কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি ::
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ধলাই নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে দেশের সম্ভাবনাময়ী প্রাকৃতিক সম্পদ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর ব্রীজ, বাড়িঘর ও বাঁধ হুমকির মুখে পড়ছে। বিনষ্ট হচ্ছে আবাদি কৃষিজমি। পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জনজীবনে দেখা দিচ্ছে মারাত্মক হুমকি। এ নদীর বাঁকে বাঁকে বোমা মেশিনে পাইপ যোগে বালু উত্তোলনের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দারা। একটি প্রভাবশালী মহলের বালু উত্তোলনের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কমলগঞ্জের রাজকান্দি বনরেঞ্জ ঘেষা ধলাই নদীর পুরাতন ব্রিজের অতি সন্নিকটে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন চলছে। অবৈধভাবে দু’টি বোমা মেশিনে বালু উত্তোলনের পর একটি জমিতে বিশাল স্তুপাকৃতি করে সেখান থেকে ট্রাকযোগে বিক্রি করা হচ্ছে। বালু উত্তোলনকারী স্থানীয় শ্রমিকরা ইজারাকৃত বলে দাবি করছেন। তবে বালুমহাল ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন করায় ভেঙ্গে পড়ছে নদীর বাঁধ আর হুমকির মুখে ধলাই ব্রিজ ও রাজকান্দি বনরেঞ্জ অফিস। তাছাড়া মেশিনের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
উপজেলার মাধবপুর রোডেও একাধিক স্থানে বোমা মেশিনে চলছে বালু উত্তোলনের হিড়িক। মেশিন যোগে পাইপ বসিয়ে পার্শ্ববর্তী জমি সমুহে বালুর উ”ু স্তুপ করে ট্রাকযোগে বিক্রি করা হচ্ছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মহল দেদারসে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে। ধলাইপার, মাধবপুর, রহিমপুর ইউনিয়নের চৈত্রঘাট, ধর্মপুর, মৃর্ত্তিঙ্গা এলাকাসহ নদীর বাঁকে বাঁকে বালু উত্তোলন চলছে। রহিমপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রাম এলাকায় বালু বোমা মেশিনে বালু উত্তোলনের ফলে কয়েকটি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। মৃর্ত্তিঙ্গা সড়কে ধলাই নদীর স্টিলের ব্রিজের পূর্বপাশে একাধিক বোমামেশিনে বালু উত্তোলন চলছে। ফলে অনেক স্থানেই বাড়িঘর, কৃষিজমি, ব্রিজ, নদীর বাঁধ হুমকির মুখে। প্রভাবশালী মহলের কারণে ভয়ে কেউ প্রতিবাদও জানাতে পারছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শতে ধলাই নদীর পুরাতন ব্রিজ এলাকা, ধলাইপার ও ধর্মপুরের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বালু উত্তোলনকারীরা স্থানীয় প্রভাবশালী মহল। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না। প্রশাসনও অসহায় হয়ে পড়েছে। কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না। ফলে নদীর ব্রিজের পাশে, বাঁধের নিচে ও বাড়িঘরের কাছাকাছি নদী থেকে বোমা ও ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর এসব মেশিনে দিনভর উচ্চ শব্দে আমরা অতিষ্ঠ।
কমলগঞ্জ ভুমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ইবুং হাল বলেন, ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে বোমা মেশিন, বাঁধের নিচ ও ব্রিজের সন্নিকটে বালু উত্তোলন সঠিক নয় দাবি করে বলেন, এখানে কয়েকজন একত্রিত হয়ে বালু উত্তোলন করছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর সিলেট বিভাগীয় সমম্বয়ক এড. শাহ্ সাহেদা আক্তার বলেন, ব্রিজের এক কিলোমিটার পর্যন্ত বালু উত্তোলন করা এবং বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন আইনে নিষিদ্ধ রয়েছে। ধলাই নদী তুলনামূলক ছোট থাকায় মেশিন যোগে বালু উত্তোলনে শব্দের কারনে জনসাধারণের পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
কমলগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুমাইয়া আক্তার বলেন, আসলে আমি এখানে নতুন এসেছি। তবে বালু উত্তোলন বিষয়ে যদি নিজেরা সচেতন না হন তাহলে পরিবেশ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। কয়েকদিন আগেও ধলাই নদীর একটি স্থানে অভিযান করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। অন্যান্য স্থানে উত্তোলন বিষয়েও খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, ধলাই নদীর বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়েছে। তবে ব্রিজের পাশ ও বাঁধের নিচ থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।#
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply