আব্দুর রব :
মৌলভীবাজারের বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলায় গত ৪ দিন ধরে বিদ্যুতের লোডশেডিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এক/দুই ঘন্টা লোডশেডিংয়ের সরকারি নির্দেশনাকে পুঁজি করে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড দিনে ১০-১২ ঘন্টা লোডশেডিং করছে। এতে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে স্থবির হয়ে পড়েছে শিল্প কারখানার উৎপাদন। বিশেষ করে বড়লেখা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও পিডিবি’র লোডশেডিং স্বেচ্ছাচারিতায় হুমকির মুখে পড়েছে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার ৩৫ টি চা শিল্প কারখানা। ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাটে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার কাচা চা পাতা নষ্ট হচ্ছে।
জানা গেছে, বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলায় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৫০ হাজার ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)’র প্রায় ৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এরমধ্যে বড়লেখা উপজেলায় ১৮টি ও জুড়ী উপজেলায় ১৭টি চা বাগান (চা শিল্প করাখানা) রয়েছে। সোমবার থেকে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলায় তীব্র গরমে অস্বাভাবিক লোডশেডিং শুরু করে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। যদিও এদিন বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় দেশজুড়ে এলাকা ভিত্তিক এক থেকে দুইঘন্টা লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে লোডশেডিং কোন এলাকায় কখন, কত সময় হবে তা সরকারিভাবে আগেই জানিয়ে দেওয়ারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি এ নির্দেশনাকে পুঁজি করে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ও পিডিবি দিনে ১০-১২ ঘন্টা লোডশেডিং করছে। এ দুই বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছচারিতা ও উদাসীনতায় মারাত্মক দুর্ভোগ পোয়াচ্ছেন হাজার হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ বিভ্রাটে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার রপ্তানিপন্য উৎপাদনকারী চা শিল্প কারখানাগুলো।
সরেজমিনে গেলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের মালিকানাধীন নিউ সমনবাগ চা বাগানের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী খান জানান, পিডিবি’র বিদ্যুতে চলে তার বাগানের ও পাথারিয়া চা বাগানের চা কারখানা। গত ৪ দিন ধরে দিনে গড়ে ১০-১২ ঘন্টা কারেন্ট থাকছে না। লোডশেডিংয়ের নামে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখায় লাখ লাখ টাকার কাচা চা পাতা নষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুতের ভেল্কিবাজির কারণে কোনভাবেই চায়ের গুনগত মান সঠিক রাখা যচ্ছে না। এভাবে চললে চা শিল্প ধ্বংশ হযে যাবে। জুড়ী উপজেলার ধামাই ও সোনারূপা চা বাগানের ব্যবস্থাপকরাও অভিযোগ করেন মাত্রাতিরিক্তি লোডশেডিংয়ের কারণে চা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা মোটেও অর্জিত হবে না। সঠিকভাবে বিদ্যুৎ না পাওয়ায় লাখ লাখ টাকার কাচা পাতা পঁচে নষ্ট হচ্ছে।
ছোটলেখা চা বাগানের ব্যবস্থাপক শাকিল আহমদ জানান, এক/দুই ঘন্টা লোডশেডিংয়ের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি ৮ থেকে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত লোডশেডিং করছে। এখন চা উৎপাদনের ভর মোসুম। এই সময়ে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে চালান ডেলিভারি অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিদ্যুতের কারণে এখন প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার কাচা চা পাতা নষ্ট হচ্ছে। কেরামতনগর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মাছুম আহমদ জানান, দিনে ১১-১২ বার বিদ্যুৎ যাচ্ছে আর আসছে। মেশিন রেডি হতে না হতেই আবার বন্ধ হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যাহতের পাশাপাশি মেশিনারিজও নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে। দৈনিক ১/২ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের সরকারি নির্দেশনা স্বত্তে¡ও ১০-১২ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের কারন জানতে চাইলে পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম তাদেরকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা এটা কথার কথা মাত্র।
ভুক্তভোগী মহলের অভিযোগ গত ১২ জুলাই সোহেল রানা চৌধুরী বড়লেখা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম হিসেবে যোগদান করেন। তার যোগদানের পর থেকেই বড়লেখায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট (লোডশেডিং) ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। লোডশেডিংয়ের সরকারি নির্দেশনার কোন তোয়াক্কাই তিনি করছেন না। সরকারি নির্দেশনা স্বত্তে¡ও কখন কোন এলাকায় কত সময় বিদ্যুৎ থাকবে না তা-ও গ্রাহকদের অবহিত করছেন না। প্রচন্ড গরমে ইচ্ছেমতো ১০-১২ ঘন্টা লোডশেডিং করায় অর্ধলাখ গ্রাহক মারাত্মক দুর্ভোগ পোয়াচ্ছেন। বিশেষ করে বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার চা শিল্প কারখানাগুলো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে।
এব্যাপারে জানতে পল্লীবিদ্যুতের নবাগত ডিজিএম সোহেল রানা চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করে সাংবাদিক পরিচয় দিলেও তিনি কথা বলতে বিব্রত বোধ করেন।
পল্লীবিদ্যুতের এজিএম (কম) একেএম আশরাফুল হুদা বুধবার বিকেলে জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহের কোন সিডিউলই এখন আর মেনটেইন করা যাচ্ছে না। চা শিল্পের মারাত্মাক ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ২০ মেঘাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১০ ও ৫ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ পেলে তাদের কিছুই করার থাকে না ।
caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121caller_get_posts is deprecated. Use ignore_sticky_posts instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
Leave a Reply