আব্দুর রব, বড়লেখা :
আর খোলা আকাশের নিচে দিন কাটবে না বড়লেখার সেই অসহায় বৃদ্ধা সুরুজার। নিজের ঠিকানায় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাটানোর নিশ্চয়তা পেয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন পত্রিকার এ সংক্রান্ত একটি মানবিক সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর উপজেলা প্রশাসন ওই বৃদ্ধার খোঁজ খবর নিতে শুরু করে।
বৃদ্ধা সুরুজা বিবি (৭০) সন্তানসহ দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীর পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে বসবাস করছেন। বিক্রি জনিত কারণে ঈদের পর তাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলা হলে ছেলে, নাতি-নাতনি নিয়ে কোথায় যাবেন, কে দিবে আশ্রয় এনিয়ে হায়-হুতাশ ও আহাজারি শুরু করেন সুুরুজা ।
ঈদের আগের দিন বিকেলে ইউএনও মো. শামীম আল ইমরানের নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভুমি) নূসরাত লায়লা নীরা সরেজমিনে বৃদ্ধার খোঁজ নিতে করমপুর গ্রামে যান। এসময় তিনি ইউএনও’র পক্ষে তাকে ঈদের খাদ্যসামগ্রী প্রদান করেন। এছাড়া সহকারী কমিশনার (ভুমি) নূসরাত লায়লা নীরা ব্যক্তিগতভাবে তাকে ঈদের নতুন পোষাকও উপহার দেন। একই সাথে করমপুর গ্রামে খাস ভুমিতে সরকারী অর্থায়নে মা ও ছেলে আব্দুল মন্নানের পরিবারের জন্য পৃথক সরকারী বসতঘর নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এসময় স্থানীয় সংবাদকর্মী তপন কুমার দাস, আশরাফ জুনেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে স্বাধীনতার আগে স্বামী আছমত আলীর সাথে করমপুর গ্রামে এসেছিলেন সুরুজা বিবি। তার স্বামী ছিলেন দিনমজুর। নিজের বাড়ি না থাকায় অন্যের বাড়িতে তারা থাকতেন। দিনমজুর স্বামীর উপার্জিত অর্থে কোনমতে সংসার চলতো। প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুতে চরম বিপাকে পড়েন সুরজা বিবি। ৩ মেয়ে ও ২ ছেলে নিয়ে সুরুজা বিবির জীবন যুদ্ধ শুরু। মানুষের বাড়িতে থেকে কোনমতে কাজ করে সংসার চালাতে থাকেন। সন্তানরা বড় হয়। ইতিমধ্যে ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ২ ছেলের বড় ছেলে থাকেন আলাদা আর ছোট ছেলে মারা গেছেন ৮ বছর আগে। বড় ছেলেরও অভাবের সংসার তাই সুরুজা বিবি থাকেন ছোট ছেলের সংসারে। ছোট ছেলের সংসারে তার স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। পরিবারে নেই উপার্জনক্ষম কোন মানুষ। কিশোর বড় নাতি একটু আধটু কাজ করে। মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় চলে তাদের সংসার। এমন অবস্থায় অনেক সময় অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটে সুরুজা বিবি ও তার ছেলের পরিবারের। অভাবের তাড়নায় ও বার্ধক্যে সুরজা বিবি ঠিকমতো চলতে পারেন না। চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে, বলতে পারেননা কথাও।
ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান জানান, সংবাদটি দৃষ্টি গোচর হওয়ার পরই তিনি ওই বৃদ্ধার খোঁজখবর নেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার হাতে ঈদের উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়, ঈদের পর সম্পুর্ণ সরকারী অর্থায়নে খাস ভুমিতে তাকে ও তার মৃত ছেলের পরিবারকে পৃথক বসত ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
বৃদ্ধা সুরুজা বিবি জানান, মাথা গোজার স্থায়ী ঠিকানা হবে আমার, যা কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। সরকার এবং ইউএনও স্যারের প্রতি আমার পরিবার আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।
Leave a Reply