আব্দুর রব :
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক যুগ যুগ ধরে তাদের যাবতীয় কার্যক্রমে ‘বড়লেখা’র ভুল ইংরেজি বানান ব্যবহার করছে। ১৯৪০ সালে বৃটিশ সরকার এক গ্যাজেট নোটিফিকেশনে তৎকালিন ‘জলঢুপ’ থানার একাংশ নিয়ে ‘বড়লেখা থানা’ গঠন করে। তখন থেকেই বড়লেখার ইংরেজি বানান `Barlekha’ হিসেবে প্রচলিত। সরকারি দপ্তরগুলোও বড়লেখার ইংরেজি বানান সঠিকভাবে লিখছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের ইচ্ছেমতো বড়লেখার ভুল ইংরেজি বানান লিখে যাচ্ছে। এতে সঠিক বানান নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। একটি বৃহৎ উপজেলার নামের ইংরেজি বানান ভুলভাবে উপস্থাপন করেও তা সংশোধনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন চরম উদাসীন। এতে বিভিন্ন মহলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রায় ৪ মাস আগে মো. খায়রুল ইসলাম নামের এক প্রবাসী বড়লেখার ইংরেজি বানান একেক ব্যাংকের শাখায় একেক রকম লেখায় তা সংশোধনের জন্য লিখেত আবেদন জানিয়েছেন। তিনি উপজেলার টেকাহালী গ্রামের বাসিন্দা। কিন্ত ভুল বানান ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আজও তা সংশোধন করেনি।
জানা গেছে, উইকিপিডিয়া, বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, বড়লেখা থানা প্রশাসন, বড়লেখা উপজেলা নির্বাচন অফিস, পৌরসভা কার্যালয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাগজপত্রে বড়লেখার ইংরেজি বানান `Barlekha’ ব্যবহার হচ্ছে, যা সঠিক। তবে বেসরকারি ব্যাংকের বড়লেখার কয়েকটি শাখা, সরকারি ব্যাংকের একটি শাখাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কোনটিতে ‘ইধৎষবশযধ’ এর ইংরেজি বানান Borolekha, কোনটিতে `Barolakha’ ও `Barolekha’ ব্যবহার হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইউসিবিএল ব্যাংকের বড়লেখা শাখায় Barolekha, এনসিসি ব্যাংকে Baralekha, ইসলামী ব্যাংকে Barolekha, ডাচবাংলা ব্যাংকে Borolekha, পূবালী ব্যাংকে Baralekha,, উত্তরা ব্যাংকে Baralekha এবং কৃষি ব্যাংকে Borlakha লেখা হচ্ছে। এ নিয়ে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
প্রবাসী মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন থেকে দেখছি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড়লেখার সঠিক ইংরেজি বানান ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকের শাখাগুলোতে ভুলভাবে বড়লেখার ইংরেজি বানান লেখা হচ্ছে। যে যার মত করে লিখছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংকের শাখায় বানান সংশোধনের জন্য আমি লিখিত আবেদন করেছি। কিন্তু কোন শাখাই সংশোধনের উদ্যোগ নেয়নি। একটি উপজেলার নামের বানান বিকৃত করে উপস্থাপন ওই উপজেলার প্রত্যেক মানুষের অন্তরে চরম আঘাত করার মত ঘটনা। এসব ব্যাংকের ব্যবসাই যেন মুল লক্ষ, তাদের ইচ্ছাকৃত ভুল বানান সংশোধনের ব্যাপারে যেন কোন দায় নেই। এব্যাপারে তিনি সরকারি হস্তক্ষেপ দাবী করেন।’
ইউসিবিএল ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবুল ফাত্তাহ চৌধুরী বলেন, ‘প্রবাসীর লিখিত আবেদন পেয়ে তা প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশ ছাড়া আমাদের সংশোধন করার সুযোগ নেই।’ একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক অজয় কুমার দত্ত, ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ নুরুজ্জামান।
পৌরমেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বড়লেখার সঠিক ইংরেজি বানান লিখছি। তবে ব্যাংকসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে যুগ যুগ ধরে বড়লেখার ইংরেজি বানান ভুলভাবে লিখছে। এটা আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। একটা উপজেলার ইংরেজি বানান বিকৃত, ভুলভাবে ও ইচ্ছেমত লেখাটা খুবই অন্যায় কাজ।’
ইউএনও সুনজিত কুমার চন্দ জানান, ‘বিষয়টি তারও নজরে এসেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে অফিসিয়ালি বলে দেওয়া হবে। বড়লেখার সঠিক ইংরেজি নাম যাতে তারা ব্যবহার করেন।’
Leave a Reply