মোঃ বুলবুল ইসলাম ,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :: কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি থেকে কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভলপমেন্ট (আাইএফএডি বা ইফাদ) প্রকল্পের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক জেনারেটর চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুরের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব হোসেন এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। কুড়িগ্রাম খামারবাড়ির বর্তমান উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত এ নিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
দপ্তরটির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জেনারেটর চুরির ঘটনায় একই বছর রংপুর বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালকের নির্দেশে তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্তে জেনারেটর চুরি সংক্রান্ত সকল অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। এ নিয়ে প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থা কিংবা ফৌজদারি মামলা না করে আশ্চর্যজনকভাবে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুড়িগ্রামের কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা জানান, ২০২২ সালের জুন মাসে কুড়িগ্রাম অফিসের সাবেক উপপরিচালক আব্দুর রশিদ (বর্তমানে অবসরে), সাবেক ক্যাশিয়ার আব্দুল আজিজসহ কয়েকজন কর্মচারী যোগসাজসে জেনারেটরটি বিক্রি করে দেন। প্রমাণ মেটাতে অফিসের সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখাসহ জেনারেটরের নথিপত্র সম্বলিত ফাইলও সরিয়ে ফেলা হয়। জেনারেটরের কক্ষ থেকে আলামত মেটাতে কক্ষটি একজন কর্মচারীকে বসবাসের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিষয়টি প্রকাশ হলে পরিস্থিতি সামাল দিতে অরেকটি ছোট জেনারেটর রেখে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ নিয়ে কয়েকজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও সংক্ষুদ্ধ কৃষক পরবর্তী উপপরিচালক ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দেন। তবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে অভিযোগকারীদের কুড়িগ্রাম থেকে বদলি করা হয়। তদন্তে জেনারেটর চুরির সত্যতা মিললেও শেষ পর্যন্ত বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।
খামারবাড়ি কুড়িগ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, জেনারেটর রাখার কক্ষটি বর্তমানে একজন কর্মচারী বাসস্থান হিসেবে ব্যবহার করছেন। তবে ওই কক্ষে যে বিশালাকৃতির জেনারেটর বসানো ছিল সে চিহ্ন এখনও রয়ে গেছে। ঘটনা সামাল দিতে পরবর্তীতে যে ছোট জেনারেটর রাখা হয়েছিল তাও বর্তমানে কক্ষে নেই।
বর্তমান উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘জেনারেটর হারানোর বিষয়টি জানামাত্র আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমি এটা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।’
পরবর্তীতে রাখা ছোট জেনারেটর সম্পর্কে জানতে চাইলে ‘জানা নেই’ বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বর্তমানে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, তাজহাট রংপুরের অধ্যক্ষ বেলাল হোসেন বলেন, ‘তদন্তের বিষয়ে কোনও কিছু বলা যাবে না। এটা নিয়ে আপনি প্রশ্ন করতে পারেন না। যিনি তদন্ত করতে দিয়েছিলেন তার কাছে জেনে নিন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুরের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, ‘ ঘটনাটি আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগের। তখন তদন্ত কমিটি কী প্রতিবেদন দিয়েছে তা দেখে জানাতে হবে। তবে শুনেছি বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে।’
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বা আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রশ্নে আফতাব হোসেন বলেন, ‘ আমি ব্যস্ত আছি। এসব নিয়ে এখন কথা বলতে পারছি না।’#
Leave a Reply