বড়লেখা প্রতিনিধি ::
বড়লেখায় সরকারি খাস ভুমির ওপর দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারি ভুমিহীন দরিদ্র পরিবারের মাটির বসতঘর ঘেষা টিলা কর্তনের কারণে বসতঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে যেকোন সময় কাঁচা বসতঘর ধসে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। এব্যাপারে ভুক্তভোগী আনোয়ার আলী টিলা কর্তনকারী প্রতিবেশি মদরিছ আলী ও তার স্ত্রী দিলারা বেগমের বিরুদ্ধে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ ও সরেজমিনে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর কড়িয়া গ্রামে কয়েকশ’ একর টিলা শ্রেণির সরকারি খাস ভুমিতে দীর্ঘদিন ধরে শতাধিক ভুমিহীন পরিবার বসবাস করছে। প্রবাস ফেরৎ মদরিছ আলী ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম প্রায় এক একর সরকারি খাস টিলা দখলের পর উচু প্রাকৃতিক টিলা কেটে বসতঘর নির্মাণ করেন। এবার প্রতিবেশি ভুমিহীন আনোয়ার আলী, হানিফ মিয়া ও হোসেন আহমদের পরিবারকে উচ্ছেদ করতে উঠেপড়ে লাগে মদরিছ আলী ও স্ত্রী দিলারা বেগম। তারা আনোয়ার আলীর মাটির বসতঘর ঘেষা টিলার মাটি গভীরভাবে কেটে নেওয়ায় তার মাটির বসতঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিপাত হলেই তা ধসে পড়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে।
সরেজিমেন দেখা গেছে, মদরিছ আলী দখলীয় খাস ভুমির ওপর নির্মিত বসতবাড়ির এলাকা সম্প্রসারণ করতে তিনি উঁচু টিলা কেটে মাটি নিয়ে বাড়ির পশ্চিম দিকে ফেলেছেন। এতে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তাটি সরু হয়ে গেছে। তাছাড়া ভারীবর্ষণ হলেই ভরাটকৃত মাটি ধসে রাস্তাটি একেবারেই বন্ধ হয়ে পড়ার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। মদরিছ আলী সরকারি খাস টিলা কেটে মাটি বিক্রির পর সেখানে তৈরী করেছেন ঝুঁকিপূর্ণ বসতবাড়ি। টিলার পাদদেশে নির্মিত বাড়ির ওপর টিলা ধসে যেকোন সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা।
ভুক্তভোগী আনোয়ার আলী জানান, মদরিছ আলী ও তার স্ত্রী প্রায় ১০০ শতাংশ সরকারি খাস টিলা দখল করে প্রথমে মাটি বিক্রি করেছে। পরে সেখানে বসতবাড়ি নির্মাণ করেন। তাদের দখলীয় ভুমির উত্তর সীমানায় মাত্র ৩০ শতাংশ ভুমিতে আমরা ৩ ভাই ও ১ বোন মাটির কাঁচাঘর তৈরী করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছি। আমাদের কোনো জায়গাজমি নেই। ভুমিহীন হওয়ায় সরকারি খাস জমিতে ঘর তৈরী করে কোনো মতে থাকছি। কিন্তু ওই ভুমির ওপর কুদৃষ্টি পড়ে সংলগ্ন বাড়ির মদরিছ আলী ও তার স্ত্রীর। আমাদেরকে ওই ভুমি থেকে তাড়াতে বিভিন্ন সময় তারা মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানী করেছে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গন্যমান্য ব্যক্তিদের কথাও তারা মানেনি। সম্প্রতি আমার বসতঘর ঘেষে এমন গভীরভাবে টিলা কেটেছে, এতে আমার মাটির ঘরের দেওয়ালের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বর্ষণ হলেই বসতঘর ধসে পড়ার আশংকা রয়েছে। টিলা কাটতে বাধা দেওয়ায় অশ্লীল গালিগালাজ ও হামলার চেষ্টা চালায়। থানায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। অবশেষে গত ১১ অক্টোবর মদরিছ আলী ও তার স্ত্রী দিলারা বেগমের বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন জানান, টিলা কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট ও প্রতিবেশির বসতঘরের ক্ষতি সাধন ছাড়াও মদরিছ আলী ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জনসাধারণের চলাচলের সরকারি রাস্তায় মাটি ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বাধা নিষেধ সত্ত্বেও তারা নানা অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। দিলারা বেগম ও তার কয়েকটি মেয়ে খুবই উশৃঙ্খল। ভয়ে তাদের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে চায় না। খাস জমি দখল, টিলা কর্তন ও টিলার মাটি ফেলে সরকারি রাস্তার ক্ষতি সাধনের ব্যাপারে তিনি ইউএনও’র সাথে কথা বলেছেন।
মদরিছ আলীকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তার স্ত্রী দিলারা বেগম জানান, এটি তাদের ক্রয়কৃত ভুমি। নিজের জায়গা কেটে বাড়ি করেছেন। ভোগদখলিয় ভুমির টিলা কাটায় অন্য কারো ক্ষতি হলে তাদের কিছুই করার নাই। প্রতিবেশি আনোয়ার আলীর অভিযোগ সত্য নয় বলে তিনি দাবী করেন।
ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমেও টিলা কেটে প্রতিবেশির বসতঘর হুমকির মধ্যে ফেলার ও এলাকাবাসির চলাচলের রাস্তায় মাটিভরাট করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির বিষয়ে জেনেছেন। সরেজমিনে পরিদর্শন করে এব্যাপারে কঠোর আইনী ব্যবস্থা নিবেন।
Leave a Reply