বড়লেখায় ধান চুরি দেখে ফেলায় দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যা-প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপার অপচেষ্টা বড়লেখায় ধান চুরি দেখে ফেলায় দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যা-প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপার অপচেষ্টা – এইবেলা
  1. admin@eibela.net : admin :
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুলাউড়ায় একাধিক মামলার পলাতক আসামী শাওন পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে বড়লেখায় শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ ২০৭ পরিবারে প্রবাসি সংগঠনের ঢেউটিন বিতরণ কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ কমলগঞ্জে কালবৈশাখী তাণ্ডবে শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত; খোলা আকাশের নিচে অনেক পরিবার কুলাউড়ায় চা বাগান কেন্দ্রিক প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা কমলগঞ্জে মায়ের উপর অভিমান করে গলায় শাড়ি দিয়ে শিশুর আত্মহত্যা কমলগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃত্যু বড়লেখায় জাতীয় সামাজিক সংগঠন নিসচা’র মানববন্ধন আত্রাইয়ে উপজেলা পরিদর্শণ করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার কুলাউড়ায় প্রান্তিক এলাকায় নারীদের উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক সেমিনার-

বড়লেখায় ধান চুরি দেখে ফেলায় দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যা-প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপার অপচেষ্টা

  • মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩

বড়লেখা প্রতিনিধি::

বড়লেখায় গরুর খাবারের জন্য এক কৃষকের জমির ধান চুরি করে কেটে নেওয়ার ঘটনা দেখে ফেলাই কাল হল দিনমজুর সুমন দাসের (১৮)। প্রভাবশালী ধান চোরদের অমানসিক পিটুনিতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে শনিবার বিকেলে সে চলে গেছে না ফেরার দেশে। রোববার বিকেলে ময়না তদন্ত শেষে পুলিশ নিহতের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে। সুমন দাস উপজেলার দাসের বাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ বাগিরপার গ্রামের মৃত ককিল দাসের ছেলে।

হামলাকারীরা এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় নির্মম এই ঘটনাটি তারা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। নান হুমকি-ধমকিতে ভয়ে-আতংকে নিহতের স্বজনরাও এব্যাপারে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ বাগিরপার গ্রামের পরেশ বিশ্বাসের ফলানো বোরো ধান গরুকে খাওয়ানোর জন্য প্রায়ই রাতের আধারে কে বা কাহারা চুরি করে কেটে নিয়ে যায়। কৃষক পরেশ বিশ্বাস চেষ্টা চালিয়েও ধান চোরদের সনাক্ত করতে পারেননি। এলাকায় সহজ সরল হিসেবে পরিচিত দিনমুজর সুজন দাস গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শৈলেন্দ্র দাসের ছেলে মনিলাল দাস, সত্যেন্দ্র দাসের ছেলে শিমুল দাস, পমেশ দাসের ছেলে পিংকু দাসকে কৃষক পরেশ বিশ্বাসের ওই ক্ষেতের ধান কেটে নেওয়ার দৃশ্য দেখে ফেলে। বিষয়টি সে পরেশ বিশ্বাসকে জানিয়ে দিলে তিনি তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় বিচারপ্রার্থী হন। আর এতেই মনিলাল দাস, শিমুল দাস ও পিংকু দাস দিনমজুর সুজনের উপর ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে। এর জেরে গত ১৪ মার্চ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান (কীর্তন) থেকে ফেরার পথে ওৎ পেতে থেকে তারা সুজন দাসকে বেধড়ক পিটাতে থাকে, এসময় তাদের হাত থেকে আশু দাসের ছেলে রাজু দাস সুজনকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। তাদের মারধরে সে গুরুতর আহত হয়। মারধরের বিষয়টি এলাকার মুরব্বিদের তার ভাই সঞ্জিত দাস জানালে হামলাকারীরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তাকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে দেয়নি। বাড়িতে বসে চিকিৎসা নিতে বাধ্য করে। এ বিষয়ে বিচার প্রার্থী হলে হামলাকারীরা সুজন দাসের মা অর্চনা রাণী দাসকে বাড়িতে এসে সুজনকে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা।

নিহত সুজন দাসের ভাই সঞ্জিত দাস অভিযোগ করে বলেন, ধান কেটে নেওয়া দেখে ফেলায় আমার ভাই সাক্ষি দিলে তারা একদফা আমার ভাইকে মারধর করে। বাড়িতে এসে ভাইকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। দ্বিতীয় দফা গত ১৪ মার্চ মঙ্গলবার আমার ভাইকে তারা ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে মারপিট করে। রাতে সুজন দাস বাড়িতে না ফেরায় আমরা বিভিন্ন জায়গা খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। বুধবার সকালে তাকে বাড়ির পাশের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখি। এসময় সে ঠিকমত কথা বলতে পারছিলনা। রাতে কোথায় ছিল জিজ্ঞেস করলে পিংকু দাস, শিমুল দাস ও মনিলাল দাসের বাড়িতে বিচার দিতে গিয়েছিল বলে জানায়। এসময় তারা ধান কাটার বিষয়ে সাক্ষি দিলে কেন বলে তাকে মারধর করে। পানি খেতে চাইলে তারা দুর্গন্ধযুক্ত পানি তার মুখে ঢেলে দিয়ে বলে জনমের পানি খা। এরপর সে আর কিছু বলতে পারেনি। সকাল বেলা তার জ্ঞান ফিরলে বাড়িতে যাবার চেষ্টা করে হাটতে গিয়ে মাথা ঘুরে ও বমি বমি ভাব করে মাটিতে পড়ে যায়। সে আর কথা বলেতে পারছিল না। আমরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যাই। আমরা সাথে সাথে এলাকার মুরব্বি শৈলেন্দ্র দাস ও কার্তিক দাসকে বিষয়টি জানাই। পরে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসার পর মুখদিয়ে ফেনা বেরুতে থাকে। আমরা দ্রæত তাকে বড়লেখা হাসাপাতালে নিয়ে যাই। যাবার সময় দাসের বাজার ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন কুমার চক্রবর্তী ও স্থানীয় দুই ইউপি সদস্যকে দেখিয়ে ও বিষয়টি জানিয়ে যাই। উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। শনিবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তার মৃত্যু ঘটে। আমার সহজ সরল ভাইকে মারধর করে পানির বদলে মুখে বিষ ঢেলে দিয়ে তারা তাকে হত্যা করেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মুক্তালাল বিশ্বাস জানান, নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, তিন ব্যক্তির বেধড়ক পিটুনিতে সে গুরুতর আহত হয় এবং মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছিল। শনিবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে মারা গেছে। সেখানে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়না তদন্ত শেষে রোববার সন্ধ্যায় বড়লেখা থানা পুলিশকে জানিয়ে স্বজনরা তার লাশ বাড়িতে নিয়ে গেছেন।

দাসের বাজার ইউপি চেয়ারম্যান স্বপন চক্রবর্তী জানান, বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে সুজনকে তার স্বজনরা হাসপাতালে নিয়ে যাবার সময় আমাকে দেখিয়ে নিয়ে যায় এবং ঘটনার বিষয়ে অবগত করে। সুজনের অবস্থার অবনতি দেখে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবার কথা বলি। শনিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছে। সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়না তদন্ত শেষে রোববার সন্ধ্যায় বড়লেখা থানা পুলিশকে জানিয়ে স্বজনরা তার লাশ বাড়িতে নিয়ে দাহ করেছেন।

বড়লেখা থানার ওসি মো. ইয়ারদৌস হাসান জানান, সিলেটে ময়না তদন্তের পর স্বজনরা রোববার রাতে লাশ নিয়ে থানায় এসে অবহিত করে গেছেন। এব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২ - ২০২৪
Theme Customized By BreakingNews