বড়লেখা প্রতিনিধি::
বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়নের (কাঠালতলী) শিমুলিয়া গ্রামে ভূমি সংক্রান্ত পূর্ব-বিরোধের জেরে রুবেল আহমদ নামক ওমান প্রবাসীর পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রবাসীর বাবা গিয়াস উদ্দিনের অভিযোগ, চলাচলের একমাত্র (এজমালি) রাস্তা সংস্কার করতে চাওয়ায় তার ভাইয়েরা প্রতিবন্ধকতা তৈরির মিথ্যা অভিযোগ তুলে নানাভাবে হুমকি-ধমকি ও ঘর নির্মাণে বাধা প্রদান করছে। এমনকি তার নামে এবং তার প্রবাসী ছেলেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এতে ওই প্রবাসীর পরিবার চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনায় প্রশাসনের কাছে তারা ন্যায় বিচার চেয়েছেন।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ওমান প্রবাসী রুবেল আহমেদের বাবা গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার আপন ভাই নাজিম উদ্দিন গংদের বিরোধ চলছে। স¤প্রতি রুবেল চলাচলের একমাত্র রাস্তার (এজমালি) পাশের জায়গায় নতুন পাকাঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি চলাচলের রাস্তায় কিছু মাটি ফেলে মেরামত করতে চাইলে ১৮ নভেম্বর চাচা নাজিম উদ্দিন গংদের সাথে রুবেলের বাবা ও ভাইদের ঝগড়া হয়। এই ঘটনায় রুবেলের চাচা নাজিম উদ্দিন ২০ নভেম্বর জোরপূর্বক জায়গা দখলের অভিযাগ এনে রুবেল ও তার বাবা-ভাইদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন। এরমধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (মামলা নং-৩১/২০২৪) একটি পিটিশন মামলা করেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বিরোধীয় ভূমির উপর ১৪৪ ধারা জারির আদেশ দেন। একই বিষয়ে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অপর মামলাটি আদালতের নির্দেশে পুলিশ তদন্ত করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যে চলাচলের কাঁচা রাস্তা (এজমালি) নিয়ে বিরোধ চলছে, তাতে কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতা নেই। রাস্তার বাঁ পাশে রুবেল ও তার চাচা মজির উদ্দিনের দ্বিতল পাকা ভবন রয়েছে। চাচা দ্বিতল ভবনের দক্ষিণ পাশে রুবেলের নির্মাণাধীন ভবনের পিলার ঘেঁষে দেয়াল তৈরি করে রেখেছেন। দেয়ালের অপর পাশে ক্রয়কৃত ভূমিতে প্রবাসী রুবেল নতুন ঘর তৈরির কাজ করছেন। তবে আদালতের নিষেধজ্ঞা জারির পর রুবেল ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন।
প্রবাসী রুবেলের বাবা গিয়াস উদ্দিন জানান, আমার ভাইদের সাথে জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। তারা আমাদের নিরীহ পেয়ে নানাভাবে জুলুম-নির্যাতন করছে। আমাদের এক শতক জায়গার ওপর জোর করে শৌচাগার নির্মাণ করেছে। যা এলাকার সবাই জানেন। যা নিয়ে বিচারও হয়েছে। এর কয়েক বছর আগে তারা আমার ছোট ছেলেকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। এখন আমাদের জায়গার ওপর ঘর নির্মাণ করতে বাধা দিচ্ছে, নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। সবাই বাড়ি থেকে বের হওয়ার একটি এজমালি রাস্তা রয়েছে। সেখানে আমার ঘরের সামনের অংশ প্রশস্ত ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মেরামাত করতে গেলে তারা তাতেও বাধা প্রদান করছে। হামলা করেছে। ভয়ে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। এখন আমার ভাই নাজিম উদ্দিন বড়লেখা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি ও একই বিষয়ে ইউএনও আদালতে আরেকটি মিথ্যা মামলা করেছে। মামলার পর ইউএনওর আদালত থেকে জায়গার উপর ১৪৪ ধারা জারি করে নোটিশ প্রদান করেছেন। আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা ঘরের কাজ বন্ধ রেখেছি। আগামী ১৩ ডিসেম্বর কাগজপত্র নিয়ে আমরা আদালতে যাব। কোর্টে মামলার বিষয়টি পুলিশ বৃহস্পতিবার এসে তদন্ত করে গেছে। তিনি বলেন, এসব বিষয় নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও এলাকার মুরব্বিদের নিয়ে বসা হয়েছে। এতে তারা (ভাইয়েরা) চলাচলের রাস্তায় কোনো প্রকার বাধা দিবে না বলে স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়েছে। এরপরও নানাভাবে হয়রানি করছে। কোনোভাবে তারা সমাধান করতে চাইছে না। আমরা ন্যায় বিচার চাই।
তবে হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে প্রবাসী রুবেলের চাচা নাজিম উদ্দিন বলেন, আমার ভাই গিয়াস উদ্দিন ও তার ছেলেরা আমাদের জায়গা জোরপূর্বক দখল করে ঘর নির্মাণ করেছে। আমাদের চলাচলের রাস্তায় মাটি ভরাট করে প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করছে। এজন্য আমরা আইনের দারস্থ হয়েছি।
থানার এএসআই হালিম শিকদার জানান, নির্বাহী আদালতের নির্দেশে ২১ নভেম্বর বিরোধীয় ভূমির উপর ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই ভূমিতে কোনোধরনের কাজ না করতে বিবাদীদের নোটিশ দিয়েছেন।
এসআই নিউটন দত্ত করেন, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশে তিনি সরেজমিন বিরোধপূর্ণ ভূমি দেখে এসেছেন। তদন্তে তিনি যা পেয়েছেন আদালতে প্রতিবেদনে জমা দেবেন। তিনি জানান, এই ভূমি নিয়ে ইউএনও আদালতে আরেকটি মামলা রয়েছে।
Leave a Reply