যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি ::
বিশ্বের যেখানেই থাকুন বিজয়ের মাসে প্রতিদিন বিজয়ফুল পরুন, ‘৭১ এর শহীদদের স্মরণ করুন আর বাংলাদেশের বিজয়কে বুকে ধারণ করুন এই শ্লোগানকে সামনে রেখে শুরু হচ্ছে বিজয়ফুল কর্মসূচি-২০২১। ডিসেম্বর মাস, বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। এবার পালিত হবে বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী। প্রতিবারের মত এবারও বিজয়ফুল কর্মসূচি বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দেবার প্রত্যয় নিয়ে আগামী ৩০ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫ টায় পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে বিজয়ফুল কর্মসূচির যাত্রা শুরু হবে। ২১ নভেম্বর রোববার বিজয়ফুলের উদ্যোক্তা কবি শামীম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল প্রস্তুতি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজয়ফুল কর্মসূচির আন্তর্জাতিক দূত ড: সেলিম জাহান, ইউকে দূত উর্মি মাজহার, বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান, সিরাজুল বাসিত চৌধুরী, মিল্টন রহমান, স্মৃতি আজাদ, নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, সাঈদা চৌধুরী, অপু ইসলাম, ফারাহ নাজ, ওয়াহীদ জামান উপল, সুশান্ত দাস, রুহুল আমিন, সিনথিয়া প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে লুপ্ত চেতনা পুনরুদ্ধার করার জন্য এবং চিন্তা-চেতনার অবক্ষয় দূর করার জন্য বিজয়ফুল কর্মসূচির গুরুত্ব অপরিসীম।
তারা বলেন, বছরব্যাপী দেশ -বিদেশে সর্বস্তরের মানুষকে, বিশেষ করে নব প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করে এই কর্মসূচি পালন করা প্রয়োজন । বক্তাদের অনেকেই সম্প্রতি ঢাকার ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশের দর্শকদের উল্লাসের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেন।
তাঁরা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজয়ফুল কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বক্তারা আরো উল্লেখ করেন, স্বল্প মেয়াদী, দীর্ঘ মেয়াদী কিছু পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে। যেমন টেলিভিশন অনুষ্ঠান, বিভিন্ন স্কুলে অনুষ্ঠান আয়োজন, বিভিন্ন দেশে এবং শহরে প্রতিনিধি নির্বাচন। অন লাইনে বিভিন্ন দেশের সাথে অনুষ্ঠান এবং মতবিনিময় করা। বিভিন্ন শ্রেনী, গোষ্ঠিকে কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। সভায় যে সকল কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন স্থানে বিজয় ফুল বানানো হবে। বিজয় ফুল তৈরি করার সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি এবং রণাঙ্গনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি বিজয় ফুলের পাঁচটি সবুজ পাঁপড়ি ও মাঝখানের লাল বৃত্তের তাৎপর্য তুলে ধরবেন। বিভিন্ন স্কুলে, টিভিতে এবং বিজয় দিবস উপলক্ষে যে সকল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে সর্বত্র অংশগ্রহণ কারীদের মধ্যে বিজয় ফুলকে তুলে ধরা হবে।
উল্লেখ্য, নব্বই দশকে কবি শামীম আজাদ বিলেত থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি ও ক্যম্পেইন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিজয় ফুলের সৃষ্টি। বহির্বিশ্বে বসবাসরত বাংলাদেশীদের কাছে বিজয় ফুল হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক। বিজয় ফুল তৈরীর সময়ে দেশে বিদেশে একটি ক্রিয়েটিভ কর্মকান্ডের মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের কাছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলার সুযোগটা পাওয়া যায়। বিজয় ফুল একটা উপলক্ষ্য। বাচ্চারা বিজয় ফুল তৈরী করার সময় একজন মুক্তিযোদ্ধা পাশে বসে মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধ জয়ের গল্প শোনান। এতে নতুন প্রজন্মের কাছে একাত্তরের বার্তা পৌঁছে যায়। ছেলেমেয়েরা যখন নিজ হাতে পাঁচটি সবুজ পাঁপড়ি ও একটি লাল গোলকের সম্মিলনে ফুল তৈরী করে, তখন তাদের শেখানো হয় মাঝখানের বৃত্ত আমাদের বিজয়ের লাল সূর্য, আর পাঁচটি পাঁপড়ির মাধ্যমে আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতা- নানা ধর্মের মানুষের সহমর্মিতা, আমাদের মৌলিক অধিকার, দেশের নদী, সবুজ প্রকৃতি ইত্যাদি বুঝানো হয়। তাই বিজয় ফুল বানানোর সময় নতুন প্রজন্মের সামনে গোটা বাংলাদেশের চিত্র ফুটে উঠে। বিজয় ফুল শুধু লন্ডনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতি ডিসেম্বরে বহু বাঙালীরা বুকে বিজয় ফুল পরেন, হৃদয়ে বিজয়ের চেতনা ধারণ করেন। প্রবাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসকে তুলে ধরার জন্য বিজয়ফুল কর্মসূচি গত ১৪ বছর যাবৎ পালিত হয়ে আসছে। এখন আমাদের কাজ হলো বৃহত্তর পরিসরে সকলের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করে কর্মসূচিকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেয়া।
এছাড়া, সভায় এক ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মসূচি পালন এবং এই কর্মসূচির আরো প্রসারের সিদ্ধান্তও গৃহিত হয়। সবাইকে আগামী ৩০ নভেম্বর বিজয় ফুলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবার আহবান জানানো হয়।#
Leave a Reply