির ভাগই শিশু, কিশোরী ও তরুণী। মুলত রোহিঙ্গারা দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। উদ্দেশ্য থাকে আসাম হয়ে ভারতের কোন রাজ্যে গিয়ে চাকুরি কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে গমণ। কিন্তু এর আগেই ভারতের সীমান্তরক্ষী ও সীমান্ত পুলিশ রোহিঙ্গাদের কোন কোন দল আটক করে ফেলে। আর তখনই বিএসএফ তাদেরকে বড়লেখার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।
গত বছরের ৫ নভেম্বর উপজেলার কুমারশাইল এলাকায় সন্দেহজনক অবস্থানকালে স্থানীয়রা এক তরুণীসহ ৫ রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত প্রবেশের চেষ্টার অপরাধে পরদিন দুপুরে এদের ৪ জনকে পুলিশ উখিয়া থানার মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। রিয়াজ বাংগালি নামক অপর রোহিঙ্গার শরনার্থীর ক্যাম্প নিশ্চিত না হওয়ায় পুলিশ তাকে আদালতে সোপর্দ করে। একই বছরের ২৪ আগষ্ট ভোরবেলা কুমারশাইল মাদ্রাসার পাশ থেকে সন্দেহজনক চলাফেরার সময় দুই তরুণ-তরুণীসহ ৭ রোহিঙ্গা কিশোরীকে স্থানীয়রা আটক করেন। পরে আটককৃতদের লাতু বিজিবি ক্যাম্পে সোপর্দ করা হয়। পরে বিজিবি তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় প্রতি রাতেই এই সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে রোহিঙ্গা নাগরিকের দল বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। কুমাইরশাইল ও বড়াইল সীমান্ত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ রুটে পরিণত হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা আতংকিত। এদের সাথে কোন সন্ত্রাসী বাহিনী, অপরাধী চক্র কিংবা মাদক ব্যবসায়ি যে, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে না তার নিশ্চয়তা কোথায়।
স্থানীয় উত্তর শাহবাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন আহমদ জানান, তার ইউনিয়নের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১৩৬৭ মেইন পিলার এলাকার বড়াইল ও কুমারশাইল সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ কর্তৃক পুশব্যাক হয়ে প্রায় প্রতি রাত ও ভোরে রোহিঙ্গা নাগরিক ও অজ্ঞাত লোকজন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বুধবার (৩০ আগষ্ট) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুমারশাইল সীমান্ত দিয়ে ৩ জন অজ্ঞাত পুরুষ পুশব্যাক হয় বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। কাকড়ি ব্রিজ এলাকায় লোকজন তাদের আটক করলেও পরে কান্নাকাটি করায় মানবিক কারণে ছেড়ে দেয়। এনিয়ে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ-আতংক বিরাজ করছে। রোহিঙ্গা প্রবেশের কারণে জনমনে আতংক ও সীমান্তে অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকার বিষয়টি তিনি উপজেলা পরিষদের গত জুলাই মাসের আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেছেন।
বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মহিব্বুল ইসলাম খান পিএসসি বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। তাদের নিয়মিত অভিযান আর নানা তৎপরতায় সীমান্তে অপরাধমূলক কর্মকান্ড হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিক অনুপ্রবেশের কোন ঘটনা ঘটেনি। অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
Leave a Reply