‘অত তাড়াতাড়ি ঘর পাইমু চিন্তা করছি না’
এইবেলা, বড়লেখা প্রতিনিধি :
হতদরিদ্র মিনারা বেগমের বাড়ি বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহোদিকোনা গ্রামে। ইউএনও’র উদ্যোগে সমস্যাগ্রস্থদের নিয়ে গণশুনানীর খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে তিনি যান উপজেলায়। উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত গণশুনানীতে অংশ নেন।
কিজন্য আসছিলেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান ‘মনো করছলাম একটা ঘরের কথা কইমু। এর লাগি বড় আশা লইয়া উপজিলাত (উপজেলা) আইছলাম, আশা পুরছে, কইতাম পারছি। কিন্তু অত তাড়াতাড়ি ঘর পাইলাইমু চিন্তা করছি না। টিওন স্যারের (ইউএনও) লাগি ও সরকারের লাগি দোয়া করমু রে বাবা।’
মিনারার মতো নারী-পুরুষসহ ২১ জন সেবাপ্রত্যাশী তাদের সমস্যা ও অভিযোগের কথা বলেছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যা, অভিযোগ ও আপত্তি নিয়ে সাপ্তাহিক গণশুনানি করেন ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান। বুধবার বড়লেখা উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সহায়তায় দ্রুত সেবাপ্রত্যাশী মানুষদের তাৎক্ষণিক সমস্যার সমাধান দিয়েছেন ইউএনও।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুসরাত লায়লা নীরা, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাওলাদার আজিজুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শামসুন্নাহার, মো. সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
সরেজমিনে দেখো গেছে, পৌরসভার তেলিগুল গ্রাম থেকে এসেছেন শুক্লা রানী দে। তার স্বামী মারা গেছেন গত মে মাসে। সন্তানদের নিয়ে তিনি অসহায়। গণশুনানিতে ইউএনও’র কাছে মন খুলে তিনি একটি সেলাই মেশিন দেওয়ার কথা বলেন। তাৎক্ষণিক তাকে একটি সেলাই মেশিন দেয়া হয়। এছাড়া তাকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিতে মহিলা বিষয়ক কার্যালয়কে নির্দেশ দেন। সুজানগর ইউনিয়ন থেকে আসেন হাছনা বেগম। তার ঘরের টিন পুরোনো হওয়ায় ঘরে বৃষ্টি পড়ে। অসুস্থ স্বামী নিয়ে কষ্টে বসবাস করছেন। তার টিনের প্রয়োজন। তাৎক্ষণিক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাকে টিন দেয়া হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হামিদ হোসেনের একটি মোরগের খামার ছিল। অর্থের কারণে এটা চালু করতে পারছেন না। তার ঋণের প্রয়োজন। তাকে যুব উন্নয়ন থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকা উত্তর শাহবাজপুর থেকে আসেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী জয়নুল আহমদ। তার একটি লাঠি প্রয়োজন ছিল। তাৎক্ষণিক সমস্যার কথা শোনে সমাজসেবা কার্যালয় থেকে একটি ডিজিটাল সাদাছড়ি দেয়া হয়। দক্ষিণভাগ থেকে আসেন জুবেদা খাতুন। ৭০ বছরের উপরে তার বয়স। জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে যাওয়ায় তিনি বয়স্ক ভাতার তালিকায় অন্তভূক্ত হতে পারেননি। তার সমস্যা শোনে দ্রুত নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ফটোকপির কাগজ দেয়া হয়। এরপর তাকে শুকনো খাবার দেয়া হয়। বয়স্কভাতার তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত করতে সমাজসেবা কার্যালয়কে নির্দেশ দেন। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার। শিক্ষাসামগ্রী কেনার জন্য টাকার প্রয়োজন ছিল। তাকে ২ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। তাদের মতো বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আসা মোট ২১জন নাগরিকের তাৎক্ষণিক বেশিরভাগ সমাধান ও কয়েকটি সংশ্লিষ্ট দপ্তারকে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বলা হয়।
ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক সেবাপ্রত্যাশী নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যা, অভিযোগ ও আপত্তি নিয়ে সাপ্তাহিক গণশুনানি শুরু করেছি। প্রতি বুধবার এই শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সমস্যার কথা শোনে তাৎক্ষণিক বেশিরভাগ সমাধান দেয়া হয়েছে। অন্যগুলো দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তর এগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করবে।’#
Leave a Reply