আব্দুর রব, বড়লেখা ::
হাকালুকি হাওরের অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত সুনাই নদীর উপর একটিমাত্র ব্রীজের অভাবে যুগযুগ ধরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা এবং সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার নদী তীরবর্তী লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগ পোয়াচ্ছেন।
হাকালুকি হাওরঘেঁষা সুনাই নদী তীরবর্তী সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলাধীন জনপদের কয়েকটি গ্রামের লোকজন নদীর কোনো কোনো জায়গায় বাঁশের সাঁকো তৈরি করে আবার কোনো জায়গায় নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে উপজেলাসহ জেলা সদরে যাতায়াত করছেন। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন আসলে জনপ্রতিনিধিরা শুধু ব্রীজের আশ্বাসই দিয়ে যান। নির্বাচন চলে গেলে আশ্বাসেই বন্দি হয়ে থাকে এতদাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন।
জানা গেছে, সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলাকে অনেক জায়গায় দ্বিখন্ডিত করে রেখেছে ভারত থেকে চলে আসা সুনাই (স্থানীয়ভাবে বুড়োদল) নদী। নদী ভাগের সাথে সাথে পাশাপাশি গ্রামগুলোকে ভাগ করলেও ভাগ করতে পারেনি মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং দু’তীরের মানুষের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা। বসবাস সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় কিন্তু কৃষিকাজের জন্য নিজের জমি পড়ে আছে নদীর ওইপারে মৌলভীবাজারের বড়লেখায়। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেই জীবন পার করতে হচ্ছে এই জনপদের তিনটি উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাকালুকি হাওরের সুনাই নদীর তীরে গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউপির নুরজাহানপুর, কালিকৃষ্ণপুর ও রাংজিওল গ্রামের অবস্থান। ঠিক সুনাই নদীর ওই পারে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রাম অবস্থিত। সুনাই নদী গ্রাম আর উপজেলাকে ভাগ করলেও গোলাপগঞ্জের নুরজাহানপুর, কালিকৃষ্ণপুর ও রাংজিওল গ্রামের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে হয় বড়লেখা উপজেলার ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের কয়েকটি গ্রামের শিক্ষার্থী, কৃষক ও নানা পেশাজীবি মানুষকে সোনাই নদী ডিঙিয়ে যাতায়াত করতে হয়। আবার বড়লেখা উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের লোকজনের বড়লেখা সদরের চেয়ে গোলাপগঞ্জ সদর কাছাকাছি হওয়ায় বিভিন্ন প্রয়োজনে তাদেরও গোলাপগঞ্জে যাতায়াতের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু একটি মাত্র ব্রিজের অভাবে যুগের পর যুগ ধরে বড়লেখা, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার লোকজনকে মারাত্মক দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে।
গোলাপগঞ্জের রাংজিওল গ্রামের কৃষক রমিজ আলী জানান, আমি নদী পাড়ি দিয়ে কৃষিকাজের জন্য ওই পারের ইসলামপুর যেতে হয়। আমরা গ্রামবাসী মিলে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে পার হলেও হালের গরুকে নদী পার করতে হয় সাঁতরিয়ে। কালিকৃষ্ণপুর গ্রামের প্রাইমারী পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, নদীর উপর কোন ব্রীজ না থাকায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড়ি দিয়ে তাদেরকে স্কুলে যেতে হয়।
ইসলামপুর গ্রামের প্রবাসী দেলোয়ার হোসেন জানান, সোনাই নদী বৃহত্তর ইসলামপুর গ্রামকে দুই জেলার দুইটি উপজেলায় বিভক্ত করে রেখেছে। ব্রিজের অভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। নির্বাচন আসলেই জনপ্রতিনিধিরা ব্রীজ নির্মাণের আশ্বাস দেন। নির্বাচন চলে গেলে আর কোন খোঁজ-খবর রাখেননা। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নিতে ভুক্তভোগীরা দুই এলাকার সংসদ সদস্যদের প্রতি জোরালো দাবী জানিয়েছেন।#
Leave a Reply