এইবেলা, রাজনগর ::
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার নিজেকে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পরিচয় দেন। টাকা ছাড়া কোন ফাইল নড়ে না তার টেবিলে। ঘুষ না পেয়ে ইউএনও’র ফাইল আটকে গড়েছেন রেকর্ড। উপজেলা সমন্বয় সভায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের রেজুলেশন করা হয়। বিভাগীয় তদন্তেও দুনীতির সত্যতা পাওয়ার পরও রয়েছেন স্বপদে বহাল।
উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসার সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম তাহমির অনিয়ম দুর্নীতির দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঘুষ ছাড়া কোন ফাইলই তিনি ছাড় দেন না। অবসরপ্্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পেনশনের টাকা উত্তোলনেও তাকে দিতে হয় মোটা অংকের টাকা।
এব্যাপারে উপজেলা পরিষদের সমস্বয় সভায় সরকারী কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণ করেন। বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত হলেও এখনো কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে দিনদিন বাড়ছে ভূক্তভোগির সংখ্যা। দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। এতে যে কোন সময় অপৃতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও রয়েছে।
লিখিত অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাজনগর উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হাকিমের রাজনগর উপজেলায় যোগদান করার মাত্র ৬ মাস চলেছে। এই অল্প সময়েই তিনি আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন সরকারী অফিস ও পেনশনভোগিদের কাছে। বিভিন্ন অযুহাতে আটকে দিচ্ছেন ফাইল। টাকা নেয়ার জন্য ব্যাংকেই বসে থাকে তার লোক। মুজিব বর্ষের গৃহনির্মাণের টাকা ছাড় নিতেও দূর্ভোগ পোহাতে হয় সংশ্লিষ্টদের। এতে সরকারী বিভিন্ন কাজ ব্যাহত হয়।
এনিয়ে গত ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়। উপজেলা প্রকৌশলী, কৃষি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। মুজিব জন্ম শতবর্ষ উপক্ষ্যে সরকারের নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প ব্যাহত হচ্ছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।
ওই সভায় সিদ্ধান্তানুযায়ী রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ১৭ নভেম্বর সিলেট ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস বরাবর (০৫.৪৬.৫৮৮০. ০০৪. ০১১. ১৯. ৪৯/১(৭) নং স্মারকে) চিঠি পাঠান। চিঠিতে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার সৈয়দ মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম তাহমীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানদের ও অন্যদের অভিযোগ থাকায় যেকোন সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান। এজন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়।
গত ২৪ নভেম্বর সিলেট কার্যালয়ের নিরিক্ষা ও হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (প্রশা) নূরুল হক উপজেলা প্রশাসনের চিটির প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করেন। তদন্তকালে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা লিখিত বক্তব্য দেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
তদন্তকালে উপজেলা ভূমি অফিসের এক কর্মকর্তার বেতন বুকে কাজ করে দেয়ার জন্য ৮০ হাজার টাকা ঘোষ দাবী করেন তিনি। টাকা দেয়ার পরও তিনি কাজ করতে অনিহা দেখান।
অপরদিকে উপজেলার গড়গাঁও গ্রামের সাবেক কারারক্ষীর আব্দুল আহাদের পেনশনের কাজ অনলাইনে করে দেয়া জন্য তার কাছে ৩০ হাজার টাকা ঘোষ দাবী করেন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে কাজ করলেও এখন ৫ হাজার টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তিনি এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এব্যাপারে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সৈয়দ আব্দুল হাকিম তাহমী মোবাইল ফোনে বলেন, আমি উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, তার কাছে জানতে পারবেন বলেই ফোন রেখে দেন। পরে আবারো ফোন করা হলে তিনি মৌলভীবাজার মিটিংয়ে আছেন বলে জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল জানান, বিভিন্ন ব্যক্তির মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায়ও এনিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কেও বিষয়টি অবগত করেছি। #
Leave a Reply