এইবেলা, ছাতক ::
সুস্বাদু ৫ রঙের বিদেশি তরমুজ। তৃষ্ণা মেটাতে রসালো এ তরমুজের কোনো জুড়ি নেই। ওপরে কালো বা হালকা সবুজ, কিন্তু ভেতরে লাল, ডোরাকাটা লম্বা কালোসহ পাঁচ ধরনের তরমুজ চাষাবাদ করে ব্যাপক সাড়া মিলছে ছাতকের ৫ যুবকের।
হলুদ রঙের এ তরমুজ চাষ করে সুনামগঞ্জের ছাতক শিল্পনগরী উপজেলায় কালারুকা ইউনিয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই পাঁচ যুবক। নিজ অর্থায়নে করা এ চাষাবাদে আর্থিক লাভের পাশাপাশি তারা সফল চাষি হিসেবেও ইতোমধ্যে জেলাজুড়েই খ্যাতি পেয়েছেন।
এ কারণে তাদের এই বিদেশি নানা রঙের তরমুজ বাগানটি একনজর দেখতে— সিলেট, বিশ্বনাথ, জগন্নাথপুর, দোয়ারাবাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দিরাই জামালগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন শয়ে শয়ে দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন। তাদের কাছ থেকে পরামর্শও নিচ্ছেন অনেক আগ্রহী চাষি।
কচি লতানো গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে মাচায় ঝুলছে অসংখ্য হলুদ রঙের তরমুজ। নয়নাভিরাম এ তরমুজগুলো যাতে বোঁটা থেকে ছিঁড়ে পড়ে না যায়, সে জন্য তরমুজগুলোকে সাদা রঙের প্লাস্টিকের জালি ব্যাগের ভেতরে ঢুকিয়ে মাচার সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আর এসব তরমুজ হলুদ ও লাল রঙের মিশ্রণে হওয়ায় তা বাগানের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে অনেকগুণ।
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক শিল্পনগরী উপজেলার কালারুকা ইউপির গোবিন্দগঞ্জ ও ছাতক সড়কের তাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংলগ্ন এলাকায় সোয়া একক অনাবাদি জমিতে এসব জাতের হাইব্রিড বিদেশি তরমুজ চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন তারা।
এসব বিদেশি তরমুজের মধ্যে জাতগুলো হচ্ছে— গোল্ডেন ক্রাউন, ইয়েলো হানি, থাই সুইটস, ল্যানফাই ও বাংলালিং।
এগুলোর মধ্যে গোন্ডেন ক্রাউন (গোল) জাতটি হচ্ছে— বাইরে হলুদ ভেতরে লাল। ডায়না (লম্বা) ইয়েলো হানি, যা বাইরে কালো ভেতরে হলুদ। থাই সুইট ব্ল্যাক-২, যা বাইরে কালো ভেতরে লাল। বাংলালিং নামে পরিচিত, যা বাইরে ডোরাকাটা ভেতরে লাল ও ল্যানফাই।
তারা সবচেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছেন হাইব্রিড ল্যানফাই জাতের তরমুজে। এ জাতের তরমুজের রঙ সবুজ ডোরাকাটা। এর ভেতরে হলুদ রঙের এবং অনেক সুস্বাদু। অন্যান্য তরমুজের তুলনায় এটি অধিক মিষ্টি। আর উত্তম পরিচর্যায় একেকটি তরমুজের ওজন আড়াই থেকে তিন কেজি পর্যন্ত হয় এটি।
এসব উন্নত জাতের বিদেশি তরমুজের চাষাবাদে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা। বাগানের তরমুজ বিক্রি করে প্রায় ৬ লাখ টাকা আয় হবে বলে ধারণা করছেন উদ্যোক্তারা।
ইতোমধ্যে বেশিরভাগ গাছে বাম্পার ফল এসেছে। এ সপ্তাহে মধ্যে বাজারে উঠবে বিদেশি এসব তরমুজ বলে আশা করছেন তারা।
সরেজমিন আকর্ষণীয় সবুজ তরমুজ বাগান ঘুরে দেখা যায়, মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে হলুদ কালো ডোরাকাট রঙের তরমুজ। পতিত জমিতে বাঁশের মাচার ওপর নেটের ছাউনি দিয়ে সোয়া একর অনাবাদি জমিতে একেকটি তরমুজের ওজন প্রায় দুই কেজি থেকে আড়াই কেজি মতো হয়েছে। ৩-৪ দিন পর তরমুজগুলো পরিপুষ্ট হবে বলে জানান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান।
তরমুজ চাষের মূল উদ্যোক্তা হচ্ছেন গড়গাঁও গ্রামের আশরাফুর রহমান। একসময় তরমুজ অনাবাদি জমিতে চাষাবাদের উদ্যোগ নেন তিনি। তার সঙ্গে যুক্ত করেন স্থানীয় রামপুর গ্রামের আব্দুর রহমান, শেখকান্দি গ্রামের নজরুল ইসলাম, রায়সন্তোষপুর গ্রামের নাঈম আহমদ ও একই গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান সাকিবকে।
আশরাফুর রহমান জানান, নিজ অর্থায়নে পরীক্ষামূলকভাবে তরমুজের বাগান তৈরিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে তারা চাষাবাদ শুরু করেন। লাভবান হওয়ার জন্য আশাবাদী তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিক হোসেন খান জানান, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ভিটামিনসমৃদ্ধ ফল তরমুজ। এলাকার স্থানীয় পাঁচ তরুণ উদ্যোক্তার তরমুজের বাগান দেখে অনেক বেকার যুবকরাই আগ্রহী হয়েছেন বলেও জানান তিনি।#
Leave a Reply