আব্দুর রব, বড়লেখা ::
নিজের কোনো বাড়ি নেই। থাকেন অন্যের বাড়িতে। সেই বাড়ি থেকেও ঈদের পর চলে যেতে হবে। মালিক বাড়ি বিক্রি করে দেবেন তাই ঈদের পর বাড়ি ছাড়ার কথা বলেছেন।
এমন অবস্থায় কোথায় যাবেন, কী করবেন এমন চিন্তায় চোখে ঘুম আসে না বড়লেখার উত্তর শাহবাজপুরের করমপুর গ্রামের বৃদ্ধা সুরুজা বিবির (৭০)।
দেশ স্বাধীনের আগে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে দিনমজুর স্বামীর সঙ্গে করমপুর গ্রামে এসেছিলেন সুরুজা বিবি। এরপর থেকে এই গ্রামেই বসবাস। এখানকার ভোটারও। গ্রামের ওই বাড়ি, সেই বাড়িতে ভাসমান জীবনের পর শেষ ঠিকানা হয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীর পরিত্যক্ত বাড়িতে।
দীর্ঘ ৪ বছর এই বাড়িতে থাকার পর এবার সেই বাড়িও ছাড়ার পালা। কিন্তু সহায় সম্বলহীন সুরুজা বিবি কোথায় যাবেন! কী করবেন সেই চিন্তায় চোখে আঁধার দেখছেন।
জানা গেছে, নদী ভাঙনের শিকার হয়ে মুক্তিযুদ্ধের আগে স্বামী মৃত আছমত আলীর সঙ্গে করমপুর গ্রামে এসেছিলেন সুরুজা বিবি। তার স্বামী ছিলেন দিনমজুর। নিজের বাড়ি না থাকায় অন্যের বাড়িতে তারা থাকতেন। দিনমজুর স্বামীর উপার্জিত অর্থে কোনোমতে সংসার চলতো।
প্রায় ৩০ বছর আগে স্বামীর মৃত্যুতে চরম বিপাকে পড়েন সুরজা বিবি। ৩ মেয়ে ও ২ ছেলে নিয়ে সুরুজা বিবির জীবনযুদ্ধ শুরু। মানুষের বাড়িতে থেকে কোনোমতে কাজ করে সংসার চালাতে থাকেন। সন্তানরা বড় হয়। ইতিমধ্যে ৩ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ২ ছেলের ১ ছেলে থাকেন আলাদা আর আরেক ছেলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৮ বছর আগে মারা গেছেন।
বড় ছেলেরও অভাবের সংসার তাই সুরুজা বিবি থাকেন ছোট ছেলের সংসারে। ছোট ছেলের সংসারে তার স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। পরিবারে নেই উপার্জনক্ষম কোনো মানুষ। কিশোর বড় নাতি একটু আধটু কাজ করে। মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় চলে তাদের সংসার।
এমন অবস্থায় অনেক সময় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে সুরুজা বিবি ও তার পরিবারের। অভাবের তাড়নায় ও বার্ধক্যের কারণে সুরজা বিবি ঠিকমতো চলতে পারেন না। চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে গেছে। কথাও বলতে পারেন না ঠিক মতো।
সরেজমিন করমপুর গ্রামে সুরুজা বিবির বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে বসে আছেন তিনি। বয়সের ভারে একেবারে নুয়ে পড়েছেন।
সুরুজা বিবি জানান, তার স্বামী একজন দিনমজুর ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে কাজের সন্ধানে এই এলাকায় এসেছিলেন। এরপর থেকে এই গ্রামেই বাস। এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা ও ভোটার। পরিবারের অসচ্ছলতায় কোন বাড়ি করতে পারেননি। মানুষের বাড়ি বাড়ি থাকতে হয়েছে। বর্তমানে আছেন উত্তর শাহবাজপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে। তিনিও জানিয়ে দিয়েছেন ঈদের পর বাড়ি ছাড়তে হবে। এমন অবস্থায় কোথায় যাবেন, কার বাড়িতে উঠবেন, ভেবে কূল পাচ্ছেন না।
তিনি আরও জানান, বর্তমান সরকার ভূমিহীনদের ঘর দিচ্ছে। তাকে একটি ঘর দেওয়া হলে শেষ বয়সে নিজের নিবাসে শান্তিতে মরতে পারবেন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাইদুল মাহবুব ও কেআই সবুজ জানান, সুরুজা বিবি আমাদের গ্রামে প্রায় ৫০ বছর ধরে আছেন। তাদের কোনো ঘরবাড়ি নেই। মানুষের বাড়িতে থাকেন। তারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা। সরকার ভূমিহীনদের ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। আমাদের পরিবেশমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ থাকবে এই ভূমিহীন অসহায় পরিবারটিকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়ার।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. উবায়েদ উল্লাহ খান জানান, উত্তর শাহবাজপুরে খাসভূমিতে সরকারি ঘর নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হলে ওই মহিলাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান জানান, বর্তমানে দক্ষিণভাগে সরকারি ঘর বরাদ্দের কার্যক্রম চলছে। ওই বৃদ্ধা যদি এদিকে বসবাসে আগ্রহী হন তবে তাকে সরকারি ঘর বরাদ্দের ব্যবস্থা নেবেন।#
caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085caller_get_posts
is deprecated. Use ignore_sticky_posts
instead. in /home/eibela12/public_html/wp-includes/functions.php on line 6085
Leave a Reply