এইবেলা ডেস্ক::
বড়লেখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (টিটিডিসি) প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত কুমার দাসের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা, রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই তিনি অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আসছেন। তার অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির সক্রিয় সমর্থক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।
ইতিপূর্বে ‘বড়লেখায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে গাছ বিক্রির অভিযোগ’ শিরোনামে জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হলেও আওয়ামী লীগ ও সাবেক পরিবেশ মন্ত্রীর আর্শীবাদে তিনি পার পেয়ে গেছেন।
এদিকে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত কুমারের অনিয়ম, দুর্নীতি তুলে ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে এলাকাবাসী ও অভিভাবকবৃন্দ একটি অভিযোগপত্র জমা দেন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় তার বিরুদ্ধের এই অভিযোগ আর আলোর মূখ দেখেনি।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত কুমার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষা বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার সাথে সিন্ডিকেট করে নানা অনিয়ম দুর্নীতি শুরু করেন। বিভিন্ন বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার অনিয়ম-দুর্নীতি। তৎকালীন সরকারের ক্ষমতাধরদের ছত্রছায়ায় নির্বিঘেœ নিজের অপকর্ম চালিয়ে যান। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও বহাল তবিয়তে আছেন হাসিনা সরকারের দোসর-সমর্থক প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত কুমার দাস। ২০২০-২১ অর্থ বছরে রুটিন মেইনটেনেন্স বাবদ ৪০ হাজার টাকা ও প্রাক প্রাথমিক বাবদ ১০ হাজার মোট ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পান। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে পান আরো ৫০ হাজার টাকা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১টি নতুন ভবন এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১টি নতুন ওয়াশ বøকও বুঝে পান। ২৩-২৪ অর্থ বছরে রুটিন মেইনটেনেন্স, প্রাক প্রাথমিক এবং ওয়াশ বøক বাবদ আরো ১ লাখ টাকা বরাদ্দ পান। রুটিন মেইনটেনেন্স বাবদ প্রাপ্ত ৮০ হাজার এবং ওয়াশ বøকের ২০ হাজার টাকার যথাযথ ব্যবহার নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে স্কুলের মাঠ ভরাট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণে (স্থানীয় এমপির বরাদ্দ থেকে) দুই ধাপে ১ লাখ ২ হাজার টাকা বরাদ্দ পান। বাস্তবে মাটি ৫/১০ হাজার টাকার কাজ করেছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্কুল মাটি ভরাট প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এই প্রকল্প কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত কুমার দাস নিজে হওয়ায় ইচ্ছামতো বরাদ্দের নয়-ছয় করেন।
অভিভাবকরা জানান, স্কুলের সামনের সড়ক প্রশস্থ করণে স্কুলের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলেছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। ভাঙা দেয়ালের মালামালগুলো (ইটের কংক্রিট, পুরাতন রড, লোহার তৈরী গেইট) সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই গোপনে বিক্রি করেছেন। অভিযোগ ওঠেছে রাস্তা প্রশস্থকরণে স্কুল যে জায়গাটুকু ছেড়ে দিয়েছে তাতে লাগানো স্কুলের মালিকানাধীন বড় বড় কয়েকটি গাছ ও স্কুল মাঠের একটি বড় কদম গাছসহ বেশ কয়েকটি গাছ পৌর মেয়রের সাথে আঁতাত করে বিক্রি করে দিয়েছেন।
এছাড়াও টিনের চালা বিশিষ্ট পুরাতন স্কুল ঘর নিলামের পর প্রায় ৭টি কক্ষের ডেস্ক, বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিলসহ ১২টি ফ্যান গোপন স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন। যার হদিস পাওয়া যায়নি। অভিভাবকরা বলেন, প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত কুমার বেশির ভাগ সময় উপজেলা শিক্ষা অফিসে ঘোরঘোর করেন। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে চরম উদাসীন। এসব অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করলে উল্টো রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে হুমকি-ধামকি ও হয়রানি করাতেন।
স্কুলের সীমানা প্রাচীর ভেঙে সড়ক বড় করার ফলে স্কুলটি এখন অরক্ষিত। শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলের সামনের সড়কটি এখন যেন মরন ফাঁদ। একাধিক অভিভাবক এবং এলাকাবাসি শিক্ষক রঞ্জিত কুমারে যাবতীয় অপকর্মের যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত কুমার দাস জানান, শিক্ষা অফিস থেকে তিনি কোনো বরাদ্দ পাননি। স্থানীয় এমপির ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দে স্কুল মাঠ ভরাট করেছেন। স্কুলের গাছ কাটা ও বিক্রি, আসবাবপত্র বিক্রয়, অন্যত্র সরানো, সীমানা প্রাচীর ভাঙা, ইত্যাদি বিষয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনটেইন হয়েছে কি-না এবং বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি মৌখিকভাবে অবহিত করেছেন বলে জানান।
প্রধান শিক্ষক রঞ্জিত কুমার দাসের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পুরাতন ডেস্ক-বেঞ্চ থেকে ১৬ জোড়া ডেস্ক-বেঞ্চ মুছেগুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে দেওয়ার বিষয়টি তার জানা। এর বাইরের কোনো বিষয়ে তিনি শিক্ষা অফিসকে অবহিত করেননি।
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply