মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন (রহ) সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবি! – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ পুনর্বাসন প্রকল্প পরিদর্শনে রেলওয়ে সচিব- সম্পন্নের ডেডলাইনেও বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় বড়লেখায় খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় নফল রোজা শেষে ইফতার ও দোয়া মাহফিল কুলাউড়ায় আদালতের নির্দেশনা ভঙ্গ করে কৃষকদের জমিতে ফসল রোপণের অভিযোগ ছাতকের ইউএনও’কে বিদায় সংবর্ধনা প্রদান ফুলবাড়ীতে বিজিবি’র অভিযানে মাদকদ্রব্য ও ভারতীয় শাড়ি উদ্ধার সহকারি শিক্ষকদের সাটডাউন- বড়লেখায় কক্ষের তালা ভেঙ্গে পরীক্ষা নেওয়ালেন অভিভাবকরা কুলাউড়ার মুরইছড়া  সীমান্তে  ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বিএসএফের গুলিতে  যুবক নিহত কুলাউড়ায় নাগরিক সমন্বয় প্রকল্পের বার্ষিক টাউন হল মিটিং কর্মক্ষেত্রের চাহিদা অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তুলতে হবে- ইউএনও মহিউদ্দিন বড়লেখায় প্রধান শিক্ষককে ছুরিকাঘাতে হত্যার চেষ্টা প্রাক্তন ছাত্র গ্রেফতার

মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন (রহ) সংগ্রামী জীবনের প্রতিচ্ছবি!

  • শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০২৫

Manual3 Ad Code

আনোয়ার হো‌সেন র‌নি ছাতক থে‌কে ::

Manual3 Ad Code

বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলনের ধারাবাহিক ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নাম মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন রহ.। নির্ভিক সংগ্রামী, সুদক্ষ সংগঠক এবং স্পষ্টবাদী নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত ছিলেন।

তাঁর চিরবিদায়ের চার বছর অতিক্রম করছে। ২০২১ সালের এই দিনে রাত ২টায় রাজধানীর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর আগে প্রায় দুই সপ্তাহ তিনি প্রথমে পিজি হাসপাতাল এবং পরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর ইন্তেকালের খবর ছড়িয়ে পড়লে সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, আলেম সমাজ ও ইসলামপ্রেমী মানুষ গভীর শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়।

শেষ যাত্রা ::

ইন্তেকালের খবর শুনে ৩ এপ্রিল ২০২১ সা‌লে সকালেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আলেম-ওলামা, ইসলামী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ মানুষ ঢাকার সেগুন বাগিচায় ছুটে আসেন তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে এবং জানাজায় শরিক হতে। সকাল ১০টায় সেগুন বাগিচা জামে মসজিদে জানাজা শেষে মরহুমের লাশ সুনামগঞ্জের ছাতকে নিয়ে যাওয়া হয়।

তাঁর জন্মস্থান ছাতক উপজেলার ছৈলা আফজলাবাদ গোবিন্দগঞ্জ ইউনিয়নের দিঘলবাগ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবা মা‌য়ের পা‌শে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৯ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।

শৈশব ও শিক্ষা জীবন ::

১৯৬২ সালের ১ মার্চ হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ছৈলাআফজলাবাদ ইউপির দিঘলবাগ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন ক‌রেন মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন। তাঁর পিতা ছিলেন হাফিজ আবদুল কাইউম। তিনি ছিলেন পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান। শৈশবে স্থানীয় শিবনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে সৎপুর মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করেন। এরপর সিলেট আলীয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাস করেন। কওমি ও আলীয়া ধারার শিক্ষার পাশাপাশি তিনি সাধারণ শিক্ষাতেও অগ্রসর হন। সিলেট এমসি কলেজে অধ্যয়ন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ইসলামি সংগঠনের কাজে সক্রিয় ছিলেন।

ছাত্র আন্দোলন থেকে নেতৃত্বের অগ্রযাত্রা ::

শিক্ষাজীবনেই তিনি সংগঠন পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দেন। সুনামগঞ্জ জেলা, সিলেট জেলা এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে উঠে আসেন। বিশেষ করে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি এর প্রতিষ্ঠাকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন।

এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর নেতৃত্বের অগ্রযাত্রা। ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বের পর তিনি খেলাফত মজলিসের ঢাকা মহানগর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন। সর্বশেষ ২০২১ সালে তিনি খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর নির্বাচিত হন। পাশাপাশি তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

আন্দোলন সংগ্রামের নির্ভিক সিপাহসালার :

মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন ছিলেন রাজপথের অকুতোভয় সংগ্রামী। ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি কখনও আপস করেননি। শীর্ষ আলেমদের সাথে একত্রে বহু আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। হযরত হাফিজ্জি হুজুর (রহ) শায়খুল হাদীস আল্লামা আজীজুল হক রহ., মাওলানা আবদুল গাফফার রহ., আল্লামা শাহ আহমদ শফি রহ. ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ.সহ অনেক শীর্ষ নেতার সঙ্গে তিনি রাজপথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেছেন।

দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন, জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কোনো চাপ বা ভয়ে তিনি পিছু হটেননি।

সাংগঠনিক কঠোরতা ও দূরদর্শী নেতৃত্ব :

তিনি ছিলেন একজন স্পষ্টবাদী ও নীতিবান মানুষ। সংগঠনের শৃঙ্খলা রক্ষায় তিনি ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। তাঁর এই দৃঢ়তা তাঁকে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত করে তোলে। যেকোনো সংকটময় মুহূর্তে তিনি দূরদর্শী ভূমিকা রাখতেন। কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য। তাঁর নেতৃত্বে ছাত্র-যুবক ও আলেমসমাজ নতুন উদ্দীপনা লাভ করত।

পেশাগত ও সামাজিক ভূমিকা:

Manual7 Ad Code

রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ব্যস্ততার পাশাপাশি তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি বার্ড ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস-এর অন্যতম সত্ত্বাধিকারী ছিলেন। রাজধানীতে কাগজ ও বহুমুখী ব্যবসার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। নিজ এলাকার উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কাজে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসা এবং জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সক্রিয়তা :

সাংগঠনিক ও পেশাগত কারণে তিনি বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। সৌদি আরব, ইরান, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে তাঁর সফর ছিল উল্লেখযোগ্য। এসব সফরে তিনি ইসলামি দাওয়াহ, রাজনৈতিক চিন্তাধারা এবং সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন, যা তিনি দেশে ফিরে বাস্তবায়নের চেষ্টা করতেন।

মৃত্যুতে জাতির ক্ষতি :

তাঁর মৃত্যুতে ইসলামী আন্দোলন এক সাহসী কণ্ঠস্বর হারায়। আলেম সমাজ, ইসলামী রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সর্বস্তরের মানুষ গভীরভাবে শোকাহত হয়। তাঁর জানাজায় ইসলামি আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি তাঁর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ বহন করে। তিনি ছিলেন এমন এক নেতা যিনি ইসলামের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ছাত্রজীবন থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সেই লক্ষ্যেই কাজ করেছেন।

দোয়া ও শ্রদ্ধাঞ্জলি : 

আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে ইসলামপ্রেমী মানুষ। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করুন। তাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন—আল্লাহর জমিনে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন—আল্লাহ তা মঞ্জিলে পৌঁছে দিন। আমীন।#

Manual3 Ad Code

লেখকঃ আনোয়ার হো‌সেন র‌নি, কাব‌্যকথা সা‌হিত‌্য প‌রিষ‌দের বিভাগীয় সাংগঠ‌নিক সম্পাদক ও ছাতক প্রেসক্লা‌বের সাধারণ সম্পাদক। 

Manual4 Ad Code

সংবাদটি শেয়ার করুন


Deprecated: File Theme without comments.php is deprecated since version 3.0.0 with no alternative available. Please include a comments.php template in your theme. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews

Follow for More!