বড়লেখা প্রতিনিধি:
ফাতির আলীর সংসার চলে দিনমজুরির আয়ে। ছিল না বসবাসের নিজের কোনো জায়গা-জমি। অন্যের বাড়িতে আশ্রিত হিসেবে কেটেছে ৩৫ বছর। এ সময়ে ১৭ বার পরিবর্তন করেছেন থাকার জায়গা। ঠিকানাবিহীন এমন জীবনে বহুবার ঈদ এসেছে, কিন্তু কোনোদিনই ঈদের আনন্দ বুঝতে পারেননি। তবে ৩৫ বছর পর এবারই মনে হলো জীবনের প্রথম ঈদ করছেন। পরিবার নিয়ে নিজস্ব ঠিকানায় ঈদের আনন্দ উপভোগের সুযোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে।
ফাতির আলী মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের কাশেমনগরে আশ্রয়ন প্রকল্পে একটি ঘর পেয়েছেন। এখানে তার মতো আরও ১৪টি পরিবার ঘর পেয়েছে। যারা জীবনে প্রথম এক অন্যরকম পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছেন। এছাড়াও উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর, বড়লেখা সদর, উত্তর শাহবাজপুর, দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নে জমিসহ পাকাঘর পেয়েছে ১৪০টি গৃহহীন পরিবার।
ফাতির আলী বলেন, ‘পরের বাড়িতে ঈদ করতাম। মন দুর্বল থাকতো। ঈদের আনন্দ ফুর্তি-উৎসব কিছুই বুঝতাম না। সব সময় একটা চিন্তা থাকতো মনের মাঝে। পরের বাড়িত আছি, ঈদ আবার আলাদা কিছু নাকি। এই বার খুব খুশি লাগের। নিজের জায়গার মাঝে আছি, ঈদ করতাম পারিয়ার। জীবনে চিন্তাও করতাম পারছি না নিজের জায়গা অনব,একটা পাকাঘর অইব। শেখ হাসিনার কারণে আইজ ঘরের মালিক, জায়গার মালিক অইলাম। প্রথম ঈদ করলাম নিজের ঘরে। মনে একটা শান্তি মিলের।’
ঘর পাওয়া মো. আল আমিন বলেন, ‘কাঠমিস্ত্রির কাজ করিয়া পরিবার চালাই কোনোমতে। নিজে জায়গা কিনিয়া ঘর করমু ইটা কোনোদিন কল্পনায় দেখিনি। কিন্তু সরকারের দেওয়া ঘর পাইয়া নিজের মতো থাকতাম পারিয়ার। নিজের জায়গায় থাকার আনন্দই আলাদা। ঈদের দিন ছেলেমেয়েরা আনন্দ করের। অন্যের বাড়িতে থাকতে ইটা করা গেছে না। ছেলেমেয়েদের আনন্দ দেখে নিজের মন খুশিতে ভরে গেছে।’
ঈদের দিন বুধবার বিকেলে সরেজমিনে কাশেমনগর আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেখা গেছে, বাড়ির আঙিনায় খেলাধুলা করছে বিভিন্ন বয়সী শিশুরা। তাদের সবার হাত মেহেদির রঙে নানা আলপনায় সাজানো। তবে বেশিরভাগের শরীরের পুরোনো পোশাক। তবুও তাদের মনে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। এই উচ্ছ্বাস নিজেদের একটি উন্মুক্ত আঙিনায় খেলাধুলা করতে পারার। স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারার।
জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ (‘ক’ শ্রেণি) পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় বড়লেখার ৫টি ইউনিয়নে দুই দফায় ১৫৫টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। একেকটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ের ও ২০ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের উপকারভোগীদের মধ্যে ঘরগুলোর চাবি হস্তান্তর করা হয়।
আব্দুর রব, বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি, ২৩.০৭.২১
Leave a Reply