বড়লেখা প্রতিনিধি:
হাকালুকি হাওরের পলোভাঙা মৎস্য অভয়াশ্রমে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ১০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের প্রায় ৫ হাজার ফিট নিষিদ্ধ কোনা বেড়জাল জব্দ করা হয়েছে। এসময় নিষিদ্ধ কোনা বেড়জাল ব্যবহার দিয়ে অভয়াশ্রম থেকে অবৈধভাবে মাছ ধরার অপরাধে ১৮ জন জেলেকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে তাদেরকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সোমবার (২২ আগস্ট) দিবাগত রাতে ভ্রাম্যমাণ অদালত পরিচালনা করেন ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওরে অভয়াশ্রম তদারকিকালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে খবর আসে পলোভাঙা অভয়াশ্রমে একদল জেলে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবৈধভাবে মাছ ধরছে। এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের যৌথ উদ্যোগে অভিযান চালানো হয়। সোমবার বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ অভিযান চলে। এসময় পলোভাঙা অভয়াশ্রমে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নিষিদ্ধ কোনা বেড়জাল দিয়ে মাছ ধরার সময় ২টি জালসহ ১৮ জনকে আটক করা হয়। জব্দ করা জালের বাজার মূল্য আনুমানিক ১০ লাখ টাকা। পরে আটক ১৮ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করেন বড়লেখা ইউএনও ও নির্বাহী হাকিম খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী। জরিমানার টাকা পরিশোধ করার পর জেলেদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযানে অংশ নেন উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান, থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম, এসআই মো. জিয়াউর রহমান প্রমুখ।
এদিকে জব্দ করা কোনা বেড়জাল মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে বড়লেখা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এসময় ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান, বড়লেখা থানার সেকেন্ড অফিসার হাবিবুর রহমান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জিয়াউর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে হাকালুকি হাওরে প্রতিদিন নিষিদ্ধ বেড়জাল, কোনা বেড়জাল, কারেন্ট জাল ও কাপড়ি জাল দিয়ে মাছ ধরছে একটি চক্র। তারা বেশিরভাগ রাতের বেলায় হাওরে জাল ফেলে মাছ ধরে। নিষিদ্ধ বেড়জাল, কোনা বেড়জাল, কারেন্ট জাল ও কাপড়ি জাল দিয়ে মাছ শিকার করায় হাওরের জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে। এই জালে বড় মাছের সাথে মাছের রেনু পোনা ও ডিমের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী ওঠে মারা পড়ছে। মৎস্য বিভাগের পরোক্ষ যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে জনৈক নাসির আহমদ মেম্বার, বাদশা মিয়া, টিপু হায়দার, স্বপন আহমদ, হানিফ আহমদ, মখলিছ মিয়া, সজলসহ স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র জেলেদের মাধ্যমে হাওরে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নির্বিচারে পোনা মাছ নিধন, জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র ধ্বংস করছেন। মাঝে মধ্যে লোকদেখানো দুই একটি অভিযান চালিয়ে দায় সারেন সংশ্লিষ্টরা। এতে দৈনিক মজুরীতে জালে কাজ করতে আসা দরিদ্র জেলেরা ধরা পড়েন। হাওরের মৎস্য ও জীববৈচিত্র ধ্বংসকারী সিন্ডিকেট বরাবরই থেকে যায় ধরাছোয়ার বাহিরে। ফলে দিনের পোনা মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘বেড় জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ জেনেও এগুলো দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছিল। এগুলো পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব জালে ক্ষুদ্র পোনা মাছসহ জলজ অন্যসব প্রাণীও মারা পড়ে। এতে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।’
থানার ওসি জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বলেন, ‘সোমবারের অভিযানটি অবৈধ মাছ শিকারিদের জন্য একটা কঠিন ম্যাসেজ। আশা করছি তারা সতর্ক হয়ে হাওরে আর অবৈধ জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরা ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের কাজে লিপ্ত হবে না। হাওরের পোনা মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রশাসনের এধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
বড়লেখা ইউএনও খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলী জানান, ‘হাকালুকি হাওরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে মাছের বিচরণ রয়েছে। এরমধ্যে কিছু এলাকায় অভয়াশ্রম আছে। অভয়াশ্রমগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রায় সময় আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকি। এরই অংশ হিসেবে সোমবার পলোভাঙা অভয়াশ্রমে ঝটিকা অভিযান পরিচলনা করি। সেখান থেকে ১৮ জন জেলেকে আটক করে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দুইটি নৌকায় ১০ লাখ টাকা মূল্যের প্রায় ৫ হাজার ফিট জাল জব্দ করি। জালগুলো জনসম্মুখে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। যারা অবৈধ জাল দিয়ে মাছের ক্ষতি সাধন করেন, আশা করছি এই অভিযানের ফলে তারা সতর্ক হবেন। এ ধরনের অভিযান চলমান থাকবে।’
Leave a Reply